স্কুলছাত্রী বর্ষা আত্মহনন মামলা মোহনপুর থানার ওসি ক্লোজড

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর মোহনপুরে স্কুলছাত্রী সুমাইয়া আক্তার বর্ষা আত্মহনন মামলা তদন্তের স্বার্থে ওসি আবুল হোসেনকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। সোমবার (২০ মে) সন্ধ্যায় এ সংক্রান্ত এক অফিস আদেশ জারি করেন জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ।

জেলা পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মোহনপুর উপজেলার বাকশিমইল স্কুলের ছাত্রী বর্ষাকে অপহরণের পর নিপীড়ন করে স্থানীয় বখাটে মুকুল। গত ২৩ এপ্রিল এই নির্যাতনের পর মামলা দায়ের করতে গেলে তার পরিবারকে হেনস্থা করেন মোহনপুর থানার ওসি আবুল হোসেন।

চারদিন ধরে মামলা না নিয়ে নানাভাবে টালবাহানা করতে থাকেন তিনি। অবশেষে পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহর হস্তক্ষেপে ঘটনার চারদিন পর ২৪ এপ্রিল মামলা নেন ওসি ।

এই মামলায় স্থানীয় বখাটে মুকুলসহ ও বর্ষার সহপাঠী সোনিয়াসহ কয়েকজনকে আসামি করা হয়। পাশাপাশি বাড়ি হওয়ায় এরপরও মুকুলের পরিবার বর্ষাকে নানা ধরনের কটুক্তি অপবাদ দিতে থাকে। এই অপমানে গত বৃহস্পতিবার নিজ ঘরেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে মোহনপুরের বিলপাড়া গ্রামের আব্দুল মান্নানের মেয়ে বর্ষা।

এরপর থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন তার বাবা। এই মামলাতেও মুকুল ও তার মা সহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় মুকুলসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ জানিয়েছেন, দু’টি মামলায় অধিকতর তদন্তের জন্য ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। একইসাথে মামলা যথাসময়ে না নেওয়ায় মোহনপুর থানার ওসি আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে ডিআইজি ও পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ কমিটি আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
———————————————————-
অপরাধীর শাস্তি হলে কি মান সম্মান ফেরত পাব আত্মহত্যার আগে চিরকুটে লিখে যান সুমাইয়া
********************************************


‘অপরাধীকে শাস্তি দিলেই তো আমার মান সম্মান ফেরত পাব না। তাই আমাকে ক্ষমা করো’- আত্মহত্যার আগে শেষ চিঠির শেষ লাইনে ঠিক এমন দহনের কথাই লিখেছে সুমাইয়া আক্তার বর্ষা। চিঠিটি লিখেছিল বাবা-মাকে। বর্ষা বাকশিমইল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীতে পড়তো। স্কুলের স্কাউটদলের সে টিম লিডার ছিল সে। শেষ পর্যন্ত বখাটেদের নিপীড়ন বাঁচতে দিল না তাকে।

সুমাইয়া আক্তার বর্ষা
বলেছিল, ‘একটা মেয়ের কাছে তার মান সম্মানটাই সব চাইতে বড়। আমি আমার লজ্জার কথা সবাইকে বলতে বলতে নিজের কাছে অনেক ছোট হয়ে গেছি। প্রতিদিন এসব পর পুরুষের কাছে বলতে বলতে। আর পারছি না!’

বখাটের নিপীড়নের অতিষ্ঠ হয়ে থানায় মামলা করেছিল।তাই হাজারো লাঞ্ছনা ও অপবাদে জর্জরিত হতে হয়েছিল বর্ষাকে। এসব সইতে না পেরে গেল বৃহস্পতিবার নিজ বাড়িতেই গলায় ফাঁস দেয় বর্ষা। রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার মোহনপুর বিলপাড়ার আব্দুল মান্নানের ছোট মেয়ে।

বর্ষার বাবা আব্দুল মান্নান ও মা ফরিদা বেগম
শনিবার সকালে বর্ষাদের বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, মা ফরিদা বেগম অন্ধকার ঘরটাই ঘরে একা বসে আছে। ঘরে দরজায় হেলান দিয়ে মেঝেতেই বসে বিলাপ করছেন বড়বোন জান্নাতুল ফেরদৌস চাঁদনী। আর বাবা আব্দুল মান্নান বারান্দায় একটি প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে শোক স্তব্ধ।

বৃহস্পতিবার ইফতারিতে মজা করে বড়া খাওয়ার জন্য নিজহাতেই ডাল ভিজিয়েছিল বর্ষা।দুপুরে মা ফরিদা বেগম গিয়েছিলেন বাড়ির বাইরে। বাইরে কাজে গিয়েছিলেন বাবা। রোজার তপ্ত দুপুর। প্রখর রোদে তেতে উঠেছে প্রকৃতি। ঘরে থাকা বড় দুই বোন চোখ বুঁজেছিল ঘুমে।এমন সময় পাশের ঘরটাই হয়তো নিরাপদ ভেবে বেছে নেয় বর্ষা। সবার অজান্তে ওই ঘরেই নিজের ওড়নায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যার আগে চিরকুটে লিখে গেছে, নিপীড়নের বিচার না পাওয়ার কথা।

ওই চিঠিতে কারো নাম উল্লেখ করে নি বর্ষা। তবে পরিবারের অভিযোগ, পাশের বাড়ির মুকুল নামে এক যুবক দীর্ঘদিন ধরে উত্যক্ত করে আসছিল বর্ষাকে। মুকুলের সাথে যোগ দেয়া তার পরিবারও। অকারণেই তারা নানা ধরনের কটূক্তির করতো বর্ষাকে।

মা ফরিদা বেগম বলছিলেন, তাদের কোনো ছেলে নেই। তিনজনই মেয়ে। বর্ষা সবার ছোট। বাবার বয়স হয়েছে। বাড়িতেই তিন বোন নিয়ে থাকেন। তাই সামাজিকভাবে অনেকটা কোণঠাসা। শ্রমজীবী বাবার ওপরেই সংসারের ঘানি। ফলে আর্থিক অভাব অনটনেই চলে সংসার। অসহায় অবস্থা।

ফরিদা বেগমের অভিযোগ, পাশের বাড়ির মুকুল নামে এক যুবক দীর্ঘদিন ধরেই বর্ষাকে উত্যক্ত করে আসছিল্। কিন্তু বর্ষা তাকে পাত্তা দেয় নি। এসবের প্রতিবাদ করে আসছিল। ফলে বাড়ির বাইরে বের হলেই নানাভাবে হেনস্তা ও উত্যক্ত করতো মুকুল।
এ অবস্থায়, গেল ২৩ এপ্রিল বিকেলে বান্ধবী সোনিয়া বাড়িতে প্রাইভেট পড়ার কথা বলে বর্ষাকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে কিলোমিটার দূরে বাগবাজার এলাকায় অচেতন অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। বর্ষাকে উদ্ধার করে প্রথমে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। এঘটনায় মুকুল ও সোনিয়া জড়িত-এমন অভিযোগে ২৭ এপ্রিল মামলা করে বর্ষার বাবা।
পরে পুলিশ মুকুল ও সোনিয়াকে গ্রেফতার করে। কিন্তু কয়েকদিন পরই জামিনে বেরিয়ে যায় সোনিয়া।
এদিকে, খানিকটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরে বর্ষা। কিন্তু মামলায় মুকুল জেলহাজতে থাকায় তার মা কাজল রেখা প্রতিনিয়তই বর্ষাকে অপবাদ দিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়ে আসছিল-এমন অভিযোগ রয়েছে। আত্মহত্যার কয়েকদিন আগে বাড়ির পাশে পুকুরে গোসল করতে গেলে সেখানেই বর্ষা উলঙ্গ করার চেষ্টাও করা হয়। ফলে বাড়ির বাইরের জগতটাই য়েন বিষাক্ত হয়ে ওঠে তার কাছে।

মোহনপুর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সানজিদা খাতুন রিক্তা বলেন, বখাটে মুকুলে বিরুদ্ধে আগেই অভিযোগ করেছিল বর্ষার পরিবার।ইউএনও এবং আমার কাছেও অভিযোগ করার পর পুলিশও এসেছিল। তাকে অভয় দিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এরপর লাঞ্ছনা ও অপবাদ থেকে রেহাই পায় নি। পাশাপাশি বাড়ি হওয়ায় উঠতে বসতে বর্ষাকে গালাগালি করতো মুকুলের পরিবারের লোকজন।

তিনি বলেন, বর্ষাকে মুকুল ও তার পরিবার আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে। এর বিচার চাই।

এবিষয়ে মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, ২৩ এপ্রিল অপহণের অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। এরপর আত্মহত্যার ঘটনাতেও আলাদা মামলা করেছে বর্ষার বাবা। মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আত্মহত্যায় প্ররোচণা দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে মুকুল ও তার মা কাজল রেখাসহ ১৩ আসামী। এরমধ্যে প্রধান আসামী মুকুল ও কাজল রেখাসহ ৫জন জেল হাজতে রয়ে

Next Post

গত চার বছরের পরিসংখ্যানের বিচারে বর্তমান বাংলাদেশের সেরা বোলার মোস্তাফিজ।

মঙ্গল মে ২১ , ২০১৯
আভা ডেস্কঃ গত চার বছরের পরিসংখ্যানের বিচারে বর্তমান বাংলাদেশের সেরা বোলার তিনি। এমনকি সেরা উইকেট শিকারীও বটে। ২০১৫ সালে বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের অভিষেকের পর থেকেই ক্রিকেট দুনিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করেন। কাটারের পারদর্শিতার জন্য ‘কাটার মাস্টার’ বলে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তার কাটারের শিকার হয় ক্রিকেটের সব বড় বড় ব্যাটসম্যানরা। […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links