সিনহা হত্যাকাণ্ডঃ সাত আসামীর রিমান্ড শেষ হচ্ছে আজ ।

আভা ডেস্কঃ টেকনাফে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় সাত আসামির ৭ দিনের রিমান্ড শেষ হচ্ছে আজ। এদের মধ্যে রয়েছেন চারজন পুলিশ সদস্য ও তিনজন পুলিশের করা মামলার সাক্ষী।

সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌসের করা হত্যা মামলায় উল্লিখিত সাতজনসহ ১৩ আসামির রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এর মধ্যে র‌্যাব হেফাজতে রেখে চাকরি থেকে বরখাস্ত টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপসহ ১০ আসামির জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বাকি তিনজন (এপিবিএনের বরখাস্ত সদস্য) কক্সবাজার জেলা কারাগারে আছেন।

এদিকে বুধবার ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও আপত্তিকরভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করায় কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করতে গিয়েছিলেন সিনহার সহকর্র্মী শিপ্রা দেবনাথ। কিন্তু থানা থেকে বলা হয়, ঘটনাস্থল হিমছড়ি হওয়ায় রামু থানা অথবা বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে হবে।

কক্সবাজার জেলা কারাগারের সুপার মো. মোকাম্মেল হোসেন বলেন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা মামলায় বুধবার পর্যন্ত কারাগারের এসেছে ১৩ আসামি। এর মধ্যে ৭ জন কক্সবাজার জেলা পুলিশের সদস্য, ৩ জন এপিবিএনের পুলিশ সদস্য ও ৩ জন পুলিশের দায়েরকৃত মামলার সাক্ষী এবং সিনহা হত্যা মামলার আসামি।

তিনি আরও বলেন, উল্লিখিত ১৩ জনের মধ্যে শুক্রবার ৭ দিনের রিমান্ডে র‌্যাব হেফাজতে যারা আছেন, তারা হলেন- এএসআই লিটন মিয়া, পুলিশ কনস্টেবল- সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন ও আবদুল্লাহ আল মামুন এবং নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াছ। এ ৭ জনের রিমান্ড আজ শেষ হচ্ছে। পাশাপাশি মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে কারাগার থেকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ৭ দিনের রিমান্ডে র‌্যাব কার্যালয়ে নিয়ে গেছেন টেকনাফ থানার সাবেক ওসি বরখাস্ত প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী, উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত। তাদের রিমান্ডের আজ ৩য় দিন যাচ্ছে।

র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার প্রধান লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা ঘটনার মূল সাক্ষী শিপ্রা ও সিফাতের কম্পিউটার ডিভাইসসহ ২৯টি সামগ্রী কক্সবাজারের রামু থানায় পুলিশ হেফাজতে রক্ষিত আছে। আদালতের মাধ্যম উক্ত সরঞ্জামাদি কয়েকবার যাওয়া হলেও থানা পুলিশ তা হস্থান্তর করেনি। তবে তদন্ত কার্যক্রমের জন্য এ ডিভাইসগুলো খুবই দরকারি।

রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল খায়ের যুগান্তরকে বলেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে ৩১ জুলাই সিনহা হত্যাকাণ্ডের দিন রাতে হিমছড়ির নীলিমা রিসোর্ট থেকে শিপ্রা ও সিফাতের ডিভাইসগুলো উদ্ধার করে রামু থানায় আনা হয়। বর্তমানে তা রামু থানার মালখানায় রয়েছে। তবে যথানিয়মে জব্দ তালিকা তৈরি করে তা আদালতকে অবগত করা হয়েছে। আদালত সিদ্ধান্ত নেবে এসব আলামত সিআইডির ফরেনসিকে পাঠানো হবে না র‌্যাবের মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দেয়া হবে।

এদিকে ছবি বিকৃত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করতে নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার সহযোগী শিপ্রা দেবনাথ ও সাহেদুল ইসলাম সিফাত মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) রাত ১২টার দিকে তাদের আইনজীবী নিয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় যান। এসময় মামলার এজাহারটি আমলে নেয়নি কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশ।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার নবাগত অফিসার ইনচার্জ খায়রুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, যে কোনো ব্যক্তি মামলা করার অধিকার সংরক্ষণ করেন। তবে ঘটনাস্থল কক্সবাজার সদর মডেল থানার আওতাধীন না হওয়ায় মামলাটি গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি ঘটনাস্থলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানা বা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ট্রাইব্যুনালে ইচ্ছে করলে মামলার বাদী এজাহার দায়ের করতে পারবেন।

শিপ্রা দেবনাথ ও সাহেদুল ইসলাম সিফাতের আইনজীবী মাহবুবুল আলম টিপু বলেন, নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার সহযোগী শিপ্রা দেবনাথকে পুলিশ আটক করার পরে তার ল্যাপটপ, হার্ডডিস্ক, পেনড্রাইভসহ বিভিন্ন ডিভাইস নিয়ে যায় পুলিশ। এগুলো থেকে শিপ্রা দেবনাথের ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও আপত্তিকরভাবে এডিট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রকাশ করা হয়েছে। ব্যক্তি চরিত্র হনন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করায় শিপ্রা দেবনাথের মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। তাই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে থানায় মামলা করতে আসলে ওসি মোহাম্মদ খায়রুজ্জামান ঘটনাস্থল হিমছড়ি হওয়ায় রামু থানা ও বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলার পরামর্শ দিয়েছেন।

আইনজীবী মাহাবুবুল আলম টিপু বলেন, দু’জনকে চিহ্নিত করে দেড়শ’ জনকে আসামি করে এজাহার তৈরি করা হয়েছে। তৎমধ্যে চিহ্নিত ফেসবুক আইডি পিবিআই পুলিশ ঢাকা রেঞ্জের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান ও সাতক্ষীরা জেলার পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শিপ্রার ভিডিও ও ছবি নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে ১৬ আগস্ট হাইকোর্টের বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ শাখায় রিট করন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের প্রধান, খুলনা রেঞ্জের ডিআইজিসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়। রিট আবেদনে বলা হয়, শিপ্রা দেবনাথের ব্যক্তিগত ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে যে মন্তব্য করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অবৈধ। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে আদেশ দেয়া হবে। সুতরাং এ আদেশের পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান শিপ্রা ও সিফাতের আইনজীবী মাহাবুব আলম টিপু।

৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান।সুত্রঃ যুগান্তর

Next Post

ভোলাহাটে গলা বিচ্ছিন্ন সেই নারী হত্যার রহস্য উদঘাটন, আটক-৩ ।

বৃহস্পতি আগস্ট ২০ , ২০২০
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলায় ১৭ আগস্ট গলা বিচ্ছিন্ন নারীর মরদেহ উদ্ধার করেন পুলিশ । এরপর সেই হত্যার রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে পুলিশ । ঘটনার সূত্রপাত ও হত্যাকারীদের ধরতে অভিযান করে পুলিশ । অবশেষে পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটন পুর্বক তিনজনকে আটক করেন । আটকরা হলেন, ভোলাহাট থানাধীন বালুটুঙ্গি পাড়ার […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links