আভা ডেস্ক : রাজধানীর মোহাম্মদপুর সংলগ্ন নবীনগর হাউসিংয়ের ১১ নম্বর রোডের ৪১/এ বাড়িতে একদল সন্ত্রাসী অতর্কিত হামলা চালিয়েছে অভিযোগ করেছেন ভাড়াটিয়ারা। এসময় মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা একটি শিশুর গলায় ছুরি ঠেকিয়ে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে।
সন্ত্রাসীদের বাধা দেয়ায় বাড়িটির বেশকয়েকজন ভাড়াটিয়াকে মারধরেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় রোববার দুপুরে মোহাম্মদপুর থানায় ভাড়াটিয়ারা পৃথকভাবে দুটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অতর্কিত এ হামলার পর থেকে বাড়িটির ভাড়াটিয়ারা আতঙ্কের মধ্যে আছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে ৩০/৪০ দল অজ্ঞাত সন্ত্রাসী মুখে কাপড় বেঁধে নবীনগরের ওই বাড়িটিতে হামলা চালায়। এসময় সন্ত্রাসীরা কয়েকটি শিশু গলায় ছুরি ধরে অস্ত্রের মুখে তাদের বাড়ি থেকে ভাড়াটিয়াদের বের করে দেয়ার চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে বাড়ির মালিক হাজী সোলায়মান হামলার খবর পেলে মোহাম্মদপুর থানায় বিষয়টি অবহিত করেন। এরপর রাত সাড়ে চারটার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
বাড়ির ভাড়াটিয়া লিটন ও বেলাল মোহাম্মদপুর থানায় দায়েরকৃত লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, বাড়ির মালিক হাজী সোলায়মানের সঙ্গে স্থানীয় মহিউদ্দীন, নসু ও আলমগীরের বিগত ছয় মাস ধরে বাড়িটির জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল।
শনিবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে বাড়িটি দখলের উদ্দেশ্যে উপরে উল্লেখিতরা ৩৫/৪০ জন অজ্ঞাত সন্ত্রাসী নিয়ে হামলা চালায়। এসময় আক্রমণকারীরা বাড়ির জিনিসপত্র ভাঙচুর ও হুমকি-ধামকি দেয়।
বাসার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাইরে ফেলে দেয়। ভাড়াটিয়ারা স্বর্নের দুল-চেইন, মোবাইল ফোন, সেলাই মেশিন, টেলিভিশন নগদ অর্থ লুটের অভিযোগ করেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ব্যবসায়ী হাজী সোলায়মান ২০০৯ সালে নবীনগর হাউসিংয়ে ১১ নম্বর রোডে প্রায় সোয়া আট শতাংশের এই জমিটি কেনেন। বর্তমানে সেখানে সেমি পাকা নয় রুমের একটি টিনশেড বাড়ি আছে। এখানে প্রায় ৭টি পরিবার ভাড়ায় বসবাস করছে। বিগত ছয় মাস ধরে বাড়িটির কিছু অংশ নিজের বলে দাবি করছে স্থানীয় মহীউদ্দিন গং।
এদিকে জমি দখলকে কেন্দ্র করে জীবননাশের হুমকির অভিযোগ এনে বাড়ির মালিক হাজী সোলায়মান এক মাস আগে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মহীউদ্দীন, নসু ও আলমগীরসহ আরো কয়েকজনকে বিবাদী করে মামলা করেন (মামলা নং ২৭২)। মোহাম্মদপুর থানায় এ বিষয়ে বেশ কয়েকবার শালিসের চেষ্টাও করা হয়েছে।
বাড়ির মালিক হাজী সোলায়মান বলেন, ‘আমার জায়গাটি নিয়ে বিগত কয়েক মাস ধরে ঝামেলা চলছে। আমাকে বিভিন্নভাবে মোবাইলে হুমকি দেয়া হচ্ছিল। পরে আমি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে একটি মামলা করেছিলাম। সেই মামলায় আসামিরা গত ৪ জুলাই হাজিরা দিয়ে এসেছে। গত শনিবার তারা আমাকে আক্রমণ ও বাড়ি দখল করার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। পরে আমি খবর পেয়ে ৯৯৯ ফোন করে সহযোগিতা চাই। রাতেই মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ এসে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে। এদিকে পুলিশের খবর পেয়ে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মহিউদ্দীন বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। হামলায় আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। তিনি পাল্টা অভিযোগে করে বলেন, জমিটি আমার কিন্তু সোলায়মান হাজী সেটি দখল করে আছেন।’ এদিকে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নসু মিঞা নিজেও।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামাল উদ্দীন মীর বলেন, ‘নবীনগর হাউজিংয়ের একটি বাড়িতে হামলার ঘটনা শুনেছি। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। এ বিষয়ে আমাকে কোন পক্ষই অভিযোগ জানায়নি। নবীনগরে মূলত একই জমির মালিকানা দুই ব্যক্তি দাবি করছে। সেখান থেকেই বিরোধের সৃষ্টি। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে রয়েছে।’
যুগান্তর