কোরবানির পশুর চামড়ার সরকারিভাবে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। কেউ কেউ বেশি দামে চামড়া কিনেছেন। তবে চামড়া দাম তেমন বলছে না ব্যবসায়ীরা এমন অভিযোগ করছেন বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে নির্ধারিত দামের চেয়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি দামে চামড়া কিনছেন ব্যবসায়ীরা।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে এ তথ্য জানায় রাজশাহী জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি আসাদুজ্জামান মাসুদ বলেন, সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে চামড়া কিনছেন ব্যবসায়ীরা। এতে করে তাদের আর্থিক ভাবে লোকসান হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তার পরেও ব্যবসার খাতিরে তারা বেশি দামে কিনছেন চামড়া।
তিনি আরো বলেন, চামড়ার দামের চেয়ে খরচ বেশি হচ্ছে। এতে করে ব্যবসায়ীদের লোকসানের সম্ভাবনা রয়েছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কারণে অনেকটাই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে চামড়া।
অন্যদিকে চামড়া বেচে টাকা খালাশ এমন দশা হয়েছে বলছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, এখনো বোঝা যাচ্ছেনা চামড়ার দাম সমন্ধে।
চামড়া ব্যবাসায়ী আবদুর সালাম সিল্কসিটিনিউজকে বলেন, ৫৭টি গরুর চামড়া কিনেছিলেন ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে। ব্যবসায়ীরা তেমন দাম বলছেনা। এছাড়া তিনি ৫৭টি খাসি ও বোকরি চামরা কিনেছেন। সেই চামড়াগুলো ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে প্রতিটি।
রাজশাহীর চামড়া ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, একটি গরুর চামড়া সাধারণত প্রায় ২৪ ফুট হয়ে থাকে। নির্ধারিত দাম অনুযায়ী ২৪ ফুটে একটি গরুর চামড়া ৩৫ টাকা দরে ৮৪০ টাকা। এতে বিভিন্ন খরচ রয়েছে ২৬৫ টাকা। খাশি-বকরির চামড়া সাড়ে চার ফুট/সাড়ে তিন ফুট হয়ে থাকে। এতে খাশি ৮১ ও বকরি ৪২ টাকা। এর বিভিন্ন খরচ পড়বে প্রায় ৩৮ টাকা।
এবার ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম হবে ৪৫-৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫-৪০ টাকা। এছাড়া প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম সারা দেশে ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত বছর ছিল ২০ থেকে ২২ টাকা। আর বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ থেকে ১৫ টাকা। যা গতবছর ছিল ১৫ থেকে ১৭ টাকা।
যদি চামড়ার দামের এই হাল হয়। তাহলে একটি গরুর চামড়া রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা কত দামে কিনবে? আর বিক্রি করবেন বা কত দামে? এমন প্রশ্ন তুলেছে রাজশাহীর চামড়া ব্যবসায়ীরা। চামড়া ব্যবসায়ীরা জানায়, তাদের বিভিন্ন খরচের বিষয়ে। একটি গরুর চামড়া গড়ে ২৪ ফুট হয়। ঢাকার বাইরে সরকারের বেধে দেয়া ৩৫ টাকা ফুট দরে একটি গরুর চামড়া দাম পড়ছে ৮৪০ টাকা।
খরচের খাতা দেখলে অর্ধেকে নেমে আসছে চামড়ার দাম। একটা গরুর চামড়ায় ১২ কেজি লবণ লাগে। যার দাম ১৫০ টাকা। প্রতি চামড়ায় শ্রমিক খরচ (মাঠে থেকে তুলে আড়তে আনা) ১০ টাকা, পরিবহন খরচ ১০ টাকা (আগে ও পরে), ৩৫ টাকা আড়ৎদারি, ১০ টাকা (নাটোর আড়তে) যাচাইবাছাই, নাটোর আড়তে শ্রমিক খরচ ১০ টাকা, কুলি ও খাজনা দিয়ে ১০ টাকা, লবণজাত করে নাটোর নিতে পরিবহণ খরচ ১৫ টাকা, চামড়া কিনে কোনো স্থানে রাখার খরচ বাবদ ৫ টাকা মিলে ২৬৫ টাকা খরচ হয় একটি চামড়ায়। তাহলে নির্ধারিত দাম ৮৫০ টাকার মধ্যে খরচ ২৬৫ টাকা বাদ দিলে ৪০৫ টাকা থাকে। আবার ১০০টি চামড়ার মধ্যে যাচাই-বাছাইয়ে বাদ যাবে, ৩০টি চামড়া টেকে। তাহলে ৭০টি চামড়ার সরকার নির্ধারিত দাম পাবে ব্যবসায়ীরা।
অন্যদিকে চামড়া বিক্রির হিসেব কষলে দাম উঠছেনা খাশি ও বকরিতে। নির্ধারিত দামে চামড়া কেনা-বেচা করলে খাসিতে থাকবে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। আর বকরিতে গায়ে গায়ে শোধ। একটি খাসির চামড়া স্কয়ারে সাড়ে ৪ ফুট। সাধারণত ১৮ ফুট হলে দাম পড়বে ৮১ টাকা। বকরির চামড়া ১২ টাকা ফুট। স্কয়ারে প্রায় সাড়ে ৩ ফুট হলে দাম পড়বে ৪২ টাকা।
এতো গেলে দামের ফাঁরাক। খরচায় এসে দেখা যায় প্রতি চামড়ায় শ্রমিক খরচ ১২ টাকা, লবণ (১ কেজি) ১২ টাকা, পরিবহন খরচ এক টাকা, আড়ৎদারি ছয় টাকা। দুই টাকা (নাটোর আড়তে) যাচাই-বাচাই, রাজশাহী থেকে নাটোর আড়তে নিয়ে যাওয়া পরিবহন খরচ দুই টাকা। এছাড়া গোডাউনে খরচ তিন টাকা ও চামড়া কাটা ছেড়া বাবদ দুইটা কম। সবমিলে প্রতিটি খাশি-বকরির চামড়ায় ব্যবসায়ীর খরচ হবে ৩৮ টাকা।
রাজশাহী জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি আসাদুজ্জামান মাসুদ বলেন, চামড়ার বাজার খারাপ। এবছর চামড়ায় খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি এমন দশা হয়েছে। এটার হকদার হলো প্রতিবেশী ফকির-মিসকিন, গরিব আত্মীয়-স্বজন ও মাদরাসাপড়ুয়া বাবা-মা হারা এতিমরা। গরিবদের দিকে তাকিয়ে চামড়ার দাম আবার নির্ধারণ করা দরকার বলে তিনি দাবি জানান।