নিজস্ব প্রতিনিধিঃ শিক্ষকতার চেয়ে বেশি “মধু” প্রশাসনিক পদে। শিক্ষকতা ছেড়ে তাই প্রশাসনিক পদ নিয়ে নানা অনিয়ম আর দূর্নীতিতে জড়িয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। দীর্ঘদিন নেই তাদের ছাত্র-ছাত্রী পড়ানো অভিজ্ঞতা। ঘুরে ফিরে তাদের চেষ্টা প্রশাসনিক পদ বাগিয়ে নেওয়া৷ পদে থাকতে করছে কাঁদাছুড়াছুড়ি, মামলা ও হামলা। এমনটাই ঘটছে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে। প্রেষণে কর্মরত সচিব ও ডিডিসহ অন্যান্যরা বোর্ডের স্থায়ী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে করছেন নানা কূটকৌশল। যেখানে প্রেষণের উক্ত কর্মকর্তাদের থাকার কথা শিক্ষকতায়, তারা এখন ব্যস্ত প্রশাসনিক পদ পদবি নিয়ে।
রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর মো. আব্দুল হামিদ শিক্ষকদের সম্পর্কে বলেছেন, “আপনারা উন্নত জাতি তৈরির কারিগর। একজন শিক্ষক নিছক একজন বক্তা নন, তিনি শিক্ষাগুরু। শিক্ষকের কথা কেবল বক্তৃতা নয়, তা বাণী। বাণী শ্রোতার বুদ্ধি ও বিবেক জাগ্রত করে, অন্তরে জ্ঞানের মশাল প্রজ্বালিত করে। আদর্শ, প্রচেষ্টা, বৃত্তি, পারস্পরিক আস্থা, ও বিশ্বাস ছাড়া শিক্ষা মূল্যহীন। তাই একজন শিক্ষককে হতে হবে আদর্শ ও ন্যায়-নীতির প্রতীক। আজ কাল শিক্ষকগণ প্রশাসনের বিভিন্ন পদ পদবি পাওয়ার লোভে শিক্ষকতা ছেড়ে লবিংয়ে ব্যস্ত থাকেন। (সুত্রঃ ইত্তেফাক ১ডিসেম্বর ২০১৯)
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডসহ দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো পূরণ করা হচ্ছে প্রেষণের কর্মকর্তা দিয়ে। সুস্পষ্ট আইনগত বাধা থাকলেও প্রেষণে নিয়োগ এখনো চলমান। প্রেষনের কর্মকর্তারা বোর্ডের স্থায়ী কর্মকর্তাদের কোনো গুরুত্ব দেন না। বরং দ্বায়িত্ব নিয়েই জড়িয়ে পড়েন নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে গত ১২ সেপ্টেম্বর ঘটে যাওয়া ঘটনা প্রেষণে কর্মরত কর্মকর্তাদের একটি কূটকৌশল মাত্র।
ঘটনার অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে কর্মরত প্রেষণ কর্মকর্তারা তাদের বিরুদ্ধে উঠা নানা অনিয়ম আর দূর্নীতি ডাকতে অফিসিয়াল গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র বাহিরে পাঠিয়ে দেন। এরুপ ঘটনার পূণাবৃত্তি ঘটানো চেষ্টা করেন বোর্ড সচিব ড.মোয়াজ্জেম হোসেন ও উপ পরিচালক (হিসাব ও নিরীক্ষা) বাদশা হোসেন। এই ঘটনায় কথা বলতে গিয়ে লাঞ্চিত হন উপ-সচিব (প্রশাসন) ওয়ালিদ হোসেন। এরপর উক্ত ঘটনায় শিক্ষাবোর্ড কতৃক তদন্ত দেওয়া হয়। কিন্তু সেই তদন্ত কমিটি উপেক্ষা করে প্রেষণের কর্মকর্তারা মন্ত্রণালয়ের তাদের নিজস্ব নিয়ন্ত্রাধীন কমিটি দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত সম্পুর্ণ করেন ১১ অক্টোবর। এতেও মনপুতঃ না হয়ে ড. মোয়াজ্জেম হোসেন আদালতে ১৭ অক্টোবর মামলা করেন। বোর্ডের স্থায়ী কর্মকর্তাদের হেনস্থা করতে ও প্রেষণে কর্মরতদের বিরুদ্ধে করা হাইকোর্টের রীট মামলা তুলে নিতেই এই পদক্ষেপ। সচিব ড. মোয়াজ্জেম হোসেন আদালতে মামলা করলেও নেননি বোর্ড চেয়ারম্যানের অনুমতি। প্রেষনে কর্মরত কর্মকর্তা দিয়ে তদন্ত করানো সেই কমিটি বোর্ডের স্থায়ী কর্মকর্তাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পত্র চেয়ে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে ঘটনা ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছে বোর্ডের স্থায়ী কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য যে, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সিদ্ধান্তে প্রেক্ষিতে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা মহামান্য হাইকোর্টে বোর্ডের বিধিবিধান ও সরকারি পরিপত্রের আলোকে চেয়ারম্যান ব্যতীত অন্যান্য প্রেষণে পদায়নকৃত কর্মকর্তা অবৈধ ঘোষণা চেয়ে রীট মামলা দায়ের করেন। সেই রীটের মহামান্য হাইকোর্ট চেয়ারম্যান ব্যতীত প্রেষণে কর্মরতরা কেন অবৈধ না মর্মে রুল জারি করেন। মুলত এই রীট দ্বন্দে সচিব, ডিডি এবং অন্যান্য প্রেষণে কর্মরতরা ঘটনাকে অন্যখাতে প্রভাবিত করে বোর্ডের স্থায়ী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দমনের চেষ্টা করছেন বলেই মন্তব্য করেন বোর্ড সংশ্লিষ্টরা।
বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ইতিমধ্যে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড়ের প্রেষণে কর্মরত সচিব ও ডিডিসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে বোর্ড সচিব ড. মোয়াজ্জেম হোসেনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি। ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।