হার না মানা নাবিক, মুগ্ধতা ছড়ানো শিল্পী সাকিব

আভা ডেস্কঃ কীভাবে মুগ্ধতা ছড়াতে হয়, তার সবটুকু তিনি জানেন। কীভাবে সৌরভে সুরভিত করতে হয়, সেটাও তার অজানা হয়। দিকহারা জাহাজ কীভাবে নোঙর করাতে হয়, সেটা তার নখদর্পণে।

খাদের কিনারা থেকে দলকে উদ্ধার করে কীভাবে জেতাতে হয়, সতীর্থদের মুখে হাসি ফোটাতে হয়, ভক্ত-সমর্থকদের রাতের ঘুমে স্বস্তি আনতে হয় সব তিনি জানেন। তিনি সব পারেন। পেরে দেখালেন আরও একবার। তিনি একজনই। হার না মানা সেই নাবিক, মুগ্ধতা ছড়ানো সেই শিল্পী ও বাংলাদেশকে জেতানোর নায়ক একজনই… সাকিব আল হাসান।

হারারেতে সিরিজ জয়ের মিশনে বাংলাদেশের সামনে মাত্র ২৪১ রানের বাধা। লক্ষ্য তাড়ায় অধিনায়ক তামিম ২০ রান করে যখন সাজঘরে ফিরছিলেন তখন মনে হচ্ছিল কাজটা সহজেই হয়ে যাবে। কারণ ১০ ওভারে ১ উইকেটে রান ৩৯। কিন্তু সাকিব ক্রিজে নামার সঙ্গে সঙ্গে আরেক ওপেনার লিটন আউট। মিঠুন এত সমালোচনার পরও কেন দলে সেই প্রশ্ন আরও একবার তুলে সাজঘরে। মোসাদ্দেক নিজের ভুলে রান আউট। ৭৫ রানে নেই ৪ উইকেট।

মাহমুদউল্লাহ এসে ৫৫ রানের জুটি গড়েন। পরক্ষণেই হাল ছেড়ে দেন। মিরাজ, আফিফরা কেউ হাল ধরতে পারেননি। এগুলো সব হয়েছে সাকিবের চোখের সামনে। ২২ গজে যখন একাকী দাঁড়িয়ে সাকিব, তখন অষ্টম উইকেটে সঙ্গ দিলেন সাইফুদ্দিন। মাঝে সাকিব লড়াই করে ৫৯ বলে তুলে নেন ৪৯তম ওয়ানডে ফিফটি। সিকান্দার রাজাকে ২৯.৩ ওভারে চার মেরে মাইলফলক স্পর্শ করেন। এরপর ৮২ বলে কোনও বাউন্ডারি নেই। সাকিব-ই সেই শেকল ভাঙেন। ৪৩.২ ওভারে লুক জংউইকে পাঠান সীমানার বাইরে।

ওই চারে সাকিব ৮০-র ঘরে ঢুকে যান। মনে হচ্ছিল সেঞ্চুরি পেয়ে যাবেন। কিন্তু তিন অঙ্কের থেকেও সাকিবের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল দলের জয়। এজন্য বাড়তি ঝুঁকি না নিয়ে সিঙ্গেল-ডাবলসে সাইফকে নিয়ে এগিয়ে যান।

এক পর্যায়ে ১২ বলে বাংলাদেশের জয়ের জন্য দরকার ১২ রান। তেন্ডাই চাতারা ওভারের প্রথম বলে ওয়াইড দেওয়ার পরও পরের বৈধ ৫ বলে দেন ৪ রান। ৭ বলে দরকার ৭ রান। ওভারের শেষ বলে সাইফ এগিয়ে এলেন। তার ব্যাটের নিচ দিয়ে বল বেরিয়ে গেলো উইকেটকিপারের পেছন দিয়ে। ফাইন লেগ ভেতরে থাকায় বল চলে গেল সীমানায়।

শেষ ওভারে বাংলাদেশের দরকার মাত্র ৩ রান। মুজারাবানির প্রথম বল সাকিব কাট করলেন। বলে গতি ছিল। সাকিবের প্লেসমেন্টও ছিল নিখুঁত। বৃত্তের ভেতরে কোনও ফিল্ডার নড়লেন না। অতি দ্রুত বল গেলো সীমানায়। ৫ বল আগে ৩ উইকেটের জয় নিশ্চিত সাকিবের ব্যাটে। দল জিতেছে, সাকিব অপরাজিত ৯৬ রানে। সাইফ সর্বোচ্চ ৬৯ রানের জুটি গড়ে অপরাজিত ২৮ রানে।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নব্বইয়ের ঘরে নট আউট থাকার আরেকটি রেকর্ডও আছে তার। ২০০৯ সালে ঢাকায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬৯ বলে অপরাজিত ৯২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। শ্রীলঙ্কাকে সেই ম্যাচে হারিয়ে বাংলাদেশ বোনাস পয়েন্টসহ ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল খেলেছিল জিম্বাবুয়েকে টপকে। ১১ বছর পর সেই জিম্বাবুয়েকে সাকিব হারালেন একক অধিপত্যে। বাংলাদেশ জয় পেল ৩ উইকেটে। এক ম্যাচ হাতে রেখে ২৮তম ওয়ানডে সিরিজ জিতল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

চেনা ফর্মে ছিলেন না সাকির। ব্যাটটা যেন বারবার তাকে ধোঁকা দিচ্ছিল! ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রামে ৫১ রানের পর চার ইনিংসে সর্বোচ্চ রান ছিল ১৯। সেই ব্যাটেই আজ বিজয় রাঙালেন সাকিব। ৯৬ রানের অনবদ্য এক ইনিংস। আজ ব্যাটটাকে নিশ্চয়ই চুমু খাবেন সাকিব!

বাংলাদেশের বোলাররা জয়ের অর্ধেক কাজ আগেই সেরে রেখেছিলেন। ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে ২৪১ রানে আটকে রাখার কাজটা ভালোই করেছেন শরিফুল, সাকিবরা। শরিফুল ৪ উইকেট নিয়ে দলের সেরা বোলার। এর আগে তিন ওয়ানডেতে ১টির বেশি উইকেট পাননি। এবার ছাড়িয়ে গেলেন আগের অর্জন।

তার বলেই হিট উইকেট হয়েছেন ব্রেন্ডন টেইলর। জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ৪৬ রানে শ্যাডো প্র্যাকটিস করতে গিয়ে ব্যাট স্টাম্পে আঘাত করান। তাতে উইকেট থেকে বেলস পরে যায়। টিভি রিপ্লে দেখে তাকে আউট দেন আম্পায়ার। এরপর জিম্বাবুয়ের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৬ রান করা মাধেভেরে, লুক জংউই ও মুজারাবানিকে ফেরান বাঁহাতি পেসার।

সাকিবের ২ উইকেট ছিল ইনিংসের মাঝপথে। চাকাবভা ও ডিয়ন মায়ার্সকে ফিরিয়ে জিম্বাবুয়ের মিডল অর্ডার ভেঙে দেন। এছাড়া ইনিংসের শুরুতে তাসকিন ও মিরাজের জোড়া আঘাতে জিম্বাবুয়ে হোঁচট খায়। পরবর্তীতে ঘুরে দাঁড়াতে বেশ সংগ্রাম করেছে তারা। যদিও শেষটা ভালো হয়নি একদমই।

দিনটা সাকিবের ছিল। সাকিব নিজের মতো করেই রাঙিয়েছেন। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার কেন তাকে বলা হয় তা আরেকবার প্রমাণও করলেন। তাইতো দেশে থাকা সতীর্থ মুশফিক আবেগতাড়িত হয়ে ফেসবুকে পোস্ট করলেন, ‘বুঝি না লোকে সাকিবের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কীভাবে পায়।’ আর স্ত্রী উম্মে শিশির আহমেদ বললেন, ’৯৬ তখনই ১০০-র সমান, যখন দল জিতে যায়। স্কোর আবেগ এবং আনুগত্যের সঙ্গে ন্যায়বিচার করে না।’

Next Post

টেকনাফে ৭০ হাজার পিচ ইয়াবা উদ্ধার

সোম জুলাই ১৯ , ২০২১
আভা ডেস্কঃ কক্সবাজারের টেকনাফ মডেল থানা পুলিশ সাবরাং মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন জিরো পয়েন্টের সমুদ্রের পাড়ে অভিযান চালিয়ে ৭০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় এক মাদক ব্যবসায়ীকে পলাতক আসামি করে মামলা রুজু করা হয়েছে। টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links