আভা ডেস্কঃ উজানের ঢলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চার নদী পদ্মা, মহানন্দা, পাগলা ও পূর্ণভবায় প্রতিদিনই বাড়ছে পানি। আগাম অতিরিক্ত পানির প্রভাবে ইতোমধ্যেই ডুবতে শুরু করেছে কয়েক হাজার বিঘা ফসলী জমি। পানির স্রোতে অনিরাপদ হয়ে পড়েছে পদ্মা-মহানন্দা তীরবর্তী জনপদ। সদর উপজেলার দেবিনগর ইউনিয়নের তরপাঘাট এলাকায় মহানন্দা নদীর পাড় ভাঙতে শুরু করেছে বেশ কিছু দিন আগে থেকেই। এছাড়াও মহানন্দা নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে দেবিনগর ও ইসলামপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা। তবে দফায় দফায় জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নদী ভাঙনের স্থানটি পরিদর্শন করলেও নেই কোন কার্যকরী পদক্ষেপ।
স্থানীয়রা জানায়, কয়েকদিনের ভাঙনে ইতোমধ্যে প্রায় দুইশ বিঘা ফসলী জমি বিলীন হয়েছে মহানন্দায়। হুমকির মুখে রয়েছে তরপাঘাট এলাকার বিস্তৃর্ণ ফসলী জমি, বাড়ি, রাস্তাঘাট, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রাম। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে নদীগর্ভে বিলীন হবে কয়েক হাজার পরিবারের আবাসস্থল, ফসলী জমিসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
দেবিনগর ইউনিয়নের বারোরশিয়া গ্রামের তরুণ আমিনুল ইসলাম জানান, সবাই শুধু পরিদর্শনে এসে আশ্বাস আর ভরসা দিয়েছেন। পরিস্থিতি এতো ভয়াবহ, তারপরও এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। জনপ্রতিনিধিরাও এখন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। হাজার হাজার বিঘা ফসলী জমি ও বসতবাড়ি ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। এখনই কোন কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে পথে ইসলামপুর-দেবিনগরের কয়েক হাজার পরিবার।
একই গ্রামের ফয়েজ রিয়াজ বলেন, আমরা দেবিনগরের বাসিন্দারা ভয়ে দিন কাটাচ্ছি, কারণ এলাকায় যেভাবে নদীর তীব্র ভাঙ্গন শুরু হয়েছে, তাতে যেকোনো মুহূর্তে পুরো এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানান তিনি।
দেবিনগর ইউনিয়নের ভাঙ্গন কবলিত এলাকার ৪ নং ওয়ার্ড সদস্য বকুল ইসলাম বলেন, এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভাঙনের বিষয়ে জানিয়েছি। তবে কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে।
ঐতিহ্যবাহী শিক্ষিত জনপদ দেবিনগর ইউনিয়ন পদ্মা-মহানন্দার ভাঙনে হুমকির মুখে বলে জানান সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা নাসির আলি। তিনি আরও বলেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ধুলাউড়ি হাট, দিয়ার কলেজ, ২টি উচ্চ বিদ্যালয়, ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেবিনগর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসহ পুরো এলাকা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাবে।
মঙ্গলবার নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শন শেষে সদর আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ জানান, নদী ভাঙন রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। খুব শীঘ্রই কাজ শুরু করা হবে।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম জানান, তীব্র স্রোত ও অতিরিক্ত পানির কারণে এই মুহূর্তে দীর্ঘস্থায়ী কোন সমাধানের পথে যাওয়া যাবে না। তাই পানি কমলেই নদী ভাঙন রক্ষায় দীর্ঘস্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে এখন ভাঙন রোধে সাময়িক সময়ের জন্য কাজ শুরু হবে খুব দ্রুত। দেবীনগরে ভাঙনের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।