নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহীতে পুকুর খননের কারণে আবাদি জমি কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খননের জন্য ধানের যে জমি কমেছে তার এক তৃতীয়াংশ জমি অনাবাদি হয়ে পরিত্যাক্ত জমিতে পরিণত হয়েছে। গত ১০ বছরে বােরাে ধানের জমি কমতে কমতে অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চল এক সময় বােরাে ধানের জন্য বিখ্যাত হলেও, এখন সেই খ্যাতি আর নেই। এতে প্রতিবছর খাদ্য খাটতি, খাদ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি লেগেই থাকছে। কিন্তু তারপরও রাজশাহীতে ফসলি জমি বা বােরাে ধানের জমিতে পুকুর খনন বন্ধ করতে পারছেনা প্রশাসন। বর্তমানে রাজশাহীর খালে বিলে যেদিকে চোখ যায় শুধু বোরো জমিতে দেখা মেলে পুকুর আর পুকুর। এখন বোরো জমি বাদেও তিন ফসলি ও বিভিন্ন ফলদ বাগান ধ্বংস করে তা পুকুরে পরিণত করা হচ্ছে। ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাচ্ছে। যদিও পুকুর খনন বন্ধে আইন নেই। যার কারণে গত দশ বছর ধরে বরেন্দ্র অঞ্চলে চলছে পুকুর খননের হিড়িক। এই পুকুর খননের বিষয়ে জেলা প্রশাসন দুষছেন উপজেলা প্রশাসনকে, আবার উপজেলা প্রশাসন দুষছেন জেলা প্রশাসনকে। জেলা প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে সব ধরনের পুকুর খননের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞাজারী রয়েছে। তারপরও উপজেলা প্রশাসন ইউএনও’র মদদে ও তার উদাসিনতার কারণে কতিপয় ব্যক্তি ফসলী ও বােরাের জমিতে পুকুর খনন করছেন। এ ক্ষেত্রে আবার উপজেলা প্রশাসন, বলছেন থানার সহযােগিতায় পুকুর খনন করা হয়। আর পুকুর খননকারীরা বলছেন, পুকুর খনন করতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। তারপর থানা শেষে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের টাকা দিতে হয়। প্রশাসনের সব দপ্তরে টাকা দেয়ার পর একটি পুকুর খনন শুরু করা যায়।
কৃষি অফিসের হিসাব অনুযায়ী রাজশাহীতে গত ১০ বছরে কমছে ৪৫০০ হেক্টর আবাদি জমি। জানা গেছে, এক সময় রাজশাহীর উত্তরের উপজেলা বাগমারা, দুর্গাপুর, পুঠিয়া, মােহনপুর, তানাের, গোদাগাড়ী, পবায় পুকুর খনন অব্যহত রয়েছে । গত ২মাস ধরে মোহনপুর উপজেলার বিদিরপুর বকপাড়ায় প্রায় ৭০ বিঘা আবাদী জমি ধ্বংস করে পুকুর খনন চলছে। নওহাটা পৌর মেয়র হাফিজের নাম ভাঙ্গিয়ে বিদিরপুর বকপাড়ায় প্রায় ৭০ বিঘা জমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে। এবিষয়ে সরাসরি কথা বলা হয়, পুকুর খননে ভেকু আমদানিকারক (দালাল হিসাবে পরিচিত) পবা উপজেলার তকিপুর গ্রামের কহবতি মন্ডলের ছেলে তরিকুল ইসলামের সাথে। তিনি মােহনপুর উপজেলার বিদিরপুর বক পাড়ায় প্রায় ৭০ বিঘা জমিতে পুকুর খনন করছেন। তিনি বলেন, আমি বিগত দশ বছর থেকে পবা, মােহনপুর এলাকায় পুকুর খনন করে আসছি। বর্তমান মােহনপুরে আমার পুকুর খনন চলছে। তিনি বলেন, একটি পুকুর খনন করতে হলে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে পুকুর খনন শুরু করতে হয়। এপুকুরটি খনন করতে আমি লাখ লাখ টাকা সুবিধা দিয়ে পুকুর খনন করছি। আপনারা জানেন সারা জেলায় পুকুর খনন বন্ধ থাকলেও আমি দিনে ও রাতে সমান তালে পুকুর খনন করে মহাসড়ক ব্যবহার করে মাটি পবা উপজেলায় বেশ কয়েকটি বড় বড় জায়গা ভরাট করছি। সাংবাদিকদের নিউজের কারণে দু’বার মোহনপুর ইউএনও স্যার আমার প্রজেক্টে এসে আমাকে পুকুর খনন বন্ধ করতে বলেছে। স্যার ভাল মানুষ তাই আমার কোন জরিমানা বা ক্ষতি করেনি। তিনি আরো বলেন, টাকা না দিয়ে পুকুর খনন করতে গেলে আসে বিভিন্ন বাঁধা। হয় জরিমানা ও ভেকু মেশিন ভাংচুর সহ ভেকু মেশিনের ব্যাটারী খুলে নেওয়া, তেলের ড্রাম উঠিয়ে নেয়া এসব উদ্ধার করতে অফিসকে দিতে হয় নগদ টাকা। কাকে কত টাকা দিয়ে পুকুর খনন করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন,ওটা গােপনীয় বিষয় বলা যাবে না। একই সাথে তিনি জেলা বা উপজেলা প্রশাসনকে টাকা দেয়ার বিষয়টিও অস্বীকার করেন। অন্যদিকে অপরদিকে ধুরইল ইউনিয়নে কাছিমালা গ্রামে মেম্বার আলমগীর নেতৃত্বে চলছে পুকুর খনন।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষে বলা হচ্ছে কঠোর নিষেধ আরােপ করা হলেও থামছে না পুকুর খনন। জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযােগ দেয়া হলে তারা উপজেলা প্রশাসনকে জানায়। কিন্তু পরে উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি কোনাে ধরনের গুরুত্ব দেয় না। এর কারণে জেলা প্রশাসনের নিদের্শনা থাকে উপেক্ষিত। এমন কি পুকুর খননের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের সাথে কথা বলা হলে তাঁরা বিষয়টি দেখছি, দেখবো এধরণের বক্তব্য দেন। আবার এও বলেন, কোথায় পুকুর খনন করা হচ্ছে আমরা জানি না। এই প্রথম শুনলাম। আপনি পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা দেন আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি। এই হলাে পুকুর খনন বন্ধে প্রশাসনের ভূমিকা!
রাজশাহী কৃষি অফিসের হিসাব অনুযায়ী, গত এক বছরে রাজশাহীতে পুকুর খননের জন্য বােরাের জমি কমেছে ৫শ’ ৯০ হেক্টের। গত বছর বােরাে ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬৬হাজার ৭শ ৩২ হেক্টর। আর চলতি মওসুমে বােরাে ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৬হাজার ৬শ’ ৪০ হেক্টর।
প্রতিবছর ৫শ’ থেকে ৭ হেক্টর জমি পুকুর খননের কারণে কমে যাচ্ছে।
সামনের বছরে বােরাে জমির পরিমান আরাে কমে আসবে বলে মনে করছে কৃষি অফিস। বিশেষ করে পুকুর খনন রােধে কৃষি অফিসের কোনাে কিছু করার ক্ষমা নেই বলে তারা অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে। রাজশাহী অঞ্চলিক কৃষি অফিসার আজাদ আলী জানান, কৃষি জমিতে পুকুর খননের খবর পেলে আমরা উপজেলা প্রশাসনকে জানাই। কিন্তু তাতে কোনাে লাভ হয়না। এমনকি তারা বিষয়টি তদারকিও করে না।
এ দিকে মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানওয়ার হোসেন বলেন, পুকুর খনন বন্ধ আছে, তবে কেউ কেউ এখনো পুকুর খনন করছে। আমরা অভিযান করে পুকুর বন্ধও করেছি। বিষয়টি এখন আপনার নিকট থেকে জানলাম যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কথা বললে মৌগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল আমিন বলেন, আমি বহুবার ইউএনও মহোদয়কে জানিয়েছি কিন্তু তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি।
মোহনপুর থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, পুকুর খননের বিষয়টি দেখবেন ইউএনও সাহেব। আমরা ইনএনও স্যারকে সহযোগিতা করবো। আপনারা বিষয়টি ইউএনও সাহেবকে জানান। এছাড়াও তিনি আরও বলেন, ইতিপূর্বে পুলিশ দুইবার অভিযান করে বন্ধ করেছিলো, তারপরও তারা পুকুর খনন করেই চলছে। বিষয়টি আমরা দেখছি।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি রাজশাহীর পবা উপজেলায় পুকুর খননের সংবাদ প্রকাশ হয়। কিন্তু সংবাদ প্রকাশের কোন তোয়াক্কা না করে এমপির পিএস ও যুবলীগ নেতা এখনো পুকুর খনন চলমান রেখেছে। এদিকে আজ পুকুর খনন বন্ধে পুঠিয়া উপজেলায় মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসি।
সর্বপরি বিষয়ে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, পুকুর খননের বিষয় গুলো উপজেলা প্রশাসনকে দেখতে বলেছি। তারা যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন।
সোম ফেব্রু. ২৮ , ২০২২
বাঘা প্রতিনিধিঃ রাজশাহী সীমান্তে বিজিবি’র অভিযানে ৫০১ বোতল ফেনসিডিলসহ স্থানীয় এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহী জেলার বাঘা থানার হরিরামপুর চরের মধ্য হতে তাকে আটক করা হয়েছে। আটক ব্যক্তির নাম মো. বাবর আলী (৩০)। রাজশাহী জেলার বাঘা থানার কিশরপুর গ্রামের আলাইপুর এলাকার মৃত কিতাব আলীর ছেলে। […]
এই রকম আরও খবর
-
১৪ মার্চ, ২০২৩, ৯:২৮ অপরাহ্ন
-
২২ আগস্ট, ২০২০, ৫:১১ অপরাহ্ন
-
৫ জানুয়ারি, ২০২২, ৮:৫৫ অপরাহ্ন
-
৫ আগস্ট, ২০২০, ১০:০১ অপরাহ্ন
-
৩০ জুলাই, ২০১৯, ৭:৩৫ অপরাহ্ন
-
২০ এপ্রিল, ২০২১, ৪:২১ অপরাহ্ন