সমস্যায় জর্জড়িত রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার ৬নং মাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ সমস্যায় জর্জড়িত রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার ৬নং মাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ। ইউনিয়ন পরিষদটির ভবন আছে, কিন্তু জমি নেই। দিনের পর দিন ঘুরেও দেখা মেলে না চেয়ারম্যানের। বিদ্যুৎবিহীন ইউনিয়ন পরিষদে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে তথ্য সেবা। এমন সমস্যা নিয়েই চলছে এ ইউনিয়ন পরিষদটি।

জানা গেছে, ২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির নেতা মোল্লা হাসান ফারুক ইমাম সুমন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পর প্রায় এক বছর ঠিকঠাক চেয়ারম্যান অফিস করলেও গত প্রায় দেড় বছর থেকে তার দেখা নেই। তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরেই স্ব-পরিবার নিয়ে চলে যান রাজশাহী শহরে। সেখানেই তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। ফলে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ইউনিয়নবাসী। এক মাত্র চেয়ারম্যানের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে এলাকার হাজারো মানুষের। একজন চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদের সকল কাজের কেন্দ্রবিন্দু।

সকল সিদ্ধান্ত তাকে ঘিরে হয়। কিন্তু চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতির কারণে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না পরিষদের সদস্যরা। প্রশাসনিক কার্যক্রম, গণসংযোগ কার্যক্রম, রাজস্ব ও বাজেট সংক্রান্ত কার্যক্রম, উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বিচার বিষয়ক কার্যক্রমসহ অন্যান্য কার্যক্রম চেয়ারম্যানের দায়িত্ব হলেও সে দায়িত্ব যেনো কাগজে কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে আসেন শতশত মানুষ। কিন্তু দিনের পর দিন সেবা না পেয়ে তারা হতাশ হয়ে বাড়ি ফেরছেন। চেয়ারম্যান অফিস না করায় দপ্তরিক ও অফিসিয়াল সকল কাজকর্ম হয় না বললেই চলে। এতে করে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রজেক্ট, বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা সঠিক ভাবে কাজ বাস্তবায়ন করতে পারচ্ছেন না। যার ফলে পিছিয়ে পড়ছে ইউনিয়নটি। এমনকি উপজেলার সরকারি কোন প্রকার সভা সেমিনারে দেখা মেলে না তাঁর। সরকারি নিয়ম অনুসারে উপজেলা মাসিক সভায় পরপর তিনবার কোনো চেয়ারম্যান উপস্থিত না হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে। অথচ তিনি বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো প্রকার সভায় অংশগ্রহন করেন না। তারপরও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না।

তথ্যসেবা ঃ ইউনিয়ন পরিষদটিতে দীর্ঘ দেড় বছর থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে এই ইউনিয়ন পরিষদের। বিদ্যুৎ না থাকায় বর্তমান সরকারের ডিজিটাল সকল ধরনের সেবা বন্ধ রয়েছে। বন্ধ হয়ে আছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাস্তবায়নাধীন ইনফো প্রকল্পের আওতায় দ্রুতগতির ইন্টারনের্ট সংযোগ। প্রায় তিন কোটি টাকা মুল্যের সংযোগের যন্ত্রাংশগুলো পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। যার ফলে জন্ম-নিবন্ধন, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ভিজিএফ-ভিজিডি তালিকা, নাগরিক সনদ, নাগরিক আবেদন, কৃষি তথ্যসহ সরকারের বিভিন্ন ডিজিটাল সেবা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। এমনকি বিদ্যুৎবিহীন থাকায় সেবাদান কার্যক্রম থমকে রয়েছে।

মাড়িয়া ইউনিয়নে সেবা নিতে আশা হোজা গ্রামের আজিজুল হক বলেন, তিনি ওয়ারিশান সার্টিফিকেট নিতে এসে জানতে পারেন তথ্যসেবা কেন্দ্র বন্ধ। তিনি সার্টিফিকেট না পেয়ে বাড়ি ফিরে যান। পরে জান্তে পারেন পরিষদটিতে বিদ্যুৎ না থাকায় বন্ধ রয়েছে সেবা কেন্দ্রটি। এদিকে কাশেমপুর গ্রামের তহমিনা নামের এক মহিলা জানান, একটি প্রত্যায়নপত্র নেয়ার জন্য তিনি এক সপ্তাহ ধরে ইউনিয়ন পরিষদে ঘুরছেন। সমস্যা তথ্য সেবায় বিদ্যুৎ নেই, দেখা নেই চেয়ারম্যানেরও। ফলে তিনি এক সপ্তাহ ধরেও কাজ সম্পন্ন করতে পারেননি। চেয়ারম্যানের কাছে একটি জন্মনিবন্ধন বা নাগরিক সনদপত্রের প্রয়োজন হলে চেয়ারম্যানের প্রয়োজন হয়। চেয়ারম্যান না থাকায় প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারমত অনেকেই।

ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রের দায়িত্বরত মিজানুর রহমান মিজান জানান, ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার মধ্যকার সমস্যা কারণে দীর্ঘ দেড় বছর থেকে পরিষদে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। যার ফলে ইউনিয়ন বাসিদের কোন প্রকার ডিজিটাল সেবা প্রদানকরা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়ছেন সেবা নিতে আসা মানুষগুলো। তিনি মানুষে সমস্যা সমাধানের জন্য বাধ্য হয়ে বিভিন্ন কম্পিউটার দোকান থেকে কাজ করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন বলে জানান। তিনি আরো জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় দামি দামি কম্পিউটার,ফটোকপি, প্রিন্টার ও স্ক্যানার মেশিন নষ্ট হতে বসেছে।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি সদস্য জানান, মাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদে ভবন থাকলেও ইউপি সদস্যদের জন্য বসার কোন জায়গা নেই। চেয়ারম্যান কোন প্রকার চেষ্টাও করেন না। তিনি ইউনিয়নবাসীর কোনপ্রকার খবরও রাখেন না। এমনকি ৬ মাসে পরিষদে দেখা মেলেনা তার। শুধু কাগজে কলমে পরিষদের কার্যক্রম ঠিক রাখেন তিনি। কোন প্রকার মাসিক মিটিংও হয় না এই পরিষদে। এমনকি সকল প্রকার সেবা ও সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয় সকল সদস্যদের। চেয়ারম্যানের কারনে আমরা মাসিক ভাতাও পাই না। তাকে কোন কিছু বলতে গেলেও তিনি কাউকে কেয়ার করেন না। সব মিলে হযবর অবস্থায় চলছে ইউনিয়ন পরিষদটি।

ভবন সমস্যা: গত ২৭অক্টোবর ২০০১সালে দুর্গাপুর উপজেলার সকল ইউনিয়ন পরিষদ ভবন তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী সারাদেশের ন্যায় দুর্গাপুর উপজেলায় প্রথম ৬নং মাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে এক এক করে দুর্গাপুর উপজেলার আরো ৬টি ইউনিয়নে একই রকম ভবন নির্মাণ করা হয়। এরপর ২০০১ সালে দুর্গাপুর পৌরসভা গঠিত হয়। পরে ওই ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের জমি জটিলতায় দুর্গাপুর পৌরসভার জমি দাবী করে মামলা করা হয়।

এক পর্যায়ে ভবনটি দুর্গাপুর পৌরসভা ভবন নামকরণ করা হয়। এর পর সমঝোতার মাধ্যমে মাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ এবং দুর্গাপুর পৌরসভা উভয়ে মিলে ভবনটি ব্যবহার করতে থাকে। ১.৫৩ একর জমিতে ভবনটি ১২টি কক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে একটি, সচিবের একটি ও ইন্টারনের্ট সরামজাদি স্থাপনের জন্য একটি। বাকি নয়টি কক্ষ ব্যবহার করেন পৌরসভা। এরপর গত ১৭ জানুয়ারি ২০১১ সালে দুর্গাপুর পৌরসভার নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। পরে পৌরসভার সকল আসবাবপত্র ও নথিপত্র নিয়ে নতুন ভবনে চলে যান। চলতে থাকে পৌরসভার নতুন ভবনে সকল কার্যক্রম। এরপর মাড়িয়া ইউনিয়নে ব্যবহৃত কয়েকটি কক্ষ দুর্গাপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ একটি প্রাইভেট স্কুলকে ভাড়া দেয়া হয়। সেই সাথে আবাসিক হিসাবে বিভিন্ন কক্ষ ব্যবহার ও তালা বন্ধ করে রাখে পৌর কর্তৃপক্ষ।

মাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব হাসানুজ্জামান বাবু জানান, নানা সমস্যা চলছে ইউনিয়ন পরিষদটি। বিদ্যুৎ নেই, বসার ঘর নেই। চেয়ারম্যানেও পরিষদে তেমন একটা আসেন না। তিনি পরিষদে সময়মত আসতে না পারায় ইউনিয়নের অনেক কাজকর্ম ব্যাহত হয়। ভবন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভবন বিষয়ে একাধিকবার বসা হয়েছে। এর পরেও সমাধান মেলেনি। তবে অতি দ্রুত যদি ভবন ও বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান না হয় তাহলে আগামিতে মাড়িয়া ইউনিয়নবাসীর দুঃখ দেখার কেউ থাকবে না।

দুর্গাপুর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী শাহাবুল হক বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের যে ভবনটি সেটি পৌরসভার। ১৫ জুন ২০০৪ সালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার বিভাগ পৌর-৩ শাখা হতে মাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ও জমি দুর্গাপুর পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করেন। সেই থেকে পৌরসভা হতে সকল প্রকার খাজনা পরিষদ করে আশা হচ্ছে। পরিষদটির ভবন ও জায়গা না থাকায় কয়েকটি কক্ষ ব্যবহার করতে দেয়া হয়েছে তাদের। এছাড়ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই ভবনটিতে পৌরসভা নামে বৈদ্যুতিক সংযোগ ছিলো। নতুন ভবনে পৌরসভার কার্যক্রম চালু করা হলে ওই বিদ্যুৎ সংযোগ পরিষদের দায়িত্বে রেখে চলে আশা হয়। তাদের অবহেলায় সময়মত বিদ্যুৎবিল পরিষদ না করায় হয়তো সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করা হয়ে থাকতে পারে।

এবিষয়ে মাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান ফারুক ইমাম সুমনের সাথে কথা বলার জন্য তার পরিষদে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার ব্যবহিৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি রিতিমত অফিস করি, তবে অফিসে দীর্ঘসময় থাকি না, এই জন্য থাকিনা যে সেখানে কোন লোকজন আসে না। আমার পরিষদে মানুষ এসে যদি সেবা না পায় তাহলে কি করবো।

কেন সেবা পাচ্ছেনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিষদে বিদ্যুৎ নেই, পরিষদটি পৌরসভা দখল করে রেখেছে, বিদ্যুৎ না থাকায় পাবলিক সেবা পাচ্ছে না। এমনকি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ পারিষদের ৫টি কক্ষ একটি স্কুলকেও ভাড়া দিয়ে রেখেছে তারা। এদিকে এমন সমস্যা বেড়া জাল থেকে মুক্তি পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেছেন ইউনিয়নবাসী।

Next Post

বগুড়ার নন্দীগ্রামে ছেলের ছুরিকাঘাতে বাবা খুন।

বৃহস্পতি মে ৩০ , ২০১৯
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বগুড়ার নন্দীগ্রামে ছেলের ছুরিকাঘাতে আনোয়ার হোসেন (৫০) নামে এক ব্যক্তি খুন হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে নন্দীগ্রাম থানার পূর্বপাড়া মহল্লায় থানা ওই হত্যাকান্ড- ঘটে। নিহত আনোয়ার পেশায় একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি একই এলাকার মৃত নিজাম উদ্দিনের ছেলে। বাবাকে হত্যার পর পরই ছেলে রনি পালিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে রনি নিজেও […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links