শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ৯৩তম জন্মদিন আজ

আভা ডেস্কঃ শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। এই নাম এক নদী অশ্রু গড়িয়ে একটি দেশের জন্মের জন্য নিদারুণ আত্মত্যাগের। এই ইতিহাস স্বাধীন বাংলাকে একাত্তরের ঘাতক মুক্ত করার এক দুর্বার আন্দোলনের। এই নাম সংগ্রামের, দেশপ্রেমের, প্রেরণার।

জাহানারা ইমাম সেই মা, ছেলে রুমী মুক্তিযুদ্ধে যাবার অনুমতি চাইলে যিনি বলেছিলেন, যা, দিলাম তোকে দেশের জন্য কোরবানি। মুক্তিযোদ্ধা রুমী একাত্তরে পাকিস্তানি সৈন্যদের নির্যাতনেই শহীদ হন।

অকুতোভয় এই নারী শত বাধা পেরিয়েও গণ-আদালতকে জনমানুষের মনের গভীরে প্রোথিত করে দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের কয়েক বছরের মধ্যেই যখন কোনো এক অদৃশ্য ইঙ্গিতে ষড়যন্ত্রের চোরা স্রোতে উল্টো পথে চলা শুরু করল ইতিহাস, যখন একাত্তরের ঘাতকেরা পেল সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, মন্ত্রিত্ব; তখন অনেকেই মিনি পাকিস্তানে পরিণত এই দেশে যুদ্ধাপরাধী কুলাঙ্গারদের বিচারের ব্যাপারে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিল। সেই বিশ্বাসের মশালে আগুন জ্বালিয়েছিলেন যারা, তাদের মধ্যে শহীদজননী জাহানারা ইমাম ছিলেন উজ্জ্বলতম।

যদি আমরা ফিরে তাকাই আমাদের চরম শোক ও পরম গৌরবে মন্ডিত মুক্তিযুদ্ধের সেই দিনগুলোর দিকে, আমাদের সামনে অনেক নামের ভীড়ে প্রেরণার আধার হয়ে দাঁড়াবেন এই শহীদ জননী।

এই মহিয়সী নারীর ৯৩তম জন্মদিন আজ। ১৯২৯ সালের ৩ মে মুর্শিদাবাদের সুন্দরপুরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ আবদুল আলী, মাতার নাম সৈয়দা হামিদা বেগম এবং তার স্বামীর নাম শরীফ ইমাম। মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে তার ত্যাগ দেশপ্রেমের সর্বোচ্চ উদাহরণ। ১৯৭১ সালে তার জ্যেষ্ঠ পুত্র শফি ইমাম রুমী দেশের মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন এবং বেশ কিছু সফল গেরিলা অপারেশনের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন এবং পরবর্তীতে পাকিস্তানিদের হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভের পর রুমীর বন্ধুরা ছেলে হারা মা জাহানারা ইমামকে সকল মুক্তিযোদ্ধার মা হিসেবে বরণ করে নেন এবং রুমীর শহীদ হওয়ার কারণে তাকে ‘শহীদ জননী’র মর্যাদায় ভূষিত করেন। সেই থেকে তিনি সবার কাছে বরেণ্য ‘শহীদ জননী’ হয়ে আছেন।

তিনি ছিলেন ব্যক্তিত্বময়ী। তিনি ছিলেন স্কুলকলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আবার একজন সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে মানুষের মনোজগতে তিনি ঠাঁই করে নিয়েছেন। তিনি একাধারে শহীদ জননী, লেখিকা, শিক্ষাবিদ, কথাসাহিত্যিক ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল আন্দোলনের নেত্রী।

মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির উত্থানে নব্বই দশকে জনমনে যে ক্ষোভের সঞ্চার হয় তার পটভূমিতে ১৯৯২-এর. ১৯ জানুয়ারি ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ গঠিত হলে জাহানারা ইমাম এর আহবায়ক নির্বাচিত হন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন এবং একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের দাবীতে দেশব্যাপী ব্যাপক গণআন্দোলন পরিচালনা করেন। তারই নেতৃত্বে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী ময়দানে লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে একাত্তরের ঘাতকদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয় গণআদালত।

এই শহীদ জননী রচিত ‘একাত্তরের দিনগুলি’ ছিল মুক্তিযুদ্ধকালের এক অন্যরকম দলিল। জাহানারা ইমাম দিনলিপি লিখলেও এ গ্রন্থ নিছক দিনলিপি নয়, এখানে ফুটে উঠেছে জাতির হৃদয়ছবি। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত যেন সে সময়েরই এক দারুণ প্রতিচ্ছবি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঢাকা শহরের অবস্থা ও গেরিলা তৎপরতার বাস্তবচিত্র।

শহীদ জননীকে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

Next Post

নিজ আসনে মমতার হার, মুখ্যমন্ত্রী হতে যা করা লাগবে

সোম মে ৩ , ২০২১
আভা ডেস্কঃ পশ্চিমবঙ্গে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের পথে বেশ এগিয়ে আছে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস। বাংলার ২৯২টি আসনের মধ্যে ইতোমধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল ২১৩টি আসনে জয়লাভ করেছে। কিন্তু নিজ আসন নন্দীগ্রামে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) শুভেন্দু অধিকারীর কাছে হেরে গেছেন মমতা। তাতে কংগ্রেস সরকার গঠন করলেও নেত্রী মমতা মুখ্যমন্ত্রী হতে […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links