শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিচার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে

আভা ডেস্ক : কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিচার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে এ কর্মসূচির আয়োজন করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। একই দাবিতে এবং অর্থনীতি বিভাগের দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে এদিন মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন। এছাড়া অর্থনীতি বিভাগের দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিতে মানববন্ধন করে বিভাগটির শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন : কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা, মামলার প্রতিবাদ জানাতে গেলে রোববার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তানজীম উদ্দীন খানসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগ। এছাড়া ১০ শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন বিভাগটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করেন। যাতে লেখা ছিল- ‘শিক্ষকের মর্যাদা আজ কোথায়’, ‘এবার তোরা ছাত্র হ’, ‘শিক্ষক আজ লাঞ্ছিত কেন?’, ‘আমার ক্যাম্পাস কার দখলে’, ‘মূল্যবোধ আজ কোথায়’ ইত্যাদি। কর্মসূচিতে বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আবদুল মান্নান, সহকারী অধ্যাপক সায়েমা আহমেদ, সহকারী অধ্যাপক শেখ সামস মোরসালিন, প্রভাষক মোহাম্মাদ আলী সিদ্দিকীসহ প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীদের একটি বিক্ষোভ মিছিল মধুর ক্যান্টিন হয়ে ডাকসু, কলাভবন, অপরাজেয় বাংলা প্রদক্ষিণ করে আবার সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলের পেছনে ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দিদার মোহাম্মদ নিজামুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবুর নেতৃত্বে প্রায় ১০-১২ নেতাকর্মীকে যেতে দেখা যায়। মিছিলের পেছনে পেছনে কেন জানতে চাইলে প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব আমাদের। আমরা তাদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য এখানে এসেছি।’

মানববন্ধনে আবদুল মান্নান বলেন, রোববার শহীদ মিনারে যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। যারা শিক্ষকদের আঙুল তুলে শাসায় তারা মানুষ নয়। এজন্য বলি, ‘আবার তোরা মানুষ হ’। প্রভাষক মোহাম্মাদ আলী সিদ্দিকী বলেন, শিক্ষকদের ওপর আঙুল তুলেছে সরকার দলীয় একটি বিশেষ সংগঠন। তারা ছাত্র কিনা বা তারা সংগঠনের নীতি-আদর্শ মানে কিনা তা আমার জানা নেই। আর যারা শিক্ষকদের ওপর আঙুল তুলেছে তারা যে গর্হিত কাজ করেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তারা ছাত্র নামের কলঙ্ক। বিভাগের শিক্ষার্থী সৌমি বলেন, ন্যায্য দাবিতে দাঁড়ানোর কারণে তানজীম স্যারকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। ?শুধু তার ওপরে নয়; অন্য যেসব শিক্ষকরা ছিলেন তারাও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। তাদের ওপর আঙুল তোলার সাহস ছাত্রলীগ কোথা থেকে পায়?

নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন : শহীদ মিনারে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর লাঞ্ছনার ঘটনা ও অর্থনীতি বিভাগের দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনার প্রতিবাদ এবং দোষীদের শাস্তির দাবিতে সোমবার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময় শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেঘ মল্লার বলেন, ‘রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে একদল বহিরাগত এসে আমাদের শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করেছে। শিক্ষকদের ওপর হামলা করেছে। প্রশাসন উল্টো শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছে। এছাড়া অর্থনীতি বিভাগের দুই শিক্ষার্থীকেও ছাত্রলীগ কর্মীরা মারধর করেছে। বারবার এ ঘটনা ঘটছে কিন্তু ভিসি ও প্রক্টর চুপ হয়ে আছেন।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘অনলাইনে ৫৭ ধারা দিয়ে মানুষের মত প্রকাশের অধিকারকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কিন্তু ছাত্রলীগ প্রকাশ্যে সামাজিক মাধ্যমে আন্দোলন সংশ্লিষ্ট ছাত্রীদের ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছে। এ দেশে সমালোচনা করা অপরাধ কিন্তু প্রকাশ্যে ধর্ষণের হুমকি দেয়া অপরাধ নয়। এ ঘৃণ্য নীতি কত দিন থাকবে?’ এরপর শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে অপরাজেয় বাংলার সামনে গিয়ে দিনের কর্মসূচি শেষ করেন।

অর্থনীতি বিভাগের মানববন্ধন : এদিকে অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় দোষী ছাত্রলীগ কর্মীদের স্থায়ী বহিষ্কার চেয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বিভাগটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে ৭২ ঘণ্টা ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ শফিকুজ্জামান, অধ্যাপক এমএম আকাশ, অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হানসহ বিভাগের অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন থেকে অবিলম্বে নির্যাতনকারীদের চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার, ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ দেখে বাকি জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদান, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ সাধারণ শিক্ষার্থীর ক্যাম্পাসে নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনে অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা কোনো ভালো লক্ষণ নয়। আমরা ভিসি স্যারের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে তিনি জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করবেন। আমরা তার প্রমাণ দেখতে চাই।’ মানববন্ধনে হামলার শিকার দুই শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ ও রোকেয়া গাজী লিনাও উপস্থিত ছিলেন। তারা বলেন, অন্যায়ভাবে তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। আসাদ ও লিনা বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে আমাদের ওপর কেন হামলা করা হল শুধু এটুকুর জবাব চাই।’ দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় তিন ছাত্রলীগ কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
যুগান্তর

Next Post

সেই জামিনেও তাকে মুক্ত হতে দিচ্ছে না এ সরকার, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

মঙ্গল জুলাই ১৭ , ২০১৮
আভা ডেস্ক : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া হাইকোর্টে জামিন পেয়েছেন, সেটাকে বিলম্বিত করার পরও তিনি সুপ্রিমকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন। কিন্তু সেই জামিনেও তাকে মুক্ত হতে দিচ্ছে না এ সরকার। কারণ একটাই- এ সরকার খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে চায়। আসন্ন নির্বাচন থেকে […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links