নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাড়ির লিফটে আটকা পড়ে দুই ঘন্টা পর উদ্ধার হলেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজে উপাধ্যক্ষ ড. মো. বুলবুল হাসান। বুধবার রাত সাড়ে আটটা থেকে সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত লিফটে আটকে থাকেন তিনি। পরে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীরা এসে তাকে উদ্ধার করেন। নগরীর কাদিরগঞ্জ সংলগ্ন পিস টাওয়ারে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারীতে নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকার পিস টাওয়ারের অষ্টম তলার দুটি ফ্ল্যাট নিয়ে ভাড়া থাকেন রামেক উপাধ্যক্ষ বুলবুল হাসান। বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে অষ্টম তলা থেকে নিচের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু লিফটির মেশিনে সমস্যা দেখা দেয়। এতে লিফটি দশম তলায় চলে যায়।
পরে সেখানেই লিফটটি থেমে গেলে আটকা পড়েন তিনি। এরপর তিনি পিস টাওয়ারের মালিকের লোকজনকে ফোন দেন। কিন্তু কেউ ফোন রিসিভ করেননি। পরে ওই শিক্ষক মেয়েকে তাঁর ফোন করে ভেতর আটকে থাকার কথা জানান।
এরপর তার পরিবারের লোকজন পিস টাওয়ারের সভাপতি ও নাইট গার্ডসহ অনেকের সাহায্য চাইলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। উপায়ন্তর না পেয়ে ডা. বুলবুলের পরিবার একটি শাবল নিয়ে লিফটের দরজা খোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতেও কোনো ব্যাবস্থা হয়নি। পরে রাত ৯ টা ৫৪ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসে ফোন দেয়া হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীরা তাকে উদ্ধার করেন।
উপাধ্যক্ষ বুলবুল হাসানের মেয়ে ফারজানা ফাইজা সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, ‘রাত সাড়ে আটটায় বাবা বাড়ি থেকে বাইরে যাচ্ছিলেন। পৌনে নয়টার দিকে ফোন পেয়ে জানতে পারি, বাবা লিফটে আটকা পড়েছেন। সাথে সাথে বাড়ির লোকজনকে খবর দিই কিন্তু কেউ উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি। এমনকি ফায়ার সার্ভিসেও খবর দেন নি। পরে আমরা গিয়ে শাবল নিয়ে লিফটের দরজা খোলার চেষ্টা করি। এদিকে বাবার এ্যাজমার সমস্যা থাকায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। দুই ঘন্টা পর ফায়ার সার্ভিসে ফোন দেয়া হলে তারা এসে বাবাকে উদ্ধার করে। আল্লাহ তাকে রক্ষা করেছেন বলে তিনি হয়তো বেঁচে ফিরেছেন। না হলে বড় ধরনের কিছু ঘটলে ঘটতেও পারত।’
জানা যায়, পিস টাওয়ারের ওই ভবনটির মালিক রয়েছেন চারজন। এরা হলেন মাহাবুব আলম, হাসিবুল ইসলাম মানিক, শফিউল আলম এবং এরফান শফি। এদের মধ্যে মাহাবুবুল আলম ওই ভবনেই থাকতেন। ভবনটি বছর দূয়েক আগে নির্মাণের পর দীর্ঘ নয় মাস থেকে লিফট ওঠা নামায় সমস্যা দেখা দেয়। লিফটে নেই কোনো ফ্যান, এসি বা লাইটের ব্যবস্থা। লিফটের ভেতরে ফোনটিও অকেজো।
এদিকে লিফট দেখাশোনার জন্য সার্বক্ষনিক একজন লোক থাকার কথা থাকলেও সেখানে কেউ দায়িত্ব পালন করেন না। এতে করে সকল ফ্লাটের ভাড়াটিয়াদের বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনায় পড়তে হয়। এ বিষয়ে বার বার মালিক কর্তৃপক্ষ এবং ভবন কমিউনিটির সভাপতিকে জানানো হলেও তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি। অত:পর ভবনটিতে জীবন ঝুকি নিয়েই বসবাস করছিলেন তারা।
ওই ভবনের ৭ম তলায় থাকেন শওকত আলী। তিনি বলেন, এই ভবনের লিফট এর সমস্যার কথা বার বার আমরা জানিয়েছি। আমাদের অভিযোগ কোন দিন শোনা হয়না। এমনকি কোন সভাতে আমাদের ডাকা হয়না। তাদের জানালে তারা বলেন আমরা যারা সভাপতি আর মালিক আছি তারা যা করবো তাই হবে।
মালিক পক্ষের মধ্যে মাহাবুব আলমের সাথে কথা হলে তিনি সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, আমি এই ভবনেই ১০ম তলায় থাকি। আমার যাতায়াতে কোনদিন কোন সমস্যা হয়নি। আজ যা ঘটেছে তা অনাকাঙ্খিত।
ভবন কমিউনিটির সভাপতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মো. আনোয়ার হোসেন সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, খবর পাওয়ার পরপরই আমরা ফায়ার সার্ভিসে জানিয়েছি। তবে তিনি কতক্ষণ আটকে ছিলেন তা জানতে পারিনি।
রাাজশাহী ফায়ার সার্ভিসের ষ্টেশন অফিসার ফরহাদ হোসেন সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, রাত ৯টা ৫৪ তে আমরা খবর পেয়ে ১৫ মিনিটের মধ্যে এখানে উপস্থিত হই। পরে ছাদে গিয়ে লিফটের মেইন লাইন থেকে সংযোগ দেওয়ার চেষ্টা করি। অত:পর দশম, নবম, অষ্টম তলার গেট না খুললে সপ্তম তলার গেট খুলে তাকে উদ্ধার করি। ফ্যান লাইট না থাকায় সে সময় তিনি গুরুতর অবস্থায় ছিলেন। বর্তমানে তিনি স্বাভাবিক আছেন। তবে এমন পরিবেশে দুই ঘন্টা লিফলেটর ভিতরে আটকে থাকা আশ্চর্যজনক। তিনি নি:শ্বাম বন্ধ হয়ে মারাও যেতে পারতেন।
এ বিষয়ে ড. মো. বুলবুল হোসেন বলেন, ‘আমি এই ভবনের মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিব। অসুস্থতার মধ্যেও দুই ঘন্টা আমাকে আটক থাকতে হয়েছে মৃত্যূর কুপ থেকে ফিরে এসেছি আমি। এদের উপযুক্ত শাস্তি আমি চাই ‘
সিল্কসিটি নিউজ