আভা ডেস্ক: সড়ক অবরোধ তুলে নিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সড়কে ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন চালক ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলতে না দেয়ার দাবি আমরা মেনে নিয়েছি। দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর জন্য দায়ী জাবালে নূর পরিবহনের দুটি গাড়ির লাইসেন্সও বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া এক চালককে ৭ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সচিবালয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বৈঠকে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী মো. মসিউর রহমান রাঙ্গা, আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান মিয়াসহ পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা অংশ নেন। বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের মধ্যে পরিবহন নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল।
প্রায় ২ ঘণ্টার বৈঠকের পর নৌমন্ত্রীকে পাশে রেখে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল বলেন, দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে আমরাও ব্যথিত। এ দুঃখজনক ঘটনার পরপরই প্রধানমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং দায়ীদের গ্রেফতার করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পাল্লাপাল্লি করে গাড়ি চালানো জাবালে নূরের দুই বাসচালক ও হেলপারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালত চালকের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। বাস দুটির রেজিস্ট্রেশন ও রুট পারমিটসহ সবকিছু বাতিল করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী যাতে তাদের সর্বোচ্চ সাজা হয় সেজন্য তদন্ত শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমাদের সব দাবিই মেনে নেয়া হয়েছে। দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় ব্যথিত জানিয়ে কামাল বলেন, শিক্ষার্থীরা যেন ক্লাসরুমে ফিরে যায় অভিভাবকদের কাছে সেই অনুরোধ করব। কারণ, সড়ক অবরোধে জনদুর্ভোগ বাড়ছে। এতে সারা শহর অচল হয়ে যাচ্ছে। এটা কারও কাম্য নয়। আমরা মনে করি, প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা তাদের অবরোধ তুলে নেবে।
ছাত্রছাত্রীদের অবরোধের নেপথ্যে একটি স্বার্থান্বেষী মহল রয়েছে জানিয়ে আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, সড়ক অবরোধের পাশাপাশি একটা ভয়ঙ্কর দিকও আছে। আমাদের কোমলমতি শিশু-কিশোর ছাত্রছাত্রীরা জ্বালাও-পোড়াও, ভাংচুর চায় না। একটি স্বার্থন্বেষী মহল এ অবরোধের সুযোগে রোববার ১৫০টি, সোমবার ২৫টি ও মঙ্গলবার ১৩৪টিসহ মোট ৩০৯টি গাড়ি ভাংচুর করেছে। আটটি গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও আছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অবরোধের সুযোগে স্বার্থান্বেষী মহল গাড়ি ভাংচুর ও পোড়ানোর মতো কাজ করছে। তিনি বলেন, ছাত্রছাত্রীদের সব দাবি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। কোনোভাবেই লাইসেন্সবিহীন, ফিটনেসবিহীন ও রুট পারমিটবিহীন গাড়ি চলতে দেব না।
অবৈধ গাড়ি চলাচল বন্ধে বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল জানান, যেসব পয়েন্ট থেকে গাড়ি ছাড়ে সেসব পয়েন্টে মালিক ও শ্রমিক সমিতি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গাড়ির কাগজপত্র চেক করে বের হতে দেবে। কাগজপত্র ও ফিটনেস না থাকলে কোনো গাড়ি টার্মিনাল থেকে বের হতে পারবে না। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রাস্তায় সন্দেহজনক যে কোনো গাড়ির কাগজপত্র চেক করবে এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে। এছাড়া পরিবহন শ্রমিকদের সচেতন করার কর্মসূচি পালন করবে মালিক সমিতি।
পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের দিয়ে গাড়ি চেক করা কতটুকু যৌক্তিক এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা পরিবহন সেক্টরের স্টেকহোল্ডার। তারাই নিয়ন্ত্রক। তাদের দিয়ে যদি চেক না করাই তাহলে কিভাবে বাস্তবায়ন করব। রাজধানীর একটি পয়েন্টে শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ ও শিক্ষার্থীদের মারধর করেছে। কাদের উসকানিতে শ্রমিকরা রাস্তায় নেমেছেন এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা অবরোধ করেছে তারা যেন ফিরে যায়। মালিক-শ্রমিক নেতারা এখানে আছেন তারা অবশ্যই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াবেন না। ইতিমধ্যে সেখান থেকে শ্রমিকরা সরে গেছেন। তিনি বলেন, অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। দীর্ঘ সময় অবরোধ থাকলে স্বার্থান্বেষী মহল তা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে পারে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্টার্টিং পয়েন্টে প্রশাসনের সহায়তায় ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা তা যাচাই করবে। এরপরও কোনো মালিক তা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরিবহন সেক্টরের সমস্যা দীর্ঘদিনের তা রাতারাতি পরিবর্তন আসবে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য হল দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে। ট্রাফিক আইন যেন সবাই মেনে চলে। মালিক ও শ্রমিকের পাশাপাশি পথচারীরাও যেন আইন মেনে চলেন। সবাইকে আহ্বান করব ট্রাফিক আইন মেনে চলতে। আইন সবার জন্য সমান। কাউকে প্রশাসন ছেড়ে দেবে না। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, একদিনে সব সমস্যার সমাধান করতে পারব না। পর্যায়ক্রমে সব সমস্যার সমাধান করা হবে। সামনে যেটা আসছে সেটাই আমরা সমাধান করছি।
সড়কে মানুষের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড নাকি দুর্ঘটনা হিসেবে দেখবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে নৌমন্ত্রী শাজাহান বলেন, কোনটি হত্যাকাণ্ড এবং কোনটি দুর্ঘটনা তা আইনে নির্ধারিত আছে। সেই অনুুযায়ীই হবে। তিনি বলেন, আইনের সঠিক প্রয়োগ হলে পরিবহন সেক্টরের অনেক অনিয়ম দূর হয়ে যাবে। সড়কে কোনো অনিয়ম আমরা রাখতে চাই না।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ভবিষ্যতে ঢাকা শহরে পরিচালিত লিমিটেড কোম্পানিগুলোর আওতাধীন সব যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন ও রুট পারমিট ওই কোম্পানির নামেই হবে। রুট পারমিটে উল্লেখিত রুটে গাড়ি চলাচল করবে। কোম্পানির গাড়ি যাতে অসম ও অবৈধভাবে প্রতিযোগিতামূলক চলাচল করতে না পারে তা বন্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দেশব্যাপী সড়ক ও মহাসড়কে চাঁদাবাজি বন্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
যুগান্তর