স্যালুট দেয়া ভাইরাল ছবিটি নেপথ্যর ঘটনাটি জানিয়েছেন যশোরে সেই কৃতী ছাত্র নিজেই।

আভা ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৫১তম সমাবর্তনে রিকসা চালককে গাউন পরিয়ে স্যালুট দেয়া ভাইরাল ছবিটি নেপথ্যর ঘটনাটি জানিয়েছেন যশোরে সেই কৃতী ছাত্র নিজেই।

আসলেই ছবি বাবা-ছেলের কিনা-এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বেরিয়েছে প্রকৃত ঘটনাটা।

ছবির ওই ছেলেটির নাম মোস্তাফিজুর রহমান লিটন ওরফে লিটন মোস্তাফিজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট। কিন্তু রিকসা চালক ওই লোকটি লিটনের আসল বাবা নন। বাবার প্রতীকী অর্থে তিনি ছবিতে ওই রিকসা চালকে বুঝিয়েছেন।

বাস্তবতাকে অনুধাবন করে সব বাবাদের ত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়েছেন তিনি। কারণ লিটন নিজেও কৃষকের সন্তান। তার বাড়ি যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামে।

৩ অক্টোবর ঢাবির ৫১তম সমাবর্তনে ছবিটি তুলেছেন মোস্তাফিজের ভাগ্নে শাহরিয়ার সোহাগ। মামার ছবি তুলতে গিয়ে ওই ছবিটি তিনি ধারণ করেন। ওইদিন রাতেই ফেসবুকে আপলোড করেন।

এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাল হয়ে যায় ছবিটি। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে। দিনভর আলোচনা, সমালোচনায় ছবিটির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ছবির ওই ছেলেটির সঙ্গে কথা বলে ছবিটির সত্যতা যাচাইয়ের চেষ্টা করেছে প্রতিবেদক।

বৃহস্পতির রাতে মোবাইল ফোনে লিটন মোস্তাফিজ বলেন, ছবিটির রিকসা চালক আমার বাবা নয়। আমি কৃষকের সন্তান। বাবার কষ্টার্জিত অর্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়েছি। প্রতীকী অর্থে বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই গাউন খুলে তাকে পরিয়েছি।

তাৎক্ষনিকভাবে ওই ব্যক্তির কাছে শুনেছি, তার সন্তানও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে। তবে লোকটিকে আমি চিনি না।

এদিকে ছবিটি ভাইরাল হওয়ার পর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বিষয়টি আরও পরিস্কার করেছেন লিটন মোস্তাফিজ।

নিচে লিটনের ফেসবুক স্ট্যাটাস…..

স্যালুট…

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তনে এ ছবির একটি বিশেষ অংশ গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ছবির ঐ অংশটি সম্ভবত বিভিন্ন গ্রæপ হয়ে ব্যক্তি থেকে আরম্ভ করে জাতীয় পর্যায়ের গণমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। ফটোগ্রাফার শাহরিয়ার সোহাগ গতকাল অপরাজেয় বাংলার সামনে থেকে এ ছবিটি তোলেন। রিকশায় যিনি বসে আছেন তিনি আমাদের গর্বিত একটি অংশ। মনেই হয়নি সে মুহূর্তে তিনি অন্য একটি অংশ। পৃথিবীর আর সব বাবার মতো এ বাবার চোখেও আমি স্বপ্ন খুঁজে পাই। মোটেও মনে হয়নি তার গায়ের ঘাম লাগলে দুর্গন্ধী হয়ে উঠবে আমার গাউন। এমন ঘামের চর্মশরীরে বেড়ে ওঠা আমার। আমি বিশ্বাস করি পৃথিবীর চাকা এ ‘পিতা’দের ঘামে ও দমে ঘোরে।

আমরা যখন খুব আনন্দ করছিলাম তখন তিনি আনমনা নজরে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকেন। বিষয়টি আমি বুঝে ‘পিতা’কে ডাক দেয়। তিনি সাড়া দেন। আমি আমার গাউন, হুড খুলে ‘পিতা’কে পরিয়ে দেই। তারপর ছবি তোলা হয়। একজন গর্বিত গ্রাজুয়েট মনে হচ্ছিলো তখন আমার। এঁদের রক্ত ঘামানো অর্থেই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পেরেছি। এ ‘পিতা’র পোশাক দেখে স্যালুট না করে পারিনি। এ ছবি তুলে রাতেই ফেইসবুকে পোস্ট করেন ফটোগ্রাফার। ছবিটি ভাইরাল হলে দেখা যায় অনেকেই আমাকে ভুল বুঝছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছবিটি নিউজ হয়ে গেছে। দুঃখিত আমি যে মুখ ঘোলা করার জন্য তবুও বলি, এসব মানুষের মাথা খালি বলেই আমাদের মাথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হুড! যাঁরা ভুল বুঝেছেন আমি তাঁদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি ফটোগ্রাফারের হয়ে। এসব মানুষেরা আমাদের সত্যিকার বাবা-ই। কারণ আমি নিজেও কৃষকের লাঙলের ফালা বেয়ে উঠে এসেছি…।

Next Post

আমার জীবনের মুকুট, তাই সমাবর্তন হ্যাটটা মায়ের।

শুক্র অক্টো. ৫ , ২০১৮
আভা ডেস্ক : আমার জীবনের মুকুট, তাই সমাবর্তন হ্যাটটা মায়ের। আব্বা সারাজীবনই আগলে রেখেছেন সব আঘাত থেকে, তাই গাউনটা কৃষক বাবার ঘামেভেজা শরীরটাতেই বেশি মানায়। আর আমি বাকি জীবনটা এভাবে যেন মধুর এ ভার নিতে পারি। ‘ভাই’টাকে প্রচণ্ড মিস করছি। এই আমার সমাবর্তন। এই টুকুই লিখেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links