রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:
কোটা সংস্কার অন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করার সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বেধড়ক মারধরে মারাত্মকভাবে আহত তরিকুলকে চাপে পড়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেবার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তরিকুলের ডান পায়ের দুটি হাড় হাটুর নিচে থেকে ভেঙ্গে গেছে, সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন এখনো শুকায়নি। তাই তার পরিবার ও বন্ধুরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন চাপে পড়েই ছাড়পত্র দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়।
হাসপাতালে তরিকুলের পাশে থাকা কয়েকজন বন্ধু নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করে বলেন, গত ২ জুলাই (সোমবার) তরিকুলের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সেদিন থেকেই হাসপাতালে ভর্তি আছে। তার ডান পায়ের হাড় ভেঙ্গে গেছে। সারা শরীরে অসংখ্য জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাছাড়া ডাক্তাররাই বলেছেন, এ পরিস্থিতিতে তার অস্ত্রপচার ছাড়া তাকে সুস্থ করা সম্ভব নয়। এমন অবস্থার পরও তাকে ছাড়পত্র দেয়ায় আমরা সত্যিই অবাক হয়েছি। এখন তরিকুলের সুচিকিৎসা নিয়েই আমরা চিন্তিত। এখন কি কারণে হঠাৎ তরিকুলকে ছাড়পত্র দিল তাই বুঝে উঠতে পারছি না। তবে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো চাপে পড়ে তাকে ছাড়পত্র দিয়েছে। নইলে এমন রোগীকে ডাক্তাররা কখনোই ছাড়পত্র দিতেন না।
তার বন্ধুরা আরো জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দেবার পর তাকে নগরীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানেই তার চিকিৎসা চলছে। তবে শীঘ্রই তাকে অস্ত্রপচার করাতে হবে বলে ডাক্তাররা জানিয়েছেন। অন্যথায় তরিকুলের ডান পা পঙ্গু হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন ডাক্তাররা।
তরিকুলের নিজ বিভাগ ইসলামি স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তরিকুলকে দেখতে গিয়েছিলাম। তার অবস্থা খুব ভালো মনে হয়নি। এই অবস্থায় তাকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে বলে শুনেছি। তবে কতখানি সত্য তা জানি না। তবে আমরা চেষ্টা করবো তার চিকিৎসার ব্যাপারে সহয়তা করার জন্য। এজন্য বিভাগের পক্ষ থেকে সহায়তার বিষয়টি একাডেমিক কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
এ ব্যাপারে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক জামিলুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।
উল্লেখ্য, গত ২ জুলাই সোমবার বিকেলে কোটা সংস্কার অন্দোলনকারীরা পতাকা মিছিল বের করলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। এদের মধ্যে তরিকুলকে একা পেয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রামদা, হাতুরি ও লাঠি দিয়ে তার ওপর হামলা চালায়। এতে তার ডান পা ভেঙ্গে যায় এবং মাথা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করা হয়।