আভা ডেস্কঃ নতুন বছরের প্রথম দিনে নতুন বই হাতে নিয়ে আনন্দ-উল্লাসে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার কথা ছিল রেশমা আক্তার হিমুর। কিন্তু ঘাতক ট্রাক তাকে স্কুলেই পৌঁছতে দেয়নি।
তার সহপাঠীরা যখন নতুন বই হাতে নিয়ে স্কুল ক্যাম্পাসে এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করছিল, আনন্দে মাতোয়ারা ছিল-তখন ট্রাকের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছিল হিমু।
তাকে যখন সিএনজি অটোরিকশা করে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছিল তখন অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরানো হিমু চাচাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিল, ‘চাচা হাসপাতাল আর কতদূর। আমি তো আর সহ্য করতে পারছি না।’
হিমুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ঠিকই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে হিমু।
এমন করুণ মৃত্যুর খবর স্কুল ক্যাম্পাসে ও শিক্ষক-শিক্ষিকার মাঝে পৌঁছার পর নতুন বছরে সবার কাছে নতুন বছরে নতুন বই পাওয়া বা বই বিতরণের আনন্দ মুহূর্তেই বিষাদে পরিণত হয়।
রেশমার পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। হাসপাতালে তার মা-বাবা ও স্বজনের আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নগরীর পতেঙ্গা মীলাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণিতে উঠেছিল ছাত্রী হিমু (১০)।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নতুন শ্রেণির বই আনতে এক স্কুল ড্রেস পড়ে নাইমা নামে আরেক সহপাঠীসহ স্কুলে যাচ্ছিল। রাস্তার ওপারেই তার স্কুল। বাড়ি থেকে বের হয়ে কাটগড় সি-বিচ রোড পার হওয়ার সময় একটি ট্রাক পতেঙ্গা মহিলা কলেজের মোড়ে হিমুর ছোট্ট পায়ের ওপর উঠে পড়ে।
সহপাঠী নাইমাও ওই ট্রাকের ধাক্কায় সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ট্রাকের চাকার নিচে সহপাঠী পড়ে গেছে দেখে চিৎকার দিয়ে ওঠে নাইমা। চালক ট্রাক থামিয়ে নেমে এসে হিমুকে উদ্ধার করে সিএনজি অটোরিকশায় ওঠায়। নাইমা এ খবর হিমুর পরিবারে জানালে চাচা সাইফুল, মনসুর ও ট্রাক চালক মিলে তাকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসে।
হিমুর চাচা সাইফুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘নতুন বছরে নতুন বই হাতে পাবে। এ কারণে আনন্দের শেষ ছিল না হিমুর। সে স্কুল ড্রেস পড়ে নতুন বই নিতে যাওয়ার পথে এমন দুর্ঘটনার শিকার হল। ট্রাকের চাকা হিমুর ডান পায়ে উঠে পড়ে। চমেক হাসপাতালে নেওয়ার সময় অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল আমার ভাতিজি।
বলেছিল, হাসপাতাল আর কতদূর! হিমুকে জরুরি বিভাগে নেয়ার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি দেয়া হয়। কিন্তু ভর্তির কিছুক্ষণ পরই দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়। ছোট্ট মেয়েটির এমন মৃত্যু কীভাবে সহ্য করবে তার বাবা-মা।’
পতেঙ্গা থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া দীপু যুগান্তরকে বলেন, হাসপাতাল থেকে ট্রাক চালক ফেরদৌসকে আটক করা হয়েছে। নিহতের পরিবার মামলা দিলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যুগান্তর