আভা ডেস্ক : বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিলুপ্ত হওয়া ১৬ ধারায় দেশের থানাগুলোয় মামলা না করতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিভিন্ন থানায় ওই ধারার মামলার কয়েকজন আসামির আগাম জামিন আবেদনের শুনানিতে সোমবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এ আদালতে সংশ্লিষ্ট সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. ইউসুফ মাহমুদ মোরসেদ আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬ ধারা ২৭ বছর আগেই বাতিল হয়েছে। কিন্তু ‘ভুলবশত’ দেশের বিভিন্ন থানায় এখনও ওই ধারায় মামলা করা হচ্ছে।
মো. ইউসুফ মাহমুদ বলেন, আইনের ওই ধারার কোনো অস্তিত্বই নেই, তাই ওই ধারায় মামলা করাটা বেআইনি। তাই আদালত ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬ ধারায় মামলা না করতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পুলিশ প্রধানকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এ আইন কর্মকর্তা বলেন, বিলুপ্ত ১৬ ধারায় ‘প্রিজুডিস’, অর্থাৎ অপরাধ সংঘটনের আগে গোপন শলাপরামর্শ, ষড়যন্ত্রের মতো বিষয়ের কথা বলা ছিল। বিলুপ্ত ওই ধারায় মামলা হলে অপরাধ করেও অনেক অপরাধী পার পেয়ে যাচ্ছে। আবার অপরাধ না করেও অনেককে কারাগারে কাটাতে হচ্ছে।
বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬(১)-এ বলা ছিল, কোনো ব্যক্তি ক্ষতিকর কোনো কাজ করতে পারবে না। আর ১৬(২) ধারায় বলা ছিল, কোনো ব্যক্তি ক্ষতিকর কোনো কাজ করলে ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আশুলিয়ায় পোশাক শ্রমিকদের একটি অংশ ১৫ হাজার টাকার ন্যূনতম বেতন নির্ধারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করলে বিজিএমইএ ৫৫টি কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয়। পরে ১৯ ডিসেম্বর ‘ষড়যন্ত্র’ বা ‘অপরাধ সংঘটনের চক্রান্তের’ অভিযোগ এনে আশুলিয়ার পুলিশ ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিলুপ্ত ১৬(২) ধারায় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ১৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে।
ওই ঘটনায় সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের তৎকালীন দফতর সম্পাদক খালেকুজ্জামান লিপন তাদের অঙ্গসংগঠন গার্মেন্ট শ্রমিক ফ্রন্টের সাভার-আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল থানার সাধারণ সম্পাদক আহমেদ জীবনকে গ্রেফতারের বৈধতা চালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।
ওই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ১৭ জানুয়ারি বিচারপতি সৈয়দ রিফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. সেলিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি রুল জারি করেন। পুলিশের গ্রেফতারের আদেশকে কেন আইনি এখতিয়ারবহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে। সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোরসেদ বলেন, ১৯৯০ সালে তখনকার সরকারপ্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ একটি অধ্যাদেশ দিয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬, ১৭ ও ১৮ ধারা বাতিল করেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর সংসদে আইনের ওই সংশোধনী পাস করা হয়। এরপর ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার মধ্যে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ‘ক্ষতিকর ও ধ্বংসাত্মক’ কাজ থেকে বিরত রাখার যুক্তি দেখিয়ে ওই আইনের ১৬ ধারাটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়।
২০০৮ সালের নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ওই অধ্যাদেশসহ ১২২টি অধ্যাদেশ সংসদের প্রথম অধিবেশনে পাসের জন্য উপস্থাপন করা হলেও ১৬ ধারা পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়টি সংসদের অনুমোদন পায়নি। ফলে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬, ১৭ ও ১৮ ধারা বাতিল অবস্থায়ই থেকে যায়।
যুগান্তর