নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) সুমিত কুমার চৌধুরীকে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে এলাকাবাসী। পরে জেলা পুলিশ থেকে তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। শুক্রবার রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের সামনে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, ঘটনার পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে নগরীর রাজপাড়া থানা পুলিশ তাকে হেফাজতে নেয়। ওই রাতেই কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে সুমিত চৌধুরীকে থানা থেকে নিয়ে যান জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা। পরদিন শনিবার তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। সুমিত চৌধুরী জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার এএসপি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ২৮ মে নৌ পুলিশে তাকে বদলি করা হয়।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সদ্য বিদায়ী এএসপি সুমিত চৌধুরী। তার ভাষ্য, তিনি এমন কিছু কাজ করেননি যাতে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাকে সরাতেই এসব প্রচার করা হয়েছে। তবে থানা হেফাজেতে নেয়ার কারণ জানতে চাইলে কৌশলে এড়িয়ে যান তিনি।
পুলিশের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এএসপি সুমিত চৌধুরীর বিরুদ্ধে নিজ দফতরে বসেই নিয়মিত মাদক সেবনের অভিযোগ রয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও তার নিবিড় যোগাযোগ। মাদক সম্পৃক্ততা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে নৌপুলিশে বদলি করা হয়। বদলির এই আদেশ হাতে পাওয়ার পর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সুমিত চৌধুরী। এর মধ্যে এসপির সঙ্গেও খারাপ আচরণ করেন তিনি।
এদিকে নগরীর রাজপাড়া থানা পুলিশের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে সুমিত চৌধুরী মদ্যপান করে রামেক হাসপাতালের সামনে মাতলামি করছিলেন। ওই সময় কয়েকজন পথচারী ও দোকানীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন তিনি। এরপর তারা ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে গণপিটুনি দেন। সাদা পোশাকে থাকায় তারা ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে চিনতে পারেননি।
খবর পেয়ে দ্রুত সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান রাজপাড়া থানার ডিউটি অফিসার ব্রজ গোপাল। জনরোষ থেকে তারাই উদ্ধার করে সুমিত চৌধুরীকে থানায় নেন। খবর পেয়ে পরে জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা রাজপাড়া থানায় ছুটে যান। দীর্ঘ গোপন দেনদরবার শেষে ভোররাতে সুমিত চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে থানা থেকে বেরিয়ে যান পুলিশ কর্মকর্তারা।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান। তিনি জানান, ওই রাতে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়ে ঝামেলা হয়েছিলো। পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। বিষয়টি নিষ্পত্তি শেষে ভোরের দিকে থানা থেকে ছাড়া পান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে রোববার রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) শহীদুল্লাহ বলেন, গত ২৮ মে পুলিশ সদর দফতর থেকে এএসপি সুমিত চৌধুরীকে নৌ-পুলিশে বদলির আদেশ আসে। কিন্তু এর মধ্যেই গত কয়েকদিনে শৃঙ্খলাভঙ্গজনিত কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটান তিনি। ফলে শনিবারই তাকে রাজশাহী জেলা থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে।