ava desk: রাশিয়া বিশ্বকাপে অল ইউরোপিয়ান সেমিফাইনাল হচ্ছে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এবার নিয়ে পঞ্চমবার। জার্মানি, স্পেন, পর্তুগালের মতো প্রতিষ্ঠিত শক্তির বিদায়ের পরও ইউরোপেরই জয়জয়কার। ফুটবলটা কি তাহলে ইউরোপকেন্দ্রিক হয় যাচ্ছে? ইউরোপের এই দাপটের রহস্যই বা কী? আমি বলব, দাপট বলে আসলে কিছু নেই। দাপট তখনই হবে, যখন একটি দল টানা-দুই তিনবার জিতবে। ব্রাজিল যেমন ১৯৫৮ থেকে ১৯৭০ চার আসরের মধ্যে তিনবারই সেরা। দুবার টানা। দাপট তো এটা। এখন অবশ্য ওই রকম হচ্ছে না।
তবে ইউরোপ সব সময়ই ফুটবলের পরাশক্তি ছিল। আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। মূল ফুটবলটা তো হয় ইউরোপেই। কারণটাও পরিষ্কার, ইউরোপের ক্লাবগুলো বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্লাব। স্প্যানিশ লিগ, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, বুন্দেসলিগা, সিরি ‘আ’ তো আছেই, ইউরোপের অন্য সব লিগও দারুণ।
শক্তিশালী ক্লাব-কাঠামো সমৃদ্ধ দেশগুলোই ছড়ি ঘোরাবে, এটা সহজ হিসাব। ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা বা এশিয়া বলে আলাদা কোনো কথা নেই। লাতিনের সমস্যা হলো, ইউরোপের মতো ক্লাব-কাঠামোর ঘাটতি। লাতিনের খেলোয়াড়েরা কিছু হওয়ার আগেই তো ইউরোপের ক্লাবগুলো নিয়ে যায়। ইউরোপের আরেকটা সুবিধা হলো, এক দেশ থেকে আরেক দেশে যেতে ভিসা লাগে না। বেলজিয়ামের তিন বড় তারকাই যেমন প্রিমিয়ার লিগে খেলে।
হ্যাজার্ড চেলসিতে, লুকাকু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে, ডি ব্রুইনা ম্যান সিটিতে। উদাহরণটা দিলাম এই জন্য যে ইউরোপের দেশগুলো অনেক কাছাকাছি চলে এসেছে এখন। লাতিনের খেলোয়াড়েরাও তো বেশির ভাগ ইউরোপেই খেলে। মেসির জন্ম কোথায়? আর্জেন্টিনায়। কিন্তু ওকে প্লেয়ার বানিয়েছে কে? বার্সেলোনা। আর কিছু বলারই দরকার পড়ে না।
প্রসঙ্গক্রমে বলি, আমরা এগোতে পারছি না ক্লাব-কাঠামো না থাকায়। এ জন্য টাকা দরকার। তবে শুধু টাকা থাকলেই হবে না। তাহলে তো সৌদি আরব অঢেল টাকা ঢেলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেত। এর সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি ও খুব ভালো পরিকল্পনা চাই। যেটা আছে ইউরোপের। স্পনসর, দর্শক উন্মাদনার দিক থেকেও ইউরোপ এগিয়ে। আরও এগিয়ে যাবে। ওদের ফুটবল-বাজার আরও বড় হবে।
তবে এত সবের ভিড়ে কোনো দেশের সাফল্যের জন্য আরেকটা জিনিস দরকার-একটা সোনালি প্রজন্ম। যে প্রজন্ম এসেছিল বলেই ইংল্যান্ড ১৯৬৬ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। স্পেন ২০১০ সালে। জার্মানির কথা না-ই বললাম। ১৯৯০ সালের পর এই প্রথম ইংল্যান্ড সেমিফাইনালে খেলছে। একসঙ্গে আট-দশজন ভালো খেলোয়াড় চলে আসায় এবার বেলজিয়ামও সেমিফাইনালে উঠে গেছে।
শুধু ইউরোপ নয়, এখন সব দেশই এক নম্বর প্রাধান্য দিচ্ছে ফুটবল উন্নয়নকে। ইরানের মতো দেশ শুধু কোচিং স্টাফের পেছনে বছরে ১০ মিলিয়ন ডলার খরচ করছে। সৌদি আরব বিশ্বকাপে খেলে গেল। অথচ বিশ্বকাপের আগে খেলোয়াড় ও কোচদের সাড়ে তিন শ মিলিয়ন ডলার (৩০ লাখ ডলার) পাওনা ছিল ওদের ক্লাবগুলোর কাছে।
এই অবস্থায় সরকার এগিয়ে এসে ১ বিলিয়ন ডলার (১০০ কোটি) ক্লাবগুলোকে দিয়েছে খেলোয়াড়-কোচের পাওনা শোধ করতে। তার মানে রাষ্ট্র এখন ফুটবল উন্নয়নে বড় অবদান রাখছে। আগামী দশ বছরে যা আরও বাড়বে এবং দেশগুলোর মধ্যে ব্যবধান আরও কমে যাবে। দশ বছর পর জাপান-কোরিয়া বড় দলগুলোর জন্য বড় হুমকি হয়ে দেখা দেবে মনে হচ্ছে আমার। ইরানও বড় হুমকি হবে। যুদ্ধ না হলে ইরাকও হতে পারত।
বাংলাদেশে আমরা কিন্তু সেই ব্রাজিল, আর্জেন্টিনাকে নিয়েই পড়ে আছি। এই দুটি দলের বিদায় আমাদের ব্যথিত করে। কিন্তু ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা বিশ্ব ফুটবলের একটি অংশমাত্র, অধিপতি নয়। বিশ্বকাপে যে ভালো খেলেছে, সে-ই জিতেছে, কোনো ফ্লুক হয়নি। ইউরোপের দেশগুলো ফুটবলের পেছনে বিনিয়োগেরই ফল পাচ্ছে।
প্রথমআলো