আবারও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়

আভা ডেস্কঃ জশ হ্যাজেলউডের শর্ট বল আপারকাটে বাউন্ডারিতে পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে আফিফ ও নুরুল হাসান সোহানের ২২ গজে উল্লাস। অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ১২২ রানের লক্ষ্য টপকে বাংলাদেশের রান ১২৩। ৮ বল ও ৫ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশের আরেকটি অস্ট্রেলিয়া বধের কাব্য লেখা হয়ে গেল ওই বাউন্ডারিতে। মিরপুরে উড়ল বিজয়ের পতাকা।

সোহান-আফিফদের উল্লাস ছড়িয়ে পড়ল ডাগআউটেও। প্রেসিডেন্ট বক্সে থাকা বিসিবি সভাপতি ও পরিচালকদের মধ্যেও খুশির রোল। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টানা দ্বিতীয় জয়ের আনন্দ তো একটু বেশি হবেই! নিশ্চয়ই সারা বাংলাদেশেও বইছে আনন্দের বন্যা।

প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং ভালো হয়নি। বোলাররা দায়িত্ব নিয়ে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন। আজও বোলাররা দ্যুতি ছড়ালেন। অস্ট্রেলিয়াকে আটকে রাখলেন ১২১ রানে। সহজ ম্যাচ কঠিন করেছিল ব্যাটসম্যানরা। দ্রুত উইকেট হারিয়ে মধ্যভাগে পিছিয়েও পড়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মনোবল চাঙ্গা রেখে আফিফ, সোহান ম্যাচ জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন। ষষ্ঠ উইকেটে তাদের ৪৪ বলে ৫৬ রানের জুটিতে সহজেই জয় ধরা দেয়।

লক্ষ্য তাড়ায় দুই ওপেনার আউট হন দৃষ্টিকটু শটে। স্টার্কের ১৪২ কি.মি. গতির বল আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে সৌম্য বোল্ড হন শূন্য রানে। আগের ম্যাচে ২ রান করেছিলেন। হ্যাজেলউডের ভেতরে ঢোকানো বলে লাইন মিস করে নাঈম বোল্ড ৯ রানে। তিনে নেমে সাকিব আল হাসান পরপর তিন বলে স্টার্ককে তিন চার হাঁকিয়ে ভালো শুরু পান। প্রথম দুটি পায়ের উপরের বল লেগ সাইডে পুশ করে দুই বাউন্ডারি। পরেরটি উইকেটকিপারের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। বল হাতে ১ উইকেট নিয়ে অবদান রাখার পর ব্যাট হাতেও সাকিব ছিলেন ধ্রুপদী। কিন্তু টাইয়ের দুর্দান্ত এক স্লোয়ার ডেলিভারি মিস করে সাকিব ২৬ রানে ফেরেন সাজঘরে। ১ রানের ব্যবধানে মাহমুদউল্লাহ হাল ছেড়ে দেন। অ্যাগারের বল স্টাম্পে টেনে বোল্ড হন।

অপরপ্রান্তে থাকা মেহেদী শুরু থেকেই এলোমেলো শট খেলছিলেন। টাইমিংয়ে গড়বড় করে বারবার হাওয়ায় ক্যাচ ভাসাচ্ছিলেন। তাতে দৌড়ে দুবার প্রান্ত বদল করে স্কোরবোর্ড সমৃদ্ধ হয়েছে। কিন্তু আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি ছিল প্রচন্ড। যা হবার তাই হয়েছে। ২৩ রানে জাম্পাকে এগিয়ে এসে শট খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হন। অবশ্য এই শটে একবার জাম্পাকে লং অনের সীমানা পার করেছিলেন তিনি। তবে প্রতিশোধ নিতে ভুল করেননি জাম্পা।

পরের গল্পটা পুরোটাই বাংলাদেশের। আফিফ ও সোহানের দুর্দান্ত প্রতিরোধের গল্প। যেখানে মিশে আছে আধিপত্য, লড়াইয়ের মনোভাব ও জয়ের তীব্র ক্ষুধা। পেসার টাইকে এগিয়ে এসে মিড উইকেটে উড়াতে গিয়ে আফিফ ক্যাচ দিয়েছিলেন। কিন্তু সীমানায় দাঁড়িয়ে ক্যারি দারুণ দক্ষতায় বল লুফেও ভেতরে পাঠাতে পারেনি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। স্টার্ককে কভারের উপর দিয়ে আফিফের বাউন্ডারি, অ্যাগারকে লং অন দিয়ে সোহানের চার যেন সমর্থকদের হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায়। আফিফ ৩১ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৩৭ রান করে অপরাজিত থেকে পেয়েছেন ম্যাচসেরার পুরস্কার। সোহান ২১ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ২২ রান করে দলের প্রয়োজন মিটিয়েছেন দারুণভাবে।

এর আগে অস্ট্রেলিয়া পুরো ২০ ওভার ব্যাটিং করে তাদের টি-টোয়েন্টিতে সর্বনিম্ন রান সংগ্রহ করে। তাতেই তাদের ব্যাটিং দুর্দশার চিত্র ফুটে ওঠে ভালোভাবে। টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালো হলো না এবারো। অ্যালেক্স ক্যারি প্রথম ওভারে রিভার্স সুইপে মেহেদীকে দুই বাউন্ডারি হাঁকালেও তৃতীয় ওভারে তার শিকার হন। মিড অন দিয়ে বল উড়াতে চাইলেও টাইমিং মেলাতে পারেননি বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে মোস্তাফিজের স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হয়ে বোল্ড জস ফিলিপে। ৩১ রানে ২ ওপেনারকে হারিয়ে বিপদে পড়া অস্ট্রেলিয়াকে তৃতীয় উইকেট জুটিতে টেনে তোলেন মিচেল মার্শ ও হেনরিকস। ৫৭ রানের তাদের জুটি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিল বাংলাদেশের জন্য। এ জুটি ভাঙার কৌশল জানা ছিল সাকিবের। তাইতো নিজের দ্বিতীয় স্পেলে বোলিংয়ে ফিরে তিনি পেয়ে যান সাফল্য। বাঁহাতি স্পিনারকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বল স্টাম্পে টেনে আনেন ২৫ বলে ৩০ রান করা হেনরিকস। ১১তম ওভারে নাসুমকে লং অন দিয়ে ইনিংসের একমাত্র ছক্কাটি হাঁকান এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।

বাংলাদেশকে চোখ রাঙানি দিচ্ছিলেন দীর্ঘদেহী মার্শ। আগ্রাসী মনোভাবে শেষ দিকে ঝড় তোলার অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। কিন্তু ১৭তম ওভারের প্রথম বলে শরিফুল তাকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে সবচেয়ে ব্রেক থ্রু এনে দেন। তার সিমের উপর ক্রস ডেলিভারি মিড উইকেট দিয়ে উড়াতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। প্রথম ম্যাচের পর এবারো তার ব্যাট থেকে আসে ৪৫ রান। ৯৯ রানে মার্শ বিদায়ের পর অস্ট্রেলিয়ার রানের চাকা থেমে যায়। শেষ ৪ ওভারে তাদের স্কোরবোর্ডে পুঁজি মাত্র ২২ রান, এই সময়ে আরো চার উইকেট হারায় তারা।

মোস্তাফিজ ১৮তম ওভারে পরপর দুই বলে ম্যাথু ওয়েড ও অ্যাস্টন টার্নারকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা তৈরি করেন। তবে হ্যাটট্রিক বলে টাই মোস্তাফিজকে হতাশায় ডোবান।

মোস্তাফিজ ৪ ওভারে ২৩ রান দিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার। আরেক বাঁহাতি পেসার শরিফুল ২৭ রানে পেয়েছেন ২ উইকেট।

টানা দুই দিনে দুই জয়ে পাঁচ ম্যাচ সিরিজে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। একদিনের বিরতির পর শুক্রবার (৬ আগস্ট) তৃতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল। সিরিজ জেতা হয়ে যাবে কি সেদিনই?

 

Next Post

রাজশাহীতে অস্ত্রসহ র‍্যাবের হাতে আটক-১

বুধ আগস্ট ৪ , ২০২১
আভা ডেস্কঃ রাজশাহীতে অস্ত্র ও গুলিসহ ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৫ এর সদস্যরা। বুধবার (৪ আগস্ট) বিকেলে সাড়ে ৩ টার দিকে নগরীর আলিফ লাম মীম ভাটার মোড় থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত হলেন- শেরপুর জেলার শেখহাটি এলাকার মোক্তার আলীর ছেলে রাজীব মিয়া (২৮ )। র‌্যাব জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৫, […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links