৯৯তম জন্মদিনে চলচ্চিত্র মহারাজের কিছু অজানা তথ্য

রাপ্র ডেস্ক: সত্যজিৎ রায় ভারতীয় সিনেমাকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। ১৯৫৫ সালে পথের পাঁচালী সিনেমা দিয়ে তিনি রুপোলি পর্দার জগতে পরিচালক হিসাবে পদার্পন করেন। সবমিলিয়ে মোট ৩৬টি সিনেমা তিনি পরিচালনা করেছিলেন। এর মধ্যে তথ্যচিত্র ও শর্ট ফিল্মও ছিল। আজ এই চলচ্চিত্র মহারাজার ৯৯তম জন্মদিন।

১৯২১ সালের এই দিনে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। জন্ম সেখানে হলেও বাংলাদেশের সাথে ছিল তার রক্তের সম্পর্ক। সত্যজিৎ রায়ের পূর্ব পুরুষরা বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার বড় মাসুয়া গ্রামের অধিবাসী ছিলেন।

তবে সত্যজিৎ রায় শুধু পরিচালক ছিলেন না। সিনেমার প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর বিচরণ ছিল। এছাড়া লেখক, চিত্রশিল্পী, সুরকার, গীতিকার, গ্রাফিক ডিজাইনার হিসাবেও তিনি সমান জনপ্রিয় ছিলেন।

জেনে নিন সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে কিছু অজানা তথ্য একনজরে।

পথের পাঁচালী দিয়ে শুরু 

১৯৪৮ সালে নির্মিত ভিত্তোরিও ডি সিকা দ্বারা পরিচালিত ইতালিয়ান ছবি ‘দ্য বাই সাইকেল থিভস’ দেখে অনুপ্রাণিত হন সত্যজিৎ রায়। এরপরই পথের পাঁচালী তৈরি করেন তিনি যা ভারতীয় সিনেমার প্রেক্ষাপটকে বদলে দেয়। ভারতীয় সিনেমাকে বিশ্বের দরবারে জায়গা করে দেয়।

সৌমিত্রর সঙ্গে জুটি 

সত্যজিৎ রায় ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় একসঙ্গে মোট ১৪টি সিনেমায় কাজ করেছেন। তাদের এই জুটি সিনেমা ইতিহাসে বিখ্যাত। ঠিক যেভাবে বিখ্যাত মিফুন ও কুরোশাওয়া, মাস্ত্রোইনি ও ফেলিনি, ডি নিরো ও স্কোরসেসের মতো জুটি।

সুকুমার রায়ের অনুপ্রেরণা

সত্যজিতের সিনেমার বেশ কিছু ডায়লগ তাঁর পিতা সুকুমার রায়ের থেকে অনুপ্রাণিত। যেমন সোনার কেল্লার সেই বিখ্যাত ট্রেনের দৃশ্য যেখানে লালমোহনবাবুর সঙ্গে প্রথমবার আলাপ হবে ফেলুদার। লালমোহনবাবু ফেলুদাকে বলবেন, “ছাতি ২৬, কোমর ২৬, গলা ২৬, আপনি কি মশায় শুয়োর?” এটা সুকুমার রায়ের হযবরল থেকে নেওয়া।

অমিতাভের সঙ্গে কাজ

বলিউড শাহেনশা অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে মাত্র একটি সিনেমায় কাজ করেন সত্যজিৎ রায়। সেটি হল- শতরঞ্জ কি খিলাড়ি। এতে অমিতাভ বচ্চনকে ভাষ্যকার হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন সত্যজিৎ।

দেশি-বিদেশি সম্মাননা 

সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা মোট ৩২টি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল। এর মধ্যে ৬টি ছিল সেরা পরিচালকের পুরস্কার। এছাড়া ফরাসি সরকারের তরফে ১৯৮৭ সালে সেদেশের অন্যতম অসামরিক সম্মান ‘লিজিয়ঁন দ্য অনার’ দেওয়া হয় সত্যজিৎ রায়কে। তিনি ছাড়া পণ্ডিত রবিশঙ্কর ও অমিতাভ বচ্চন এই সম্মান পেয়েছেন।

প্রথম রঙীন বাংলা ছবির পরিচালনা

১৯৬২ সালে কাঞ্চনজঙ্ঘা সিনেমাটি তৈরি করেন সত্যজিৎ। ওটাই ছিল প্রথম রঙীন বাংলা ছবি। এই সিনেমায় অভিনয় করেন ছবি বিশ্বাস, অনিল চট্টোপাধ্যায়, করুণা চট্টোপাধ্যায়, অনুভা গুপ্ত প্রমুখ।

নেহরুর বইয়ের কভার পাতা ডিজাইন 

সিনেমার দুনিয়া জয় করার আগে গ্রাফিক ডিজাইনার ছিলেন সত্যজিৎ রায়। বহু বইয়ের কভার পাতা তিনি ডিজাইন করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হল জিম করবেটের ‘ম্য়ান ইটার্স অব কুমায়ুন’ ও পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর ‘ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া’।

শর্মিলা-সৌমিত্রকে প্রথম ব্রেক

শর্মিলা ঠাকুর, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রথম ব্রেক দেন সত্যজিৎ রায়। তাঁর প্রথম নির্দেশিত সিনেমা পথের পাঁচালি তৈরি হতে তিন বছর সময় লেগেছিল এবং তার বাজেট ছিল ১ লক্ষ টাকা।

অক্সফোর্ডের সাম্মানিক ডক্টরেট 

সত্যজিৎ রায়কে সাম্মানিক ডক্টরেট দেয় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। চার্লি চ্যাপলিনের পর দ্বিতীয় ফিল্ম ব্যক্তিত্ব হিসাবে এই সম্মান পান তিনি। ১৯৯২ সালে প্রথম ভারতীয় চলচ্চিত্রকার হিসেবে সত্যজিৎ রায় বিশ্ব চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার ‘অস্কার’ লাভ করেন। মৃত্যুর মাত্র কয়েকদিন আগে তাঁকে ভারত রত্ন পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

সত্যজিতের সেরা সিনেমাগুলির মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত হল অপুর ত্রিলজি, চারুলতা, মহানগর, অরণ্যের দিনরাত্রি, সোনার কেল্লা, হীরক রাজার দেশে, ঘরে-বাইরে, পরশ পাথর, নায়ক ইত্যাদি।

Next Post

ঋষিকে দেখতে হাসপাতালে কেন যেতে চাননি অমিতাভ!

শনি মে ২ , ২০২০
রাপ্র ডেস্ক: ‘অমর আকবর অ্যান্থনি’ থেকে ‘১০২ নট আউট’, যদিও এই ফিল্মের আগে পরে তাদের বন্ধুত্বের সফরটা অনেক দীর্ঘ। নিজের প্রাণের বন্ধু ঋষি কাপুরকে হারিয়ে আবেগপ্রবণ অমিতাভ। এক মন ছুঁয়ে নেওয়া সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে এদিন তিনি ঋষি কাপুর সম্পর্কে বহু অজানা কথা লিখেছেন। স্মৃতিচারণায় ঋষির সঙ্গে প্রথম দেখা হওয়ার কথা […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links