আভা ডেস্কঃ কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার শিলখুড়ি ইউনিয়নে পুলিশের হাতে গাঁজাসহ আটক মোজাফফর (৩০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। নিহত যুবক উপজেলার উত্তর ছাটগোপালপুর গ্রামের আবদুল ওয়াবের পুত্র।
ঘটনাটি স্বাভাবিক মৃত্যু নাকি অস্বাসাভাবিক মৃত্যু; এ নিয়ে অভিযোগ ওঠায় পুলিশ সুপার ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছেন।
নিহত মোজাফফর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালাত। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পরলে অটোচালকরা সমবেত হয়ে দুপুর ২টার দিকে ঢলডাঙ্গা এলাকায় বিক্ষোভ-সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে।
এ সময় অটোচালক আমজাদের পুত্র ইউসুফ ও নিহতের বড় ভাই আবদুর রউফ দাবি করেন, পুলিশের অবহেলায় মোজাফফরকে জীবন দিতে হল। মোজাফফর শ্বাসকষ্টসহ যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হলেও পুলিশ তা আমলে নেয়নি। শুধু তাই নয়, থানায় অসুস্থ্য হয়ে পরলে তাকে ভুরুঙ্গামারী হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে ডাক্তারের পরামর্শ উপেক্ষা করে মাত্র ১৫ মিনিট প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আবার থানায় নিয়ে আসা হয়।
তিনি জানান, দ্বিতীয় দফায় থানায় অসুস্থ হয়ে পরলে তাকে রাত সাড়ে ১২টায় আবারো ভুরুঙ্গামারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক মোজাফফরকে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেয়া হলেও পুলিশ কুড়িগ্রামে হসপিটালে ভর্তি করে ভোররাত সাড়ে ৪টায়। তারা এ ঘটনার বিচার দাবি করেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান জানান, তিনি ঘটনাটি জেনেছেন। নিহতের ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের কোনো দায়বদ্ধতা আছে কিনা তা তদন্তে ৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নিহত মোজাফফরের শ্বশুর ইছব আলী ও শ্যালক সোহেল রানা সোমবার দুপুরে জানান, আমরা রাতে তার আটকের খবর শুনি। পরে তার মৃত্যুর খবর পেয়ে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে দেখতে এসেছি। কীভাবে কী ঘটেছে তা আমাদের জানা নেই।
ভুরুঙ্গামারী থানার এসআই আউয়াল জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার সন্ধ্যায় আমিসহ একদল টহল পুলিশ উপজেলার শিলখুড়ি ইউনিয়নের ঢলডাঙ্গা ঝালবাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করি। এ সময় পুলিশ সন্দেহজনক একটি অটোরিকশা থামাতে বললে রিকশার ভিতর থেকে একজন যাত্রী ছুটে পালিয়ে যায়। পরে অটোরিকশাচালক মোজাফফরকে আটক করে পুলিশ।
তার দেয়া তথ্য মতে সিটের নিচে সাড়ে ৩ কেজি গাঁজাসহ তাকে রাত ৮টার দিকে থানায় নিয়ে আসা হয়। থানায় আসার পর সে অসুস্থ হয়ে পরলে তাকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ভুরুঙ্গামারী হাসপাতাল কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাত সাড়ে ৩টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ভুরুঙ্গামারী হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সিরাজুল ইসলাম জানান, পুলিশ রাত সাড়ে ১১টায় মোজাফফর নামে এক যুবককে হাসপাতালে ভর্তি করে। সে মারাত্মক শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিল। এ ছাড়াও যক্ষ্মাসহ অন্যান্য রোগে ভুগছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পনেরো মিনিট পরই পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে যায়। রাত সাড়ে ১২টায় আবারো গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। আমরা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার জন্য পরামর্শ দেই।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রেদওয়ান ফেরদৌস সজীব জানান, তাকে মৃত অবস্থায় রাত সাড়ে ৪টায় হাসপাতালে নিয়ে আসে ভুরুঙ্গামারী থানা পুলিশ।
এ ব্যাপারে ভুরুঙ্গামারী থানার ওসি ইমতিয়াজ কবির জানান, আটককৃত যুবক এলাকার চিহ্নিত মাদকসেবী এবং মাদক পাচারকারী। এ ছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে তিনি শ্বাসকষ্ট ও যক্ষ্মারোগে ভুগছিল। আটকের পর থেকে সে অসুস্থতা রোধ করছিল। আমরা তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়েছি। এ ব্যাপারে পুলিশের কোনো অবহেলা বা গাফিলতি ছিল না।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদ্য পুলিশ সুপার পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মেনহাজুল আলম জানান, তিনি সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় নিহতের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছেন। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে সবাই নিশ্চিত করছেন নিহত মোজাফফর যক্ষ্মা ও শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত ছিলেন।