নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী নগরীর চন্দ্রিমা থানা এলাকায় অপরাধের পাশাপাশি অপরাধীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই অপরাধী ও অপরাধকে প্রশ্রয় দিচ্ছে স্বয়ং চন্দ্রিমা থানা পুলিশ। এলাকাবাসীর হাতে ধরা পড়ার পরও অপরাধীরা নিজেদেরকে থানার সোর্স পরিচয় দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের ছত্রছায়ায় এই অঞ্চলে ঘটছে সব ধরণের অপরাধ। ঘটনার সত্যতা মেলে বৃহস্পতিবার রাত ১০টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল নিয়ে দু’জন যুবক চকপাড়া এলাকায় ছিনতাই করতে গিয়ে এলাকাবাসীর হাতে ধরা পড়ার পর বেরিয়ে আসে তথ্যে। জানা যায়, তারা চন্দ্রিমা থানার এসআই শাহীনের সোর্স। এমনকি ছিনতাই করতে নিয়ে আসা মোটরসাইকেলটিও (রংপুর-হ-১২-২৮৯৭) সেই এসআই-এর।
স্থানীয়দের দেয়া তথ্য মতে, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পরে নগরীর চন্দ্রিমা থানাধীন চকপাড়া গরুর খামারের কাছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র মোটরসাইকেল নিয়ে থাকা দুই ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে। ছাত্রের চিৎকারে আশপাশের মানুষ এসে দুই ছিনতাইকারীকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। এ সময় তাদের নাম পরিচয় জিজ্ঞেস করে জানা যায়, তারা চন্দ্রীমা থানার এসআই শাহীনের সোর্স। এমনকি প্রমাণ হিসেবে ছিনতাইকারীরা জানায় তারা যে মোটরসাইকেলটি ব্যবহার করছিল তা এসআই শাহীনের। স্থানীয়রা কথা না বাড়িয়ে চন্দ্রিমা থানায় খবর দিলে থানা পুলিশ এসে দুই জনকে ধরে নিয়ে যায়। পরে শুক্রবার সকালে দুইজনকে কোর্টে চালান দেয়া হয়।
প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি থানা এলাকায় পড়ে রয়েছে। অভিযুক্ত দুই জন মেহেরচন্ডি কড়ই তলা এলাকার মৃত হাফিজের ছেলে কিবরিয়া (৩৫) ও ছোটবনগ্রাম এলাকার আব্দুর রহমানের ছেলে সোহেল রানা (২৬)।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই দুই যুবক মাদক সেবন ও ব্যবসার সাথে জড়িত। একই সাথে তারা বিভিন্ন সময় ছিনতাইও করে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন সময় তারা এলাকাবসীকে থানা-পুলিশের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়।
এদিকে গত মঙ্গলবার ছোটবনগ্রাম পশ্চিমপাড়া এলাকায় (পেবে বাগান) মুন্না নামের এক যুবক ছিনতাই করতে গেলে তাকেও হাতেনাতে ধরে ফেলে স্থানীয় এলাকাবাসী। এসময় সেও নিজেকে চন্দ্রিমা থানার এসআই শাহীনের সোর্স বলে পরিচয় দেয়। মুন্না আসামকলোনী এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগীদের দেয়া তথ্য মতে, এ দিন পৃথক ঘটনায় মুন্নাসহ মোট চারজনকে ধরা হলেও থানা কর্তৃপক্ষ তাদেরকে ছেড়ে দেয়। এ বিষয়ে বুধবার থানায় কথা বলা হলে তারাও বিষয়টি অস্বীকার করে। ছোটবনগ্রাম পশ্চিম পাড়া এলাকার মান্নানের ছেলে অন্তর ও তার আরেক ঘনিষ্ট সহযোগী মাদক সেবনের পাশাপাশি মাদক ব্যবসায়ী ও ছিনতাইকারী হিসেবে চিহ্নিত। এই অন্তরও নিজেকে এসআই শাহীন ও কন্সটেবল হিমেলের সোর্স বলে নিজ এলাকাসহ আশপাশে পরিচয় দিয়ে থাকে। থানা পুলিশের দোহাই দিয়ে অন্তর বর্তমানে স্থানীয় ৯ম শ্রেণীর এক কিশোরীকে সবসময় ইফটিজিংসহ ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে। তার নেতৃত্বে রাতে ভুক্তভোগী কিশোরীর বাসায় পর্যন্ত হানা দেয়া হচ্ছে। কিশোরীর মা বাইরে কোন কাজে বের হলে সেই মাকেও ইফটিজিং ও নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। এসময় সে প্রকাশ্যেই নিজেকে চন্দ্রিমা থানা পুলিশেল লোকবল বলে পরিচয় দেয়। অন্তরের উৎপাতে কিশোরীর লেখা-পড়া বন্ধের উপক্রম। পরিবারটি ভয়ে থানায় অভিযোগ করতে পর্যন্ত সাহস পাচ্ছে না।
এদিকে গত মাসে সিরোইল কলোনী এলাকার আব্দুর রাজ্জাক (৩০) নামে এক মাদকসেবী ব্যবসায়ীদের গণধোলাইয়ে মারা য়ায়। সেও নিজেকে এই এসআইয়েরই সোর্স বলেই পরিচয় দিয়ে আসছিল। চন্দ্রিমা থানা এলাকার ৫শ মিটারের মধ্যে মাদক-জুয়া আসর নিয়মিত বসছে কয়েকটি স্পটে। এছাড়াও এই সীমানার মধ্যে রয়েছে চিহ্নিত করয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী। যারা নিয়মিত হেরোইন, গাঁজা ও ইয়াবার ব্যবসা করে আসছে। সন্ধ্যার পর অন্য এলাকার মানুষদের আনাগোনা বৃদ্ধি পায় এই থানা এলাকায়। এলাকাটি মাদক সেবী ও ব্যবসায়ীসহ ছিনতাইকারীদের জন্য অভয়ারণ্য।
এদিকে এসআই শাহীনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় দুই মাস আগে চন্দ্রিমা থানায় থাকাকালীন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করে নেয়া হয়েছিল। তবে এসআই শাহীন তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এরা আমার থানার সোর্স নয় । আর আমি নিয়ম মেনে কাজ করি বলে সবাই আমার নামে অভিযোগ দেয়, আমার পেছনে লেগে থাকে। থানায় যদি প্রতিদিন ১৬ থেকে ১৭টা মাদকের মামলা হয়, তাহলে আমারই দেয়া থাকে ৭ থেকে ৮টা। মোটরসাইকেল প্রসঙ্গে তিনি জানান, এটি আমার মোটর সাইকেল। তবে আমি শালবাগান পাওয়ার হাউজের কাছে ডিউটিতে থাকাকালীন ওই দুইজন বাসায় যাবে বলে আমার কাছ থেকে গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতে মোটরসাইকেলটি চেয়ে নেয়। পরে তারা কী করে তা আমি বলতে পারবো না।
চন্দ্রিমা থানার অফিস ইনচার্জ (ওসি) বলেন, অভিযুক্ত দুজনকেই কোর্টে চালান দেয়া হয়েছে। তবে বিষয়টা ছিনতাইয়ের ছিল না। অভিযুক্ত দুইজন ওই ছাত্রকে ধরে বিজ্ঞাসাবদ করছিলো তাদের কাছে গাঁজা আছে কী না এ বিষয়ে। আরএমপি’র সহকারী পুলিশ কমিশনার (সদর) ইফতে খায়ের আলম বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। ঘটনাটি অবশ্যই উদ্বেগজনক। ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস প্রদান করেন।