সালমানকে ভালোবাসলে মরতে দিতাম না, শাবনূর ।

আভা ডেস্কঃ নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা সালমান শাহের আত্মহত্যার অন্যতম কারণ হিসেবে সহশিল্পীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাকে দায়ী করা হচ্ছে। দীর্ঘ তদন্তের পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এমনটাই জানিয়েছে।

কিন্তু ঢাকাই চলচ্চিত্রের একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাবনূর বলেন, শুনলাম, ৫ সেপ্টেম্বর রাতে আমি সালমান শাহকে একাধিকবার ফোন করেছি। আমার ওপর রাগ করে ফোন ভেঙে ফেলেছে। আমাকে ঝাড়ি মেরেছে। বলেছে, শাবনূর, তুমি আর ফোন দিবা না। আমার উপহার দেয়া ফ্যান ভেঙে ফেলে। এত বছর তদন্তের পর এ ধরনের কথার মানে কী!

নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র তারকা সালমান শাহের মৃত্যুর প্রায় দুই দশক পর নতুন করে যেসব কথা উঠছে তাতে বিরক্তির কথা জানিয়েছেন তার সহশিল্পী শাবনূর। তিনি বলেন, সালমানকে ভালোবাসলে মরতে দিতাম না।

মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে শাবনূর বলেন, আমি যদি সালমানকে ফোন করে থাকি, নিশ্চয়ই কললিস্ট আছে। কথার রেকর্ডও আছে। তাহলে আমাকে শোনাক। তাহলেই তো সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।

এই চিত্রনায়িক আরও বলেন, সালমানের মা নীলা আন্টি ও স্ত্রী সামিরা সংবাদ সম্মেলন করে বলুক। তাদের স্বামী-স্ত্রী কী ঝগড়া হচ্ছে, তা তো আমার জানার কথা না। আমার দেখার বিষয়ও না।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তার মধ্যে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইস্কাটন রোডে নিজের বাসা থেকে সালমান শাহর (চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন) লাশ উদ্ধার করা হয়।

তখন ঘটনাটিকে আত্মহত্যা ধরে সে সময় অপমৃত্যু মামলা হয়। তাতে আপত্তি জানায় সালমান শাহর পরিবার। ১৯৯৭ সালে সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনাটিকে ‘আত্মহত্যা’ উল্লেখ করা হয়। এরপর ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠানো হয়।

এর প্রায় ১২ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এতেও সালমান শাহর মৃত্যুকে ‘অপমৃত্যু’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ২০১৫ সালের ১৯ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবার রিভিশন আবেদন করেন সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী।

২০১৬ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ-৬-এর বিচারক ইমরুল কায়েস তা মঞ্জুর করে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

শাবনূর বলেন, সালমানকে যদি আমি পছন্দ করতাম, ভালোবাসতাম, তাকে তো মরতে দিতাম না। তাকে বাঁচিয়ে রাখতাম। সেও নিশ্চয়ই তার পছন্দের লোকের কাছেই চলে আসত।

‘এখন শুনছি একটা কাজের লোক কোথা থেকে এসেছে। সাক্ষী দিয়েছে। এমনও শুনছি, সালমান নাকি দুই স্ত্রী নিয়ে থাকতে চেয়েছিল।’

তার বিরুদ্ধে নানা অপবাদ দেয়া হচ্ছে জানিয়ে এই চলচ্চিত্র অভিনেত্রী জানান, আমি বলব, সালমান ও আমার যদি কোনো সম্পর্ক থাকত, তাহলে সামিরার উচিত ছিল, আমাকে বলা। সে বলতে পারত, শাবনূর তুমি এটা করছ কেন? এত বছর তো সে এ ধরনের কথা বলেনি। এখন কেন এ কথা উঠছে?

তুমি আমার চলচ্চিত্র জুটি হিসেবে অভিনয় শুরুর পর একসঙ্গে ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেন সালমান শাবনূর।

ঢালিউডের এক সময়কার সেরা নায়িকা বলেন, একসঙ্গে কাজ করেছি, দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে, আড্ডা হয়েছে। ঘোরাঘুরির সময় সামিরাও সঙ্গে থাকত। সালমানও সামিরাকে সব জায়গায় নিয়ে যেত।

আমার মাকে বলত, আন্টি, আমার জানটাকে একটু দেখে রাইখেন। ছবিতে কাজ করতে গিয়ে দারুণ বন্ধুত্ব হয়েছে। ভাইবোনের সম্পর্ক ছিল। সালমানের মা নীলা আন্টিও সব সময় এমনটা বলতেন।

ফ্যান উপহার দেয়ার প্রসঙ্গে শাবনূর জানান, সালমান তখন অনেক বড় শিল্পী, অনেক জনপ্রিয়। আমিও কোনো অংশে কম ছিলাম না। এত বড় একজন শিল্পীকে আমি যদি কিছু উপহারও দিই, তাহলে তো বড় ধরনের কিছু দেব। গোল্ডের কিছু কিংবা ব্র্যান্ডের দামি ঘড়ি উপহার দেব। কারণ, সালমান শাহ অনেক বড় একটা ব্যাপার। সবাই যে এখন বলছে, একটা কথাই বলব, শুধু একটা প্রমাণ দিক, আমার সঙ্গে সালমানের সম্পর্ক ছিল? মানুষের কথায় কিংবা কাজের লোকের কথা আমি মানব না।

তবে যতদিন এই জুটি একসঙ্গে কাজ করেছেন সালমানের হাতে কোন ফোন দেখেননি বলে জানান এই অভিনেত্রী। তিনি বলেন, ডাবিংয়ের সময় নাকি আপত্তিকর অবস্থায় পাওয়া গেছে। যখন কোনো সিনেমার ডাবিং হয়, অনেক লোক ডাবিং ফ্লোরে থাকেন। সেখানে কি আপত্তিকর অবস্থায় দেখা যাবে? এটা তো কোনো কথাই হলো না। একজন সহশিল্পীর সঙ্গে কথা বললেই প্রেম হয়ে যায় নাকি। সামিরা যদি আমাকে সে রকম অবস্থায় দেখে, বলুক আমার সামনে এসে।

‘সামিরার কথা অনুসারে, সালমান মৃত্যুর আগে আরও দুবার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন, তখনও কি সেটা আমার জন্য হয়েছিল?’ প্রশ্ন রাখেন শাবনূর। তিনি বলেন, আসলে সালমানের মৃত্যু কীভাবে হয়েছে, তা আমরা কেউই জানি না। আমি তো এখন বলব, আমাকে ফাঁসানোর জন্য ষড়যন্ত্র হচ্ছে। অন্য মানুষদের বাঁচাতে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।

পিবিআইকে শাবনূর জানান, সালমানের সঙ্গে ৫ সেপ্টেম্বর রাতে ‘প্রেম পিয়াসী’ সিনেমার ডাবিং ছিল, সেসময় সালমানকে খুব স্বাভাবিকই লেগেছিল। সালমানের মৃত্যুর খবর কখন পান- পিবিআইয়ের এমন প্রশ্নের জবাবে শাবনূর বলেন, ৬ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টায় সালমানের মৃত্যুর খবর পাই। কিন্তু আমি সালমানের জানাজায় যাইনি এবং পরে কখনও সালমানের বাসায় যাইনি

প্রসঙ্গত, রুপালি পর্দার সালমান শাহর আনুষ্ঠানিক নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। সিলেটের জকিগঞ্জে নানাবাড়িতে ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তার জন্ম।

আদমজি ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ড. মালেকা সায়েন্স ইনস্টিটিউট থেকে গ্র্যাজুয়েশন করা ইমন ১৯৯২ সালে বিয়ে করেন বিউটি পার্লার ব্যবসায়ীর মেয়ে সামিরাকে। তখন তার বয়স ২২ বছর।

মঈনুল আহসান সাবেরের লেখা ধারাবাহিক নাটক ‘পাথর সময়’-এর একটি চরিত্র দিয়ে ইমনের অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু। মাত্র সাড়ে পাঁচ বছরের চলচ্চিত্র-জীবনে ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করা সালমান শাহ ঢাকাই সিনেমার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন।

নব্বইয়ের দশকে যারা বয়সে ছিলেন কিশোর-তরুণ, তাদের অনেকের হৃদয়েই সালমান শাহ বাংলাদেশের ‘সেরা রোমান্টিক অভিনেতা’ হয়ে থাকবেন।

Next Post

দিল্লীতে সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৯ জনে দাঁড়িয়েছে।

বুধ ফেব্রু. ২৬ , ২০২০
আভা ডেস্কঃ ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) সমর্থকদের সঙ্গে বিরোধীদের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৯ জনে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। সব মিলিয়ে এক পুলিশ সদস্যসহ মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৯ হয়েছে জানিয়েছেন দিল্লি পুলিশের জনসংযোগ আধিকারিক এম এস রনধাওয়া। দিল্লি পুলিশ সূত্রে খবর, দুই দিনের […]

শিরোনাম

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links