Ava Desk : রেকর্ড গড়াই হয় ভাঙার নিমিত্তে। তবে কয়েক ম্যাচের ব্যবধানে একগাদা রেকর্ড ভাঙার ঘটনা খুব কমই দেখা যায়। কিছুদিন আগে সমাপ্ত পাকিস্তান–জিম্বাবুয়ে সিরিজে সেই চমক দেখিয়েছেন খেলোয়াড়েরা। বলতে গেলে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপই রেকর্ড বইয়ে যুক্ত করেছে গাদাখানেক রেকর্ড। ফখর জামান, তরুণ ইমাম উল হকরা রানের বন্যার পাশাপাশি রেকর্ডের বন্যাও বইয়ে দিয়েছেন। জিম্বাবুয়েকে হোয়াইট ওয়াশের পাশাপাশি নিজেদের ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারের খাতাটাও ভারি করেছেন পাকিস্তান খেলোয়াড়েরা। চলুন দেখে আসা যাক, এই সিরিজে পাওয়া রেকর্ড বইয়ের খোলনলচে পাল্টে দেওয়া কিছু রেকর্ড।
১. মাত্র ১৮ ম্যাচেই ওয়ানডেতে ১,০০০ রানের মাইলফলকে পৌঁছালেন ফখর জামান। এই রেকর্ড গড়ার ক্ষেত্রে তিনি পেছনে ফেলেন কিংবদন্তী ভিভ রিচার্ডসকে। স্যার ভিভ রিচার্ডসের প্রয়োজন পড়েছিলো ২১ ম্যাচ। অবশ্য ২১ ম্যাচে ১,০০০ রানের মাইলফলকে পৌঁছেছিলেন আরো চারজন। কেভিন পিটারসেন, জোনাথন ট্রট, কুইন্টন ডি কক এবং ফখর জামানের স্বদেশী বাবর আজম। তবে মাত্র ১৮ ম্যাচেই ১,০৬৫ রান করে বিশ্বকে চমকে দিয়েছেন ২৮ বছর বয়সী এই পাকিস্তানী। ১৮ ইনিংসে ১০০ এর উপর স্ট্রাইক রেটে প্রায় ৭২ গড়ে এই রান সংগ্রহ করেন তিনি। ৬টি অর্ধশতকের পাশাপাশি ৩টি শতকও হাঁকান এই ওপেনার। সাথে রয়েছে একটি দ্বিশতকও।
ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছেন ফখর জামান
২. ৬ষ্ঠ ব্যাটসম্যান ও প্রথম পাকিস্তানী হিসেবে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি করেন ফখর জামান। তবে ইনিংসের দৈর্ঘ্যে ফখরের দ্বি-শতক সবচেয়ে দ্রুততম। মাত্র ১৭তম ইনিংসে দ্বি-শতকের দেখা পান ফখর। তার আগে রোহিত শর্মা ও মার্টিন গাপটিল দুজনেরই লেগেছিলো ১০৩ ইনিংস।
৩. একদিনের ম্যাচের ক্যারিয়ারে মাত্র ৯ নাম্বার ম্যাচে এসেই ৪টি শতকের দেখা পেয়ে যান ইমাম উল হক। সাবেক পাকিস্তানী অধিনায়ক ও ব্যাটসম্যান ইনজামাম উল হকের ভাতিজা ইমামের আগে মাত্র ৯ ম্যাচে চারটি শতক হাঁকাতে পারেননি কেউই। কেভিন পিটারসেন ও ড্যানিশ এমিস ক্যারিয়ারের প্রথম ৯ ম্যাচে পেয়েছিলেন ৩টি করে শতক।
সিরিজে তিনটি শতক হাঁকান ইমাম উল হক
৪. প্রথম উইকেটের পার্টনারশিপে প্রথমবারের মতো তিনশো রান পেরোলো কোনো জুটি। ২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়াসুরিয়া আর থারাঙ্গার ২৮৬ রানের জুটির রেকর্ড ভেঙে ইমাম উল হক আর ফখর জামান করেন ৩০৪ রানের পার্টনারশিপ।
৫. পাকিস্তানের সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ড ভেঙে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে ১ উইকেটের বিনিময়ে ৩৯৯ রান তোলে সরফরাজ আহমেদের দল। এর আগে ডাম্বুলায় বাংলাদেশের বিপক্ষে ৭ উইকেটে ৩৮৫ রানই ছিলো পাকিস্তানের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
৬. ১ উইকেট হারিয়ে সর্বোচ্চ রানের সংগ্রহের দিক দিয়ে প্রতিবেশি দেশ ভারতকে পেছনে ফেলে সরফরাজ আহমেদের দল। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রান তাড়া করতে নেমে ভারত ১ উইকেটে তুলেছিলো ৩৬২ রান। সেই রানকে পেছনে ফেলে ফখর, ইমাম উল হক আর আসিফ আলী মিলে তুলে নেন ৩৯৯ রান।
৭. পাকিস্তানের ইতিহাসে একদিনের ম্যাচে সর্বোচ্চ রান তুলে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান ফখর জামান। কিংবদন্তী সাঈদ আনোয়ারের ১৯৪ রানের আগের রেকর্ড ভাঙার পাশাপাশি পাকিস্তানের লিস্ট এ ম্যাচের রেকর্ড ২০৯ রানকেও টপকে যান ফখর। ম্যাচ শেষে অপরাজিত থাকেন ২১০ রানে। আন্তর্জাতিক একদিনের ক্রিকেটে প্রথম পাকিস্তানী হিসেবে দুশো রান টপকান তিনি।
বল হাতেও ভালো করেছেন পাকিস্তানী বোলাররা
৮. প্রথম ম্যাচে ৬০ রানে আউট হওয়ার পর সিরিজে ফখর জামান দ্বিতীয়বারের মতো আউট হন শেষ ম্যাচে ৮৫ রান করে। মাঝখানে করেন ৪৫৫ রান। দুই আউটের মাঝে সবচেয়ে বেশি রান যোগ করার কীর্তিতে পিছনে ফেলেন তারই স্বদেশী মোহাম্মদ ইউসুফকে। মোহাম্মদ ইউসুফ করেছিলেন ৪০৫ রান।
৯. ৫ ম্যাচের দ্বিপাক্ষিক সিরিজে সবচেয়ে বেশি রান করার কীর্তি গড়েন ফখর জামান। ৫ ম্যাচের সিরিজে তিনি করেন যথাক্রমে ৬০, অপরাজিত ১১৭, অপরাজিত ৪৩, অপরাজিত ২১০ এবং ৮৫ রান। ভাঙেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজার রেকর্ড। জিম্বাবুয়ের বর্তমান এই অধিনায়ক কেনিয়ার বিপক্ষে ৫ ম্যাচের দ্বিপাক্ষিক সিরিজে করেছিলেন ৪৬৭ রান। মাসাকাদজার বিপক্ষেই তার রেকর্ডকে পেছনে ফেলেন ফখর জামান। প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫ ম্যাচের সিরিজে ৫০০ এর উপর রান করার কীর্তি গড়েন এই বামহাতী ব্যাটসম্যান। যদিও সব মিলিয়ে রেকর্ডটা বিরাট কোহলির। এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে ৬ ম্যাচের সিরিজে বিরাট কোহলি করেন ৫৫৮ রান।
উইকেটের পর সরফরাজের উল্লাস
১০. ১১৩, ১১৯, ০, ৩০৪ এবং ১৬৮- পাঁচ ম্যাচে এই ছিলো ইমাম উল হক এবং ফখর জামানের পার্টনারশিপ। মোট ৭০৪ রান তুলেন দুজন একসাথে ক্রিজে থেকে। এর আগের রেকর্ডটিও ছিলো পাকিস্তানীদের হাতেই। ২০০৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইয়াসির হামিদ ও ইমরান ফারহাত জুটি মিলে করেছিলেন ৫৯০ রান।
১১. ৫ ম্যাচের সিরিজে ইমাম উল হক আর ফখর জামান করেছেন রেকর্ড সংখ্যক চারটি শতক পার্টনারশিপ। যদিও অন্য আরেকটি ম্যাচে কোনো রানই যোগ করতে পারেনি এই জুটি।
১২. ৯ ম্যাচে ৪ শতক পাওয়া ইমাম উল হকের ওডিআই ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত কোনো অর্ধশতক নেই। প্রথম চারটি অর্ধ শতককেই সেঞ্চুরিতে রুপান্তর করেন এই তরুণ। অভিষেকেই সেঞ্চুরি পাওয়া ইমাম উল হক এই সিরিজে তুলে নেন আরো তিনটি সেঞ্চুরি।
১৩. পাকিস্তানীদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ডটি নিজের করে নেন ফখর জামান। ৫১৫ রান করে ফখর পেছনে ফেলেন সালমান বাটকে। বাংলাদেশের বিপক্ষে এক সিরিজে সালমান বাটের করা ৪৫১ রানই ছিলো এতদিন প্রথমে। সেই রান এবার টপকে যান ফখর জামান।
বল হাতে আলো ছড়িয়েছেন ফাহিম আশরাফ
১৪. দ্বিতীয় ম্যাচেই ক্যারিয়ার প্রথম অর্ধশতক তুলে নেন আসিফ আলী। প্রথম অর্ধশতক তুলে নিতে তাকে মোকাবিলা করতে হয় মাত্র ২২টি বল। যদিও রেকর্ডটি এখনো ধরে রেখেছেন তারই স্বদেশী শহীদ আফ্রিদি। ২২ বলে একদিনের ক্যারিয়ারে প্রথম অর্ধশতক তুলে নেন মোহাম্মদ আমিরও।
১৫. ৭৪৬ রান। পুরা সিরিজে জিম্বাবুয়ের মোট দলীয় সংগ্রহ এটি। অন্যদিকে পাকিস্তানি ওপেনার ইমাম উল হক আর ফখর জামান দুজনে মিলে সিরিজ জুড়ে করেছেন ৯১০ রান।
১৬. পুরো সিরিজে ফখর জামান আর ইমাম উল হক বাদে পাকিস্তানের বাকি ব্যাটসম্যানরা খেলার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ৩৫৬ বল। ওপেনার বাদে একদিনের ক্রিকেটে কোনো সিরিজে দলের বাকি ব্যাটসম্যানদের এত কম বল মোকাবিলা করতে হয়নি।
২টি টি টুয়েন্টি ম্যাচসহ ওয়ানডের সিরিজের ৫টি ম্যাচই জিতে সিরিজ জয় করে পাকিস্তান। তবে প্রতিটি ম্যাচ দাপটের সাথে জিতে পুরনো পাকিস্তানের প্রত্যাবর্তনের আগাম জানান দিয়ে রাখে তরুণ প্লেয়ারদের নিয়ে গড়া এই নতুন পাকিস্তান। ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে টালমাটাল পাকিস্তান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের মাটিতে একপ্রকার একঘরেই হয়ে আছে। সেই সাথে দলীয় পারফরম্যান্সের গ্রাফও ছিলো পড়তির দিকে। তবে গত বছর সরফরাজ আহমেদের নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তার দল। ফখর জামান, ইমাম উল হক আসিফ আলী, হাসান আলী দের নৈপুণ্যে বিশ্ব ক্রিকেটে আবার উঠে দাঁড়িয়েছে পাক বাহিনী। সেই আগুনের দেখা মিললো ফখর জামান আর ইমাম উল হকের ব্যাট জুড়ে।