আভা ডেস্ক: ম্যাচের একেবারে শেষ মুহুর্তে ইয়াগো আসপাসের নাটকীয় গোলে মরক্কোর সাথে ২-২ গোলে ড্র করে ‘বি’ গ্রুপ থেকে রাশিয়া বিশ্বকাপের শেষ ষোলতে উঠে গেছে স্পেন। গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচের দুই ড্র ও এক জয়ে তাদের পয়েন্ট ৫। একই গ্রুপ থেকে নক আউট পর্বের টিকিট কেটেছে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালও। সমাস সংখ্যক ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ৪।
এর আগে সোমবার (২৫ জুন) সারানস্কে স্টেডিয়ামে স্পেনের বিপক্ষে খেলতে নেমে প্রথমার্ধেরর শুরু থেকেই অপ্রত্যাশিত দাপুটে খেলা উপহার দিতেথাকে আফ্রিকার দেশ মরক্কো। রক্ষণ ভাগ, মাঝ মাঠ ও আক্রম ভাগ; তিন বিভাগেই দলটির পারফরম্যান্স ছিলো অসাধারণ।
ছোট ছোট পাসে ম্যাচের শুরুতেই তাদের ভেতরে স্প্যানিশ রক্ষণ ভাঙার অদম্য প্রবনতা লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু ম্যাচের ১৩ মিনিট অব্দি রামোসদের সুরক্ষিত দেয়াল ভাঙতে পারেনি। তবে সময়ও নেয়নি। প্রথমার্ধের ১৪ মিনিটে রামোস ও ইনিয়েস্তার ভুল বোঝাবুঝিতে নিজেদের সীমানায় বল পেয়ে যান বুতাইব। মাত্রই আক্রমণ শেষ করে স্প্যানিশ শিবির তখন মরক্কো রক্ষণ সীমানায়।
মাঠ তখন একেবারে ফাঁকা।
সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে বল পায়ে রিসিভ করেই এক মুহুর্তও দেরি করলেন না বুতাইব। লম্বা টান দিয়ে চোখের পলকেই ছুটে গেলেন স্পেন সীমানায়। সার্জিও রামোস তার পিছু পিছু ছুটছেন। তাকে ধরতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু পারলেন না। সেই সুযোগে গোল পোস্টের একেবারে সামনে গিয়ে গোলরক্ষক দাভিদ দে গিয়াকে বোকা বানিয়ে ফিনিশিং টাচে গিয়ে মরক্কোকে ১-০ তে এগিয়ে দেন। উল্লাসের মাতম উঠলো মরক্কো শিবিরে।
একে তো ১৯৯৮ সালের পর এটাই বিশ্বকাপে মরক্কোর প্রথম গোল। তার ওপরে আবার সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের ছাড়িয়ে যাওয়ার আনন্দ। কাজেই মাতম ওঠাটা অস্বাভাবিক কিছুই ছিল না।
তবে দলটির আনন্দ খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। বুতাইবের গোলের উদযাপন শেষ হতে না হতেই ১৯ মিনিটে মরক্কোর জালে বল জড়িয়ে স্পেনকে ১-১ গোলে সমতা এনে দিলেন স্পেনের ইসকো। এর ঠিক ৬ মিনিট পরে আবার স্প্যানিশ রক্ষণ ফাঁকা পেয়ে বল নিয়ে ঢুকেছিলেন বুতাইব। কিন্তু এবার আর হলো না। সেখানে বাঁধ সাধলেন গোলরক্ষকগিয়া।
মরক্কোর ওই আক্রমনের পর ব্যবধান বাড়াতে আক্রমনে গিয়েছে স্পেনও। কিন্তু মরক্কো দেয়ালে তাদের আক্রমনগুলো প্রতিহত হলে ১-১ সমতা নিয়েইদু’দলকে মাঠ ছাড়তে হয়।
দ্বিতীয়ার্ধে নেমে আকমনের ধার বাড়ায় দু’দলই। সেই প্রতিযোগিতায় শুরুর দিকে স্পেনেরে তুলনায় মরক্কোই ছিলো শ্রেয়তর। ৫৬ মিনিটের কথা। স্পেন বক্সের সামান্য বাইরে থেকে সোজা গোল পোস্টে শট নিলেন আমরাবাত। নিখুঁত শট ছিলো। গিয়া ও পরাস্ত হয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগা মরক্কো। ক্রসবারে গিয়ে বলটি ফিরে এলে নিশ্চিত গোলবঞ্চিত হয় মরক্কো।
এর ছয় মিনিট যেতে না যেতেই সুযোগ এসেছিলো স্প্যানিশ শিবিরেও। বেশ গোছালো একটি আক্রমন থেকে মরক্কোর গোল পেস্টের সামনে পাওয়া ক্রস থেকে জালে শট নিয়েছিলেন ইসকো। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি।
ঠিক তার পরের মিনিটেই আবার লা রোজা শিবিরের আক্রমন। পেনাল্টি সীমানা থেকে হেড করে জালে বল ঠেলতে চেয়েছিলেন পিকে। সেখানে বাধ সাধলেন গোল রক্ষক মুনির এল কাজুয়ি।
এরপর যা ঘটেলো তা সত্যিই অবিশ্বাস্য। ৮১ মিনিটে পাওয়া মরক্কোর কর্ণার থেকে কিক নিলেন ফজর। বলটি গিয়ে জটলার ভেতরে পড়লে লাফিয়ে উঠে মাথায় সজোরে লাগিয়ে দিলেন বদলি খেলোয়াড় এন নাসিরি। বলও নিশ্চিন্তে জাল খুঁজে নিলো।
২-১ এ লিড পেল মরক্কো।
পিছিয়ে পড়ে ম্যাচে ফিরতে বাকি সময়ের পুরোটাই আক্রমনের পসরা সাজিয়ে প্রতিপক্ষের সীমানায় আঘাত হানতে চেয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য তাদের প্রতিটি প্রচেষ্টাই মরক্কোর দেয়ালে নষ্যাত হয়ে গেছে।
কিন্তু ম্যাচের শেষ মুহুর্তে এসে সার্জিও রামোসদের আর আটকাতে পারেনি মরক্কো। ইনজুরি টাইমের প্রথম মিনিটে গোলপেষ্টের ডান দিক থেকে কার্ভাহালের পা থেকে আসা বলটি আসপাস ফ্লিক করে জালে ঠেলে দিলে ২-২ এ সমতার উল্লাস ফেরে ২০১০ এর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের শিবিরে।
প্রাথমিকভাবে গোলটিকে অফসাইড বলে ঘোষণা দেন রেফারি।
তবে রিভিউ দেখার পর রেফারি তার সিদ্ধান্ত বদলালে সমতা নিয়ে বিশ্বকাপের শেষ ষোলতে ওঠার আনন্দ নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্পেন। বাংলানিউজ