আভা ডেস্ক : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া হাইকোর্টে জামিন পেয়েছেন, সেটাকে বিলম্বিত করার পরও তিনি সুপ্রিমকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন। কিন্তু সেই জামিনেও তাকে মুক্ত হতে দিচ্ছে না এ সরকার। কারণ একটাই- এ সরকার খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে চায়। আসন্ন নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিতে চায়।
সোমবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির আয়োজনে আশ্রমপাড়া হাওলাদার কমিউনিটি সেন্টারে রুহিনা থানার বর্ধিত সভায় এসব কথা বলেন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি নির্বাচনে যেতে চায়। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে নির্বাচন ছাড়া আর কোনো পন্থা নেই। তবে নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে মানুষকে নিরাপদে ভোট দেয়ার অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, মাদকবিরোধী অভিযানের নামে সরকার প্রতিদিন মানুষ হত্যা করছে। তাদের হাত এখন রক্তে রাঙা। অগণতান্ত্রিক ও শ্বৈরশাসক এ সরকার ক্ষমতার মোহে একনায়কত্ব বজায় রাখতে চোরাপথে, চোরাগলিতে হাঁটছে। আওয়ামী লীগের দল ও দেশ পরিচালনা কে করছে- এমন প্রশ্নও তোলেন মির্জা ফখরুল। দেশের বাইরের কোনো শক্তি দেশ পরিচালিত করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি অবিলম্বে গ্রেফতার হওয়া ছাত্র-শিক্ষকদের মুক্তির দাবি জানান। সরকারবিরোধী জাতীয় ঐক্যের রূপ নিয়ে খুব শিগগির জাতির সামনে হাজির হবেন বলেও জানান তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, এ সরকার শুধু নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রেখেছে। এ সরকার সম্পূর্ণভাবে একটি গণবিচ্ছিন্ন সরকার।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আর সেই আওয়ামী লীগ নেই। যে আওয়ামী লীগ আমরা দেখেছি ১৯৭১ সালের আগে। স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে। যারা স্বাধীনতার জন্য, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছিল, যারা মানুষের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছিল, গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াই করেছিল- সেই আওয়ামী লীগ আর নেই। আজ দেশে আওয়ামী লীগই সবচেয়ে বড় নির্যাতনকারী হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা দমন করছে ভিন্ন মতকে। চায় গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে থাকতে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, এর আগে আমরা বলেছিলাম একদিন ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান। দেখুন জনগণ আপনাদের অবস্থা কী করে। ওবায়দুল কাদের উত্তরে বলেছিলেন, এক ঘণ্টাও যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে থাকে তাহলে নাকি দেশে রক্তের নদী হয়ে যাবে। তিনি আওয়ামী লীগের কর্মীদের বলেছেন আপনারা টিকতে পারবেন না। হঠাৎ এ উপলব্ধি কেন? কারণ আওয়ামী লীগ নিশ্চিত যে তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন। জোর করে, মানুষ খুন করেই তাদেরকে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, ৩ মাস আগেই আইনগতভাবে খালেদা জিয়া (কারাগার থেকে) বেরিয়ে আসার কথা। কিন্তু এ সরকার পরিকল্পিতভাবে একটার পর একটা মামলা দিয়ে তাকে আটকে রাখার চেষ্টা করছে। আপনারা জানেন, কীভাবে মামলা তৈরি করা হয়, কীভাবে সেটায় জড়িয়ে দেয়া হয়। মিথ্যা মামলা দিয়ে আপনাদের জড়িয়ে দেয়া হয়। ঠিক তেমনিভাবে খালেদা জিয়াকেও মিথ্যা মামলা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে।
ফখরুল বলেন, মানুষ দেখাতে নির্বাচন দেয় এই সরকার। পুলিশ-র্যাব দিয়ে কেন্দ্র দখল করে এবং মানুষ শূন্য করে ভোট আয়োজন করে। যা খুলনা ও গাজীপুরে দৃশ্যমান হয়েছে। তিনি দলের নেতাকর্মীদের ঐক্য গড়ে আমজনতাকে নিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বেগবান করার আহ্বান জানান। জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সহসভাপতি শাহেদ কামাল চৌধুরী ডালিম, আনোয়ার হোসেন লাল, আবদুল হামিদ প্রমুখ।
যুগান্তর