নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে অংশ নিতে পদত্যাগ করার আগে মেয়র বুলবুল স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে তিন প্রকৌশলীর পদন্নোতিপত্রে স্বাক্ষর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ২৭ জুন মেয়র বুলবুলের শেষ কার্যদিবসে ওই পদন্নোতিপত্রে স্বাক্ষর করেন তিনি। তবে বিষয়টি পরে জানাজানি হয়।
এছাড়াও একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে ডিঙ্গিয়ে জুনিয়র একজন উপসহকারীকে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে পদন্নোতী দেওয়া হয়েছে। তবে ওই পদন্নোতি এখনো কার্যকর হয়নি বলে নিশ্চিত করেছে রাসিক সূত্র।
সূত্রটি আরো জানায়, গত ২৭ জুন রাজশাহী সিটি করোপরেশনের তৎকালীন মেয়র ও মহানগর বিএনপির সভাতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল রাসিক নির্বাচনে অংশ নিতে পদত্যাগ করেন। তিনি ওইদিন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে দায়িত্বভার স্থানন্তর করেন রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মোমিনকে। কিন্তু দায়িত্ব ছাড়ার আগে মেয়র বুলবুল তিনজন প্রকৌশলীকে পদন্নোতি দিয়ে যান।
তাঁদের মধ্যে সহকারী প্রকৌশলী থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদন্নোতি দেওয়া হয় শামসুদ্দিন হায়দারকে, উপ-সহকারী প্রকৌশলী থেকে সহকারী প্রকৌশলী করা হয় মোকাম্মেল হোসেনকে এবং শাহরিয়ার সুলতানকে। তবে মোকাম্মেলকে পদন্নোতি দেওয়া হয় আরেক উপ-সহকারীকে ডিঙ্গিয়ে। যিনি মোকাম্মেলেরে সিনিয়র।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, তিন প্রকৌশলী ছাড়াও আরো কয়েকজন কর্মকর্তাকে মেয়র বুলবুল শেষ দিনে পদন্নোতি দিয়ে যান। তবে বিষয়টি এখনো গোপন রাখা হয়েছে। এমনকি ঠিক কতজনকে পদন্নোতি দেওয়া হয়েছে-সেটিও নগর সংস্থার কোনো দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করতে পারেননি।
জানতে চাইলে রাসিকের একজন দায়িত্বশীল প্রকৌশলী কালের গতকাল রবিবার বলেন, পদন্নোতি দেওয়া তিন প্রকৌশলীর মধ্যে দুজনের ফাইল প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু প্রধান প্রকৌশলী ওই ফাইল দুটি এখনো অনুমোদন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাননি। ফলে পদন্নোতি মেয়র শেষ দিনে দিয়ে গেলেও সেটি এখনো কার্যকর হয়নি। আর নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদন্নোতি দেওয়া হলেও শামসুদ্দিন হায়দারের ফাইলটি গতকাল পর্যন্ত প্রধান প্রকৌশলীর টেবিলে যায়নি।
এর বাইরে আরো যাদের পদন্নোতি দেওয়া হয়েছে, তাদের ফাইলও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এখনো পাঠানো হয়নি। ফলে ঠিক কতজনকে মেয়র বুলবুল শেষ দিনে যাওয়ার আগে পদন্নোতি দিয়ে গেছেন-তা এখনো কেউ নিশ্চিত হতে পারছেন না।
রাসিকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মেয়র বুলবুল শেষ কার্যদিবসেতাঁর আস্থাভাজন অন্তত ১০ জন কর্মর্তাকে বিভিন্ন পদে পদন্নোতি দিয়েছেন। যাদের অনেকেই বিষয়টি গোপন রেখেছেন। পরবর্তিতে ধাপে ধাপে গোপনে যেন তাঁদের পদন্নোতিগুলো মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন করে নেওয়া যায়। জানাজানি হলে আগামী ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে বুলবুল আর মেয়র নির্বাচিত হতে না পারলে পদন্নোতিপ্রাপ্তদের পদন্নোতি আর বাস্তবায়ন না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকবে। এ কারণেই পদন্নোতিপত্রে মেয়র স্বাক্ষর করে বিদায় নিলেও মাত্র তিন প্রকৌশলীর পদন্নোতি পাওয়ার বিষয়টি প্রকাশ পায়।
জানতে চাইলে রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, পদন্নোতি পাওয়ার অনেকগুলো ধাপ রয়েছে। সেই ধাপগুলোর মধ্যে একটি হলো মেয়রের অনুমোদন। এরপর আরো অনেক কাজ বাকি থাকে। ফলে যেসব প্রকৌশলীকে পদন্নোতি দেওয়া হয়েছে-তাদের পরিবর্তি কোনো কার্যক্রমই আর এগোইনি। কাজেই এটিকে এখনো পদন্নোতি বলা যাবে না।
জানতে চাইলে রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মোমিন বলেন, এই ধরনের কোনো খবর আমার কাছে নাই। আমি ঢাকায় আছি। ঢাকা থেকে গিয়ে পরে জানাতে পারবো।’
তবে গতকাল সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের নির্বাচনে রাসিক মেয়র পদে নির্বাচিত হোন মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে প্রায় ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। এবার নির্বাচনেও এই দুই হেভিওয়েট প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেেছন।