সরকারী অফিস নাকি বাড়ি, বাহির থেকে বোঝা মুশকিল ।

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ সরকারী অফিস নাকি বাড়ি, বাহির থেকে বোঝা মুশকিল । অফিসটি সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়াধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর । সরেজমিনে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের অফিসে গিয়ে এমন চিত্রের দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায় । রাজশাহীর শাহমুখদুম থানাধীন রায়পাড়া (নওদাপাড়া) দপ্তরটির রাজশাহী কার্যালয় অবস্থিত। অফিসে গিয়ে দেখা যায় সাইনবোর্ডের পাশেই কাপড় চোপড় শুখাতে দিয়েছে ডি আই জি মাহাফুজুর রহমানের পরিবার । নিয়ম ভেংগে অফিসেই পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি । সরকারী এই অফিসটি একটু নিরিবিলি পরিবেশে হওয়ায় তেমন কারো কোন গুরুত্ব নেই, বিধায় ইচ্ছে মত চলে অফিস । অফিস নিয়ম না মেনে অফিস না করাও অভিযোগ আছে দপ্তরটির অনেক পরিদর্শকের । সরকারী এই দপ্তরটি নানা অনিয়ম দুর্নীতি করছে দপ্তর প্রধান উপ মহা পরিদর্শক সহ মাঠ পর্যায়ের পরিদর্শকরা । কলকারখানা পরিদর্শনের নামে হয়রানিসহ মাসিক মাসোয়ারা দিয়েই চলতে হয় কারখানা মালিকদের । কারখানা মালিকরা যদি তাদের কথা মত মাসোয়ারা না দেয়, তবে তাদের ভুগতে হয় মিথ্যা মামলা ও জরিমানায় । ছোট ছোট ভুলত্রুটি দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পরিদর্শক তারেক, উচ্চমান সহকারী খায়রুলের বিরুদ্ধে । তাদের  পরিদর্শিত এলাকায় অবস্থিত কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রতিমাসে মাসিক মাসোহারা নেয় । ভুক্তভুগি অনেকের অভিযোগ অনেকটা অনিয়মকে নিয়ম করে ফেলেছে পরিদর্শকরা । তাদের চাহিদামত টাকা না দিলেই করে বসে জরিমানা, অথবা মামলা । পরিদর্শকদের মাঠ পর্যায়ে আদায়ের টাকা নিয়ে গিয়ে অফিসের ডি আই জি মাহাফুজুর রহমানের নিকট বসেই চলে ভাগবাটোয়ারার কাজ । ভুক্তভুগি অনেক কারখানা ও প্রতিষ্টানের মালিক অভিযোগ করে প্রতিকার পায়নি উদ্ধর্তন কর্মকর্তাকে বরং উলটো হয়রানি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে । নাম প্রকাশের কয়েক ডজন দোকানমালিক সহ কারখানা মালিকদের অভিযোগ দিন দিন নানা হয়রানিতে ফেলছে উক্ত দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা । লাইসেন্স নবায়ন থেকে শুরু করে শ্রমিক আইনের ফাঁক ফোকর গলিয়ে নিজেদের পকেট ভরতেই ব্যস্ত তারা । শ্রমজীবি মানুষের আইনগত অধিকার, নিরাপদ ও স্বাস্থ্য সম্মত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালনের নামে হয়রানি বন্ধের দাবিও জানান অনেক প্রতিষ্ঠানের মালিক । তারা বলেন, তাদের যে সকল কাজ দেখার কথা তারা তা ঠিকভাবে হচ্ছে কি না তা দেখুক তাতে আপত্তি নাই । তবে টাকা জন্য নিয়মভেংগে অনিয়ম করে মালিকদের হয়রানি করা উচিত নয় । শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষার নামে মোটা অংকের টাকা দাবিও করে বসেন তারা । অন্যথায় তাদের হয়রানিমুলক মামলা ও জরিমানার মুখে পড়তে হয় প্রতিষ্ঠান মালিকদের ।

দপ্তরটি উচ্চমান সহকারী খায়রুল আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকদের লাইসেন্স নবায়ন সহ মাসিক সুবিধা নিতে প্রতিনিয়তই ফোন দেন । তবে এসব অস্বীকার করে খাইরুল প্রতিবেদকে জানান, আমি কোন অনিয়ম করি না। তবে কেউ যদি আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করে থাকে তাহলে তা মিথ্যা ভিত্তিহীন উদ্দোশ্যপ্রণোদিত । অন্যদিকে তিনি আরও বলে নিউজ করলে আমি মামলা করবো বলেও প্রতিবেদককে হুমকি দেয় তিনি ।

এ বিষয়ে কথা বলতে উপ মহাপরিদর্শক মাহাফুজুর রহমান ভূইয়া (ডি আই জি) সাথে দেখা করে জানতে চাইলে তিনি উক্ত বিষয়ে কোন কথা বলবে না মর্মে পরিষ্কার জানিয়ে দেন ।

প্রসঙ্গত, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়াধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬, এর বিধান অনুযায়ী  শ্রমিকদের কল্যাণ, পেশাগত স্বাস্থ্য ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাসমূহ বাস্তবায়নসহ শ্রম ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা সমুন্নত রেখে মালিক, শ্রমিক, সরকার ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে সমন্বয়ের কাজ করার নিয়ম । ১৯৬৯ সনে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের  শ্রম নীতির আলোকে ও এয়ার ভাইস মার্শাল নূর খানের রিপোর্টের ভিত্তিতে শ্রম দপ্তরকে- (১) শ্রম পরিদপ্তর (২) কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদপ্তর এবং (৩) ট্রেড ইউনিয়ন রেজিষ্ট্রেশন পরিদপ্তর-এ তিনভাগে ভাগ করা হয়। ১৯৬৯ সনের  শ্রম নীতি এবং শ্রম পরিদর্শন সম্পর্কিত ৮১ নং আই.এল. ও কনভেনশন অনুযায়ী ১৯৭০ সনে কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদপ্তর নামে একটি স্বতন্ত্র পরিদপ্তর সৃষ্টি হয়। গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সনে বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসাবে অভ্যুদয় ঘটে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের। স্বাধীনতা লাভের ৪২ বছরে এ দীর্ঘপথ পরিক্রমায় বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য কলকারখানা, দোকান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্প ও বাণিজ্য সেক্টরের ভূমিকা প্রতিদিনই বাড়ছে। এসব সেক্টরে কাজ করছে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক-কর্মচারী। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ক্রমবর্ধমান বিপুল সংখ্যক  শ্রমজীবি মানুষের আইনগত অধিকার, নিরাপদ ও স্বাস্থ্য সম্মত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করে থাকে ।

এ বিপুল সংখ্যক কারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর শ্রম আইন প্রয়োগের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিল। বিশেষতঃ গার্মেন্টস কারখানায় কমপ্লায়ান্স নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এ অধিদপ্তর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিল। জনবল ও অবকাঠামো ছিল সারা দেশের কারখানা এবং দোকান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল। এমন বাস্তবতায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কর্তৃক কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদপ্তরকে অধিদপ্তরে উন্নীত করে জনবল বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। গৃহীত কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় ০১টি প্রধান কার্যালয়, ০৪টি বিভাগীয় কার্যালয়, ০৪টি আঞ্চলিক কার্যালয় এবং ২৩টি শাখা কার্যালয় সহ মোট ৩২টি কার্যালয়ে ৩১৪ জন জনবলের স্থলে ০১টি প্রধান কার্যালয় ও ২৩টি জেলা কার্যালয়ের জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরীর ৬৭৯টি পদ রাজস্বখাতে সৃজন পূর্বক মোট ৯৯৩ জনবলের সমন্বয়ে সকল আনুষ্ঠানিকতা পালন পূর্বক অধিদপ্তরে উন্নীত করা হয়।

Next Post

ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে ১৪ বছর ধরে লাগাতার ধর্ষণ, থানায় অভিযোগ ।

বৃহস্পতি জুলাই ৯ , ২০২০
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর পবা উপজেলার এক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ১৪ বছর ধরে এক নারীকে নিপীড়নের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী ওই নারী এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে পবার কর্ণহার থানায় লিখিতভাবে এ অভিযোগ করেছেন। ওই চেয়ারম্যানের নাম কামরুল হাসান রাজ। তিনি দর্শনপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান। ভুক্তভোগী নারীর বয়স ৩০ বছর। তার […]

শিরোনাম

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links