জেলা প্রশাসকের নাম ভাঙিয়ে রাজশাহীর ভদ্রায় চলছে পুকুর ভরাট

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহী মহানগরীর ভদ্রা হজ্বের মোড় এলাকায় ডিসির অনুমোদন নিয়ে চলছে পুকুর ভরাটের কাজ।

রাজশাহী এক সময় পুকুরের নগরী হিসেবে বেশ খ্যাতি ছিল। কিন্তু সে পুকুরগুলো আর নেই একে একে সব পুকুরগুলো ভরাট করে ফেলছেন প্রভাবশালীরা।

তবে গত কয়েক বছরে  নগরীতে পুকুর ভরাট হয়েছে ঝড়ের গতিতে। একযুগে নগরীতে ২ হাজার পুকুর ভরাট করা হয়েছে। এখন অবশিষ্ট আছে মাত্র দেড় শত পুকুর। অভিযোগ রয়েছে, পুকুর সংরক্ষণে তদারকি প্রতিষ্ঠান রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) এবং পরিবেশ অধিদফতরের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে আজ এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

পরিবেশ আইনে পুকুর ভরাট নিষিদ্ধ থাকলেও তা শুধু কাগজে কলমে তা রক্ষায় দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি এ দুটি প্রতিষ্ঠান। এতগুলো পুকুর ভরাট হলেও এর বিপরীতে আরডিএ দপ্তরে  কতটি মামলা হয়েছে বা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন  তার কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দেখাতে পারেনি।

আরডিএ এবং রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের দেয়া তথ্যমতে, ১৯৬১ সালে রাজশাহী নগরীতে ছোট-বড় পুকুর ও জলাশয় ছিল ৪ হাজার ২৮৩টি। আর এখন এ সংখ্যা মাত্র ১৫০টি। বিশেষজ্ঞগণের অভিমত, পুকুরগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে রাজশাহীর পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। আবাহাওয়া হয়ে উঠেছে চরমভাবাপন্ন। শীতের সময় প্রচণ্ড শীত এবং গরমকালে বেশি গরম অনুভব করছেন এখনকার অধিবাসীরা।

যদি অচিরেই এই পুকুর সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয় তাহলে রাজশাহী শিক্ষানগরী না হয়ে গরমের নগরীতে পরিনত হবে।

সুত্র জানায়, হেরিটেজ রাজশাহী নামের একটি সংগঠনের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ১৩ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত রাজশাহী নগরীর সব জলাশয়, পুকুর, ডোবা ও খাল ভরাটের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

এরপরও নগরীতে থেমে থাকেনি প্রভাবশালীদের অবৈধ পুকুর ভরাট। প্রভাবশালীরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য একের পর এক পুকুর ভরাট করে যাচ্ছেন। আর সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তা-ব্যক্তিরা থাকছেন চোখ বন্ধ করে।

হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি জানান, বর্তমানে এক বিঘা বা তার বেশি আয়তনের পুকুর টিকে আছে মাত্র ১০০টি। এগুলোর প্রতিও রয়েছে শ্যেনদৃষ্টি। বিভিন্ন  কৌশলে ভরাটের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালীরা। কিন্তু নিশ্চুপ ভূমিকায় রয়েছে আরডিএ এবং পরিবেশ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্টরা। কোথাও পুকুর ভরাট শুরু হলে সংস্থা দুটি একে অপরের কাঁধে দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে দায় এড়িয়ে যায়। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা পুকুরপাড়ে যাওয়ার আগেই তা ভরাট হয়ে যায়।

যেমন- বর্তমানে নগরীর ভদ্রা হজ্বের মোড় এলাকায় পুকুর ভরাট করছে এমএইউ ছাত্রাবাসের মালিকের ছেলে আবির। এখানে তৈরি করা হবে বহুতল ভবন।

পুকুর ভরাটের বিষয়ে আবিরের কাছে ব্যবহারিত মোবাইল 01701-052007 নাম্বারে ফোন দিলে তিনি বলেন, আমরা ডিসি অফিসের অনুমতি পত্র নিয়ে কাজ করছি আপনি কাগজ দেখতে চাইলে আমার ভদ্রার অফিসে আসেন বলে ফোন কেটে দেন।

বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করলেও এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। এছাড়া নগরীর মেহেরচন্ডী পূর্বপাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মসজিদের পাশে পুকুর ভরাট করছে ভদ্রা এলাকার জহুরুল ইসলাম। এখানেও তৈরি করা হবে বহুতল ভবন। এছাড়াও মেহেরচন্ডী বউ বাজার এলাকায় ভরাট করছে বিশাল আকৃতির জলাশয় দেশে কর্মরত দিলীপ বড়ুয়া।

সভাপতি আরও  বলেন, প্রায় সব পুকুর ভরাট হয়ে যাওয়ায় রাজশাহীবাসী এখন বৈরী আবহাওয়ার কবলে। রাজশাহীকে এখন চরম ভাবাপন্ন গ্রীষ্ম এবং অনাবৃষ্টির অঞ্চল হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। তাই এ ব্যাপারে প্রশাসনকে কঠোর হওয়া দরকার।

এদিকে আরডিএ নগরীর ২০টি পুকুর সংরক্ষণের ঘোষণা দিলেও পুকুরগুলো সংরক্ষণে এখনও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। উল্টো সংস্থা দুটিই বড় বড় পুকুর ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণ করছে।

পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা বলছেন, রাজশাহীতে হাতেগোনা যেসব পুকুর টিকে আছে সেগুলো রক্ষা করতে হলে এখনই সেগুলোকে সংরক্ষিত ঘোষণা করে সাইনবোর্ড ঝোলাতে হবে।

তবে রাজশাহী পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মাহমুদা পারভীন  জানিয়েছেন, পুকুরগুলো রক্ষায় তাদের আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই। কারণ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনা নিতে হয়। তিনি বলেন, ‘জনবল সংকটের কারণে পুকুর ভরাটকালে তাৎক্ষণিক অভিযান চালানো যায় না। তবে খবর পেলেই ভরাটকারীকে নোটিশ পাঠিয়ে তা বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়।  এ ব্যাপারে আমরা সতর্ক আছি।

এবিষয়ে ’ জানতে চাইলে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) নগর পরিকল্পক আজমেরী আশরাফী বলেন, নগরীতে বর্তমানে সংরক্ষণযোগ্য পুকুর রয়েছে ১৫০ টি। এগুলো যদি কেউ ভরাট করতে চায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Next Post

মোহনপুরে বাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগ

শনি জুলাই ৩০ , ২০২২
মোহনপুর প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর মোহনপুরে মারপিট মামলার আসামি জুলকারনাইন সহ পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে উঠতে দেয়নি ওই মামলার বাদিসহ তার লোকজন। তিনি আদালত থেকে জামিন হয়ে বাদির হুমকির মুখে পরিবার নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। শুক্রবার (২৯ জুলাই) রাতে জুলকারনাইন পরিবার নিয়ে আসার খবর শুনে বাদিসহ লোকজন জুলকারনাইনের বড় ভাইয়ের বাড়িতে ঢুকে জিনিসপত্র ব্যাপক […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links