নন্দীগ্রাম প্রতিনিধিঃ বগুড়ায় মাঠের ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষক। চারিদিকে এখনো ফসলের মাঠ ছেয়ে আছে সোনা রঙে। মাঠে শোভা পাচ্ছে পাকা ধান। কয়েকদিন আগের ভারী বর্ষণ ও ঝড়ো বাতাসে ফসলের ক্ষত এখনো শুকায়নি অনেক জমিতেই। মাটিতে নুয়ে পড়েছে অনেক ক্ষেতের পাকা ধান।
বৃহস্পতিবার (৪ জুন) জেলার কয়েকটি উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, শেষ সময়ে মাঠের ধান ঘরে তুলতে কৃষকের কর্মব্যস্ততা।
দেখা গেছে, কালবৈশাখীর আচমকা ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি থেকে কষ্টের ফসল রক্ষার্থে অতি দ্রুত তা ঘরে তুলতে কৃষাণ-কৃষাণীর তোড়জোড়।
এ বছর বোরো মৌসুমে ধান কাটা-মাড়াইয়ের শুরুতেই দেখা দিয়েছিল শ্রমিক সংকট। করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণরোধে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় শ্রমিক সংকটে পড়তে হয় এ জেলার কৃষকদের। কেননা প্রতিবছর গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর জেলা থেকে আসা মৌসুমি শ্রমিকরা এ জেলায় ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ করলেও এবছর বোরো মৌসুমে পরিবহন বন্ধ থাকায় ঘটেছে তার ব্যতিক্রম।
বর্তমান সময়ের অনেক আগেই এ জেলায় বোরো মৌসুমের ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার সংক্রমণরোধে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত শ্রমিক না থাকায় ধীরগতিতে চলে ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ। এ কারণে কিছু কৃষক সঠিক সময়ে মাঠের ধান ঘরে তুলতে পারেননি। আর তাই এখন শেষ সময়ে চলছে কৃষকের কর্মব্যস্ততা ও ফসল ঘরে তোলার তোড়জোড়।
এদিকে মাঝেমধ্যেই দেখা যাচ্ছে মেঘের আনাগোনা। প্রকৃতির এমন খামখেয়ালিপনায় কৃষকের মনে যেন একবিন্দুও স্বস্তি নেই। ঝড়-বৃষ্টি আর কালবৈশাখীর ছোবল থেকে ক্ষেতের ফসল ঘরে তোলা নিয়ে কৃষকরা শঙ্কিত। অনেকটা আতঙ্ক নিয়েই ধান কাটতে মাঠে ব্যস্ত কৃষকরা। ধান গাছে বিরামহীন কাস্তের ফ্যাঁস চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। কৃষাণীরা সেই ধান মাড়াইয়ে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন।
নন্দীগ্রাম এলাকার কৃষকরা জানান্, এবছর বোরো মৌসুমরে ধান ঘরে তুলতে শুরু থেকেই বিপাকে পড়তে হয়েছে তাদের। করোনার কারণে পর্যাপ্ত শ্রমিক না পাওয়ায় ধীরগতিতে চলে ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ।
তারা বলেন, একদিকে করোনার প্রভাবে শ্রমিক সংকটে কষ্টের ফসল সঠিক সময়ে না কাটতে পারায় ঘরে তুলতে পারেননি তারা। এর মধ্যে কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় আম্পারের ফলে ঝড়ো বাতাস ও টানা বৃষ্টিতে মাঠের অনেক ফসল মাটিতে হেলে পড়ে এবং জমিতে পানি জমে যায়। এতে তা কাটতে আরও বেশি সময় লেগেছে তাদের।
বর্তমানে আবহাওয়ার ওপর বিশ্বাস রাখতে পারছেন না তারা। ইতোমধ্যেই তাদের বেশ ক্ষতি হয়েছে। একদিকে মাঝেমধ্যে শুরু হয় কালবৈশাখী ঝড়। এমন অবস্থায় তারা আর ঝুঁকি নিতে চান না। তাই যত কষ্টই হোক না কেন খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ধান কেটে মাড়াইয়ের কাজ শেষ করে ফসল ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন তারা।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ফরিদুর রহমান জানান, এবছর চলতি মৌসুমে জেলায় মোট ১ লাখ ৮৮ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়। বোরো মৌসুমে এবছর ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টিতে কিছু জমির ধান হেলে পড়লেও ক্ষতির পরিমাণ কম।
তার তথ্য মতে, বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে জেলায় মোট ৯৪১ হেক্টর জমির সবজিতে ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে জেলার শেরপুর, নন্দীগ্রাম, কাহালু, শিবগঞ্জ, শাজাহানপুর, সদর উপজেলাসহ জেলায় মোট ৯১ শতাংশ জমির ধান কাটা-মাড়াই শেষ হয়েছে। বর্তমানে বাকি দু’একটি উপজেলায় শেষ ধাপে চলছে বাকি ৯ শতাংশ ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ। আগামী দু’এক সপ্তাহের মধ্যেই জেলার সম্পূর্ণ বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ শেষ হবে।