আভা ডেস্ক : প্রকৃতির নিয়ম মেনে রোববারও রাত নেমেছিল প্যারিসে, কিন্তু ঘুম ছিল না প্যারিসবাসীর চোখে। উৎসবের আবির মেখে জেগে ছিল কবিতর শহর। মস্কোর লুঝনিকিতে এমবাপ্পেদের সোনালি ঝলক রং ছড়িয়ে আলোয় ভরিয়ে উন্মাদনার বর্ষা নিয়ে এসেছে গোটা ফ্রান্সে।
দ্বিতীয়বারের মতো ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ের গৌরবগাথা ক্ষণিকের জন্য হলেও যেন ফরাসিদের যাবতীয় দুঃখ-কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছে। সবার মুখে বিজয়ীর হাসি, প্রশান্তির ছায়া। কণ্ঠে অবিনাশী স্লোগান, ‘আমরা চ্যাম্পিয়ন।’ উৎসবের প্রাণকেন্দ্র রাজধানী প্যারিস।
শ্যাম্পেনের বৃষ্টিতে ভিজে ভুভুজেলা আর গাড়ির হর্নের বিকট শব্দে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে, আতশবাজির খেলায় মেতে রাজপথে নির্ঘুম রাত কাটানোর পরও ক্লান্তি স্পর্শ করতে পারেনি প্যারিসবাসীকে।
বরং বিশ্বকাপজয়ী বীরেরা কাল পরম আরাধ্য সোনার ট্রফি নিয়ে রাশিয়া থেকে দেশে ফেরার পর আমজনতার উন্মাদনার পালে লাগে বসন্তের হাওয়া। হৃদয়ের সবটুকু উষ্ণতা আর ভালোবাসা দিয়ে চ্যাম্পিয়নদের বরণ করে নিল ফরাসিরা।
২০ বছর আগে ফ্রান্স প্রথম বিশ্বকাপ জিতেছিল নিজেদের আঙিনায়। জিদানদের সংবর্ধনা দিতে তাই বিমানবন্দরে ভিড় জমাতে হয়নি সমর্থকদের। তবে ট্রফি নিয়ে শোভাযাত্রা হয়েছিল প্যারিসে। দুই দশক আগের সেই সোনালি স্মৃতি কাল নিশ্চয় দিদিয়ের দেশমের চোখে ভাসছিল।
সেবার ছিলেন অধিনায়ক, এবার কোচ। ভূমিকা বদলালেও অনুভূতিটা অভিন্ন। সেই একই আবেগ। ‘চ্যাম্পিয়ন’ লেখা ছাদখোলা বাস ঘিরে নীল জনসমুদ্রের যৌবন গর্জন। সেই সমুদ্রের ঢেউয়ে ভেসে চেনা প্যারিসকে যেন কাল নতুন করে আবিষ্কার করলেন দেশম ও তার শিষ্যরা।
রবিবাসরীয় রাতে মস্কোয় ছয় গোলের রোমাঞ্চকর ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারানোর পর থেকেই এই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় ছিলেন গ্রিজমান, এমবাপ্পেরা। দেশে ফিরে সমর্থকদের নিয়ে বাঁধনহারা উদযাপনের জন্য তর সইছিল না ফ্রান্সের তরুণ ব্রিগেডের।
সোমবার সকালেই এয়ার ফ্রান্সের একটি বিমানে মস্কো থেকে প্যারিসে উড়াল দেয় লে বুজরা। চ্যাম্পিয়নদের স্বাগত জানাতে বিমাবন্দর থেকে শঁজ-এলিজ পর্যন্ত লোকে-লোকারণ্য। সবার কাঁধে বাঁধা ছিল ফ্রান্সের পতাকা। গায়ে নীল জার্সি আর মুখে আঁকা পতাকার তিনটি রং নীল, সাদা, লাল।
আইফেল টাওয়ারও সেজেছিল একই সাজে। বিশ্বকাপজয়ী সোনার ছেলেদের ফুলেল সংবর্ধনায় বরণ করে নেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। প্রেসিডেন্টের রাষ্ট্রীয় বাসভবনে কিছু সময় কাটিয়ে স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় শঁজ-এলিজেতে শোভাযাত্রায় যোগ দেন খেলোয়াড়রা। বাসে নগর প্রদক্ষিণের সময় সিক্ত হন লাখো সমর্থকের ভালোবাসায়।
সমর্থকদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে পগবারাও গান জাতীয় সঙ্গীত। উৎসবে উন্মাতাল প্যারিসকে সেলফিবন্দি করে রাখেন খেলোয়াড়রা। মাতেন দুষ্টুমিতে। বাসের ছাদে ট্রফিটা যখন এমবাপ্পে, গ্রিজমানদের হাতে হাতে ঘুরছিল, বারবার গর্জে উঠছিল নীল জনসমুদ্র।
দেশমের হয়তো মনে হচ্ছিল এ তো ‘৯৮’র প্যারিস! আর এমবাপ্পেরা হয়তো চার বছর পর দেশবাসীকে আরেকটি উৎসবের উপলক্ষ এনে দেয়ার মন্ত্র জপ ছিলেন।
যুগান্তর