আভা ডেস্ক : হ্যাকিংয়ের মাধ্যমেই বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অন্তত ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়েছে। অপরাধ তদন্ত সংস্থার (সিআইডি) ফরেনসিক প্রতিবেদনে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি সম্প্রতি ফিলিপাইনের আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ দু’জন ফিলিপাইনের ওই আদালতে প্রতিবেদনের বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও রিজার্ভ চুরি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রায়হান উদ্দিন খান ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফাহিম বাংলাদেশের পক্ষে সাক্ষ্য দেন। এবারই প্রথম দেশের বাইরের কোনো আদালতে বাংলাদেশের একটি তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা সাক্ষ্য দিলেন। কর্মকর্তারা বলছেন, রিজার্ভ চুরির তদন্ত থেমে নেই। শিগগির মামলাটির তদন্ত একটা চূড়ান্ত রূপ পেতে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ও রিজার্ভ চুরি মামলার তদারক কর্মকর্তা মোল্যা নজরুল ইসলাম শনিবার যুগান্তরকে বলেন, তদন্তের অংশ হিসেবেই ফরেনসিক প্রতিবেদন ফিলিপাইনের আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। এ প্রতিবেদনটি আদালতে চলা মামলার সাক্ষ্য হিসেবে কাজে লাগবে বলেও জানান তিনি।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে সুইফট কোডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় ১০১ মিলিয়ন ডলার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি করে নেয় দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে ২ কোটি ডলার চলে যায় শ্রীলংকা এবং ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চলে যায় ফিলিপাইনে। চুরিতে জড়িয়ে পড়েন পিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের (আরসিবিসি) অন্তত ১০ কর্মকর্তা। তারা অর্থ সরানোর সঙ্গে জড়িত। তদন্তে তাদের অপরাধ প্রমাণিত।
রিজার্ভ চুরির ঘটনার প্রায় এক মাস পর ফিলিপাইনের একটি পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ঘটনাটি জানতে পারে বাংলাদেশ। এরপরই বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হয়। এ ঘটনা চেপে রাখতে গিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে পদ ছাড়তে বাধ্য হন তখনকার বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। বড় ধরনের রদবদল করা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে।
পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক জোবায়ের বিন হুদা মানি লন্ডারিং আইনে ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরির অভিযোগ এনে ওই বছর ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় একটি মামলা করেন। পরে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সিআইডিকে। মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে সিআইডি এ পর্যন্ত শতাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান ছাড়াও সন্দেহজনক একাধিক উচপর্যায়ের কর্মকর্তাও রয়েছেন। তদন্তে বাংলাদেশ ও দেশের বাইরের পুরো চক্রকে শনাক্ত করা হয়েছে। এখন তাদের বিরুদ্ধে দালিলিক প্রমাণ সংগ্রহের কাজ করছে সিআইডি।
সিআইডির তদন্তে বেরিয়ে এসেছে- রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন অনেকেই শুধু গাফিলতিই করেননি, ষড়যন্ত্রেও লিপ্ত ছিলেন এবং তারা অপরাধও করেছেন। সিআইডির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, আমাদের দৃষ্টিতে রিজার্ভ চুরিতে ‘লট অব’ ক্রিমিনাল জড়িত। এতে উচ্চপর্যায়ের অনেকেই আছেন। তদন্তে তাদের ষড়যন্ত্রের তথ্য-প্রমাণও পাওয়া গেছে। যেগুলো একত্রিত করে চার্জশিট দেয়া হবে। যাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ফেঁসে যাবেন।
তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ও তদন্ত তদারক কর্মকর্তা মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, বলা চলে বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের তদন্ত শেষ। এ অংশের তদন্তে রিজার্ভ চুরিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত দেশি-বিদেশি অপরাধী ও সন্দেহভাজনদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় আরও কিছু তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। তিনি বলেন, চক্রটির পরিকল্পনা ছিল ৩৫টি প্যামেন্টের মাধ্যমে ২ বিলিয়ন ডলার সরানোর। তারা ৫টি প্যামেন্ট নিয়ে গেছে। যার মাধ্যমে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার সরানো সম্ভব হয়।
যুগান্তর