আভা ডেস্ক: রাষ্ট্রের সর্বস্তরে দুর্নীতি ও আর্থিক খাতে চরম বিশৃঙ্খলার অভিযোগ তুলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কঠোর সমালোচনা করেছেন সংসদ সদস্যরা। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির পাশাপাশি সরকারি দলের সাংসদরাও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে অর্থমন্ত্রীর সক্রিয় হস্তক্ষেপ কামনা করেন। গতকাল রোববার সংসদের বৈঠকে বিদায়ী
২০১৭-১৮ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ সদস্যরা এসব কথা বলেন। এর আগে সকালে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। গত ৭ জুন সংসদে নতুন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। গতকাল শুরু হয় সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা। এতে অংশ নিয়ে একাধিক সংসদ সদস্য আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে ব্যর্থতার জন্য অর্থমন্ত্রীকে দায়ী করেন। এ সময় অর্থমন্ত্রী সংসদের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আজও সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা হবে এবং পাস হবে। এরপর প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর শুরু হবে আলোচনা।
গতকালের বৈঠকে আওয়ামী লীগদলীয় সদস্য ও সাবেক ডেপুটি স্পিকার অধ্যাপক আলী আশরাফ বলেন, ব্যাংক খাতে লুটপাটকারীদের ধরা হলে মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরে আসবে, সুশাসন নিশ্চিত হবে। অর্থমন্ত্রীকে এ কাজগুলো দৃঢ়তার সঙ্গে করতে হবে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে এফবিসিসিআইর বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে না পারলে আর্থিক খাত ভেঙে পড়বে। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে না। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অর্থ পাচারকারী ও ব্যাংক লুটেরাদের ধরা শুরু করতে হবে। বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বত্রই সুশাসনের অভাব। অবাধে লুটপাট চলছে, দেখার কেউ নেই।এক ঘণ্টা বৃষ্টি হলে ঢাকা শহর ডুবে যায়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ নিয়ে সরকারের নীতিরও সমালোচনা করেন তিনি।
ব্যাংক খাতের লুটপাটের ঘটনাকে গজনীর সুলতান মাহমুদের সোমনাথ মন্দির লুটের সঙ্গে তুলনা করেন ফিরোজ রশীদ। তিনি বলেন, সোমনাথ মন্দির লুটের পর আর এত বড় লুট হয়নি। অর্থমন্ত্রী ব্যাংক ডাকাতদের প্রটেকশন দিচ্ছেন। জনগণের করের টাকা নিয়ে তিনি ব্যাংকের মূলধন জোগাচ্ছেন, অন্যদিকে বেসরকারি শিক্ষকরা দাবি আদায়ে আবার রাজপথে নামতে যাচ্ছেন। জনগণকে খুশির পরিবর্তে ব্যাংকওয়ালাদের খুশি করার বাজেট দেওয়া হয়েছে। এই ব্যাংকওয়ালারা ধনী; তারা ভোটের সময় দেশে থাকবে না। গরিব মানুষের কাছেই ভোট আনতে যেতে হবে। ফিরোজ রশীদ বলেন, এফবিসিসিআই ব্যাংক ডাকাতদের শাস্তি চায়। কিন্তু অর্থমন্ত্রী ডাকাতদের কেন সুযোগ দিলেন? বাজেটে ধনী ও ব্যাংক ডাকাতদের উৎসাহিত করা হয়েছে।
স্বতন্ত্র সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন বাড়িয়ে কী লাভ হলো? এখনও তারা ঘুষ ছাড়া কিছুই বোঝেন না। অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, অনেক সৎ কর্মকর্তা থাকলেও অসৎ কর্মকর্তার সংখ্যা কম নয়। তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
ব্যাংক, বীমাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমানোর প্রস্তাবের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এক পরিবার থেকে চারজনকে ব্যাংকের পরিচালক করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এখন আবার তাদের কর কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে চললে ব্যাংক বলতে কিছু থাকবে না। রুস্তম আলী ফরাজী আগামী সরকারের জন্য না রেখে অর্থমন্ত্রীকেই ব্যাংক খাতে সংস্কার আনার জন্য কমিশন করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখে নিরাপত্তার জন্য; কিন্তু এখন মানুষ ভীত হয়ে গেছে।
জাতীয় পার্টির আরেক সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, ২-৩ বছর ধরে বারবার ব্যাংক লুট নিয়ে তারা কথা বলে যাচ্ছেন। লুটকারীরা টাকা নিয়ে যাচ্ছে। অর্থমন্ত্রী মানুষের করের টাকা দিয়ে ব্যাংকের মূলধন সরবরাহ করে যাচ্ছেন। বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংক সংস্কারে কমিশন করার কথা অর্থমন্ত্রীর অস্বীকার করার সমালোচনা করে পীর ফজলুর রহমান বলেন, সংস্কার কমিশন গঠিত হলে কারা লুটপাট করেছে, কীভাবে করেছে, সব বেরিয়ে আসত। নিশ্চয়ই অর্থমন্ত্রী চান না- এটা প্রকাশ হোক। মাথাপিছু আয় ১৭০০ ডলার এই হিসাবের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দেশের কেউ ভিজিএফ-ভিজিডির ওপর নির্ভরশীল, আবার কারও আয় ৭০ হাজার থেকে এক কোটি ডলার। এমন বৈষম্যমূলক সমাজে মাথাপিছু আয়ের হিসাব দেখিয়ে কী লাভ? সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় আরও অংশ নেন সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগদলীয় সাংসদ রমেশ চন্দ্র সেন, সোহরাব উদ্দিন ও জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম ওমর।
সমকাল