আভা ডেস্ক : সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনার জন্য গঠিত সচিব কমিটির প্রথম বৈঠক হচ্ছে আজ। বেলা ১১টায় সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এ বৈঠক হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে উপস্থিত থাকতে সব সদস্যকে চিঠি দেয়া হয়েছে। বৈঠকে কোটা সংক্রান্ত বিদ্যমান সব ধরনের বিধি-বিধান, নির্বাহী আদেশ, প্রজ্ঞাপন ও প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে।সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সচিব কমিটির বৈঠককে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
কোটা সংস্কারের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমকে আহ্বায়ক করে ২ জুলাই রাতে সাত সদস্যের সচিব কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক, অর্থ সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব অপরূপ চৌধুরী, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহম্মদ, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের সচিব আকতারী মমতাজ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান।
কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে জানান, ইতিমধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে তাদের মধ্যে কোটা সংক্রান্ত কথাবার্তা শুরু হয়েছে। কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনার জন্য গঠিত কমিটি তিনটি বিষয় নিয়ে কাজ করবে। এগুলো হচ্ছে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা, সংস্কার ও বাতিলের বিভিন্ন দিক ব্যাখ্যা করা।
কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, বর্তমান কোটা পদ্ধতি সংস্কার বা বাতিলের প্রয়োজন হলে তার যৌক্তিকতা তুলে ধরে সুপারিশ করতে হবে কমিটিকে। কমিটি ১৫ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। কমিটি প্রয়োজন মনে করলে যেকোনো বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিকে কো-অপ্ট করতে পারবে। এসব কাজ করতে গিয়ে কমিটি কোটা সংক্রান্ত সব ধরনের অফিস আদেশ, বিধি-বিধান, প্রজ্ঞাপন এমনকি বিভিন্ন কমিশনের সুপারিশও পর্যালোচনা করবে।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন যুগান্তরকে বলেন, আমাদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে সরকার কোটা সংস্কারের কার্যক্রম শুরু করেছে। আমরা সরকারকে স্বাগত জানাই। কারণ এই আন্দোলন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত ছয়টি মামলা হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানসহ সারা দেশ থেকে আটক করা হয়েছে শতাধিক শিক্ষার্থীকে। পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের হামলায় আহত হয়েছে তিন শতাধিক। পুলিশি হয়রানির আশঙ্কায় অনেকে আত্মগোপনে রয়েছে। এমতাবস্থায় সচিব কমিটির বৈঠককে আমরা স্বাগত জানাই। শুরু থেকেই আমরা কোটা সংস্কারের দাবি জানিয়েছি। সেটা যেন অবশ্যই আমাদের পাঁচ দফার আলোকেই করা হয়।
‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’-এর দাবি পাঁচটি। এগুলো হল- কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নিয়ে আসা; কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে খালি থাকা পদগুলোতে মেধাবীদের নিয়োগ দেয়া; কোনো ধরনের বিশেষ পরীক্ষা না নেয়া; সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন বয়সসীমা এবং চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একবারের বেশি ব্যবহার না করা।
বাংলাদেশে প্রথম কোটা পদ্ধতি চালু হয়েছিল ১৯৭২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। ওই সময় মেধা কোটা ছিল ২০ ভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ ভাগ, নির্যাতিত মহিলা কোটা ১০ ভাগ, জেলা বা বিভাগ কোটা ছিল ৪০ ভাগ। ১৯৯৭ সালের ১৭ মার্চ কোটা পদ্ধতি সংশোধন করা হয়। এতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর জন্য এক ধরনের এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর জন্য আরেক ধরনের কোটা পদ্ধতি চালু করা হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর জন্য জেলাবহির্ভূত মেধা কোটা রাখা হয় ৪৫ ভাগ।
মুক্তিযোদ্ধা এবং উপযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা পাওয়া না গেলে মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যাদের জন্য ৩০ ভাগ, মহিলা কোটা ১০, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা ৫ এবং বাকি ১০ শতাংশ জেলার সাধারণ প্রার্থীদের জন্য। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের জন্য এতিম ও শারীরিক প্রতিবন্ধী (জেলা কোটাবহির্ভূত) ১০ ভাগ, মুক্তিযোদ্ধা এবং উপযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা পাওয়া না গেলে মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যাদের জন্য ৩০ ভাগ, মহিলা কোটা ১৫ ভাগ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা কোটা ১০ এবং অবশিষ্ট (জেলার সাধারণ প্রার্থীদের জন্য) ৩০ ভাগ কোটার ব্যবস্থা রয়েছে। অর্থাৎ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর নিয়োগের ক্ষেত্রে শতভাগই কোটার সুযোগ রাখা হয়।
এরপর ২০১১ সালের ১৬ জানুয়ারি মুক্তিযোদ্ধাদের নির্ধারিত ৩০ শতাংশের জন্য উপযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যা পাওয়া না গেলে পুত্র-কন্যার পুত্র-কন্যা (নাতি-নাতনি) দিয়ে পূরণের নিয়ম করা হয়। ২০১২ সালের ১২ জানুয়ারি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটার মধ্যে যেকোনো কোটায় পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রার্থী না পাওয়া গেলে সেই কোটা হতে ১ শতাংশ যোগ্য প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের দিয়ে পূরণ করার বিধান করা হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ৬ মার্চ কোটার সব ক্ষেত্রে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে অবশিষ্ট পদগুলো মেধার ভিত্তিতে পূরণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
যুগান্তর