আভা ডেস্কঃ সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কর্মসূচি লাঠিচার্জে পণ্ড করে দিয়েছে পুলিশ। এ সময় নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।
এতে জোনায়েদ সাকিসহ ৩৬ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১৪ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত পাঁচ পুলিশ সদস্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। বাকিদেরও প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। ৫ জনকে আটক করা হয়েছে।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে জোটের নেতাকর্মীরা কালো পতাকা মিছিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে যাওয়ার পথে হাইকোর্টের কাছে কদম ফোয়ারা এবং মৎস্য ভবন মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশের হামলার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ডেকেছে গণতান্ত্রিক বাম জোট।
গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে দিনটিকে কালো দিবস হিসেবে পালন করে জোট। আটটি বামদলের এই জোট সোমবার ‘গণতন্ত্রের কালো দিবস’ পালন উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে।
এই জোটে রয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ (মার্কসবাদী), গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন। তাদের কর্মসূচির মধ্যে আরও ছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কালো পতাকা মিছিল নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে রওনা হন জোটের নেতারা। মিছিলটি কদম ফোয়ারার সামনে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যান নেতাকর্মীরা।
বেলা ১টার দিকে মৎস্য ভবনের সামনে আবারও পুলিশি বাধার মুখে পড়েন নেতাকর্মীরা। তারা ব্যারিকেড ভেঙে এগোতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে মিছিল থেকে ইটপাটকেল ছুড়ে মারার অভিযোগ তুলে পুলিশ সদস্যরা নেতাকর্মীদের ওপর শুরু করে ব্যাপক লাঠিচার্জ। তাদের মারধর করে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। এ সময় মৎস্য ভবন মোড় থেকে প্রেস ক্লাবের দিকে যান চলাচল বন্ধ থাকে প্রায় ২০ মিনিট।
ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন গণংসহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, আমাদের কর্মসূচিতে পুলিশ অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এতে আমার মাথা ফেটে গেছে। অনেকে আহত হয়েছেন।
লাঠিচার্জের অভিযোগের বিষয়ে ডিএমপি রমনা জোনের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান বলেন, আমরা তাদের (বাম জোটের নেতাদের) অনুরোধ করেছিলাম যেন সহিংসতা না করে, ব্যারিকেড না ভাঙে। কিন্তু বাম জোটের নেতাকর্মীরা কথা শোনেননি। তারা প্ল্যাকার্ডের সঙ্গে থাকা লাঠি ও বাঁশ দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। এতে আমাদের ৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। তিনি বলেন, পুলিশ অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। পরে তাদের সরিয়ে দেয়া হয়।
এর আগে সকালে প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশে বক্তব্য দেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, বাম গণতান্ত্রিক জোটের নতুন সমন্বয়ক আবদুল্লাহ আল ক্বাফী রতন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশিদ ফিরোজ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন নান্নু প্রমুখ।
এতে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, জনগণ সোনালি দিন রচনা করে, আর শাসকরা ক্ষমতা দখল করার পর কালো দিবস রচনা করে। আমরা বাঙালি জাতির ইতিহাস থেকে এই কালো দিবস রচনার অধ্যায় চিরদিনের জন্য নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাই। তা করতে হলে বর্তমান সরকারকে সরাতে হবে। এই দেশকে বাঁচাতে হলে, এই সরকারের হাত থেকে মুক্ত করতে হবে।
তিনি বলেন, আজকে (গতকাল) কালো দিবস। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের নামে যে ঘটনা ঘটেছিল তা ছিল ভুয়া নির্বাচন। ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার ক্ষমতায় বসে সে সরকারও ভুয়া। তাই ভুয়া নির্বাচন বাতিলের যেমন দাবি তুলেছি, এই ভুয়া সরকারকে সরাতে আমাদের রাজপথে সংগ্রাম করতে হবে।
সেলিম আরও বলেন, শুনলাম আওয়ামী লীগ নাকি গণতন্ত্র রক্ষা দিবস পালন করছে। তারা যে বিশাল কর্মটা করেছিল তা তো ৩০ তারিখে হয়নি, ২৯ তারিখে হয়েছে। আমি নিশ্চিত আওয়ামী লীগের নেতাদের এতটুকু সততা থাকে তাহলে গণতন্ত্র রক্ষা দিবসটা ৩০ তারিখে না, ২৯ তারিখ রাতেই করে ফেলেছে।
যুগান্তর