আভা ডেস্কঃ ভারতের উত্তর প্রদেশের বিজনৌরে এবার এক মুসলিম কিশোরকে ‘লাভ জিহাদ’-এর মামলায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ওই কিশোর ১০ দিন ধরে জেলে বন্দি রয়েছে বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার অনলাইন।
ওই কিশোরের হিন্দু ধর্মাবলম্বী বান্ধবীর অভিযোগ, মুসলিম বন্ধুটির সঙ্গে জন্মদিনের পার্টি থেকে ফিরছিল সে। রাত তখন সাড়ে ১১টা। হঠাৎই বেশ কয়েক জন তাদের ঘিরে ধরে চুরির অভিযোগ তুলে মারধর করতে শুরু করে। তার পর তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এর পরই কিশোরের বিরুদ্ধে ধর্মান্তরণের অভিযোগ আনেন কিশোরীর বাবা। সেই অভিযোগে পুলিশ ওই কিশোরকে গ্রেপ্তার করে।
কিশোরীর দাবি, তার বন্ধুটি শুধু তাকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিল। এর সঙ্গে কোনও ধর্মান্তরণের সংশ্লিষ্টতা নেই। একই দাবি করেছেন কিশোরীর মা।
তিনি বলেন, ‘ছেলেটি আমার মেয়েকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে আসছিল। পথেই ওদের ধরে গ্রামবাসীরা মারধর করেন। মেয়ে ও তার সঙ্গী তাদের কাছে বলেছিল যে, ওরা জন্মদিনের পার্টি থেকে ফিরছে। কিন্তু গ্রামবাসীরা কোনও কথা শোনেননি।
পুলিশ পাল্টা দাবি করেছে, মেয়েটি নিখোঁজ ছিল। ওই কিশোর তাকে অপহরণ করেছিল। কিন্তু মেয়েটি কোনও রকমে পালিয়ে এসেছে।
বিজনৌরের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে একটি মেয়ে নিখোঁজ ছিল। একটি মুসলিম যুবক হিন্দু পরিচয় দিয়ে তাকে নিয়ে পালায় এবং ধর্ম পরিবর্তন করায়। কিন্তু মেয়েটি পালিয়ে এসেছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ এই দাবি করলেও কিশোরীর গ্রামপ্রধান বিনোদ সাইনি জানিয়েছেন, এই ঘটনার সঙ্গে ‘লাভ জিহাদ’-এর কোনও সম্পর্ক নেই। কিশোরীর পরিবার তাকে জানিয়েছেন, তাদের মেয়ের সঙ্গে ওই কিশোরের পরিচয় রয়েছে। তারা জন্মদিনের পার্টি থেকে ফিরছিল। তাদের চোর ভেবে গ্রামবাসীরা পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
সাইনি বলেন, ‘‘খবর পেয়ে থানায় যাই কিশোরীর বাবাকে নিয়ে। কোনও আইনি ব্যবস্থা যাতে না নেওয়া হয়, লিখিতভাবে জানান কিশোরীর বাবা। কিশোরীকে থানা থেকে বাড়ি নিয়ে আসা হয়। এর পরই ফের থানা থেকে ফোন আসে যে, কিশোরীকে সেখানে নিয়ে যেতে হবে। জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কেন নিয়ে যেতে হবে। তখন এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এটা ‘লাভ জিহাদ’-এর মামলা।
এর পরই বিজনৌর পুলিশ একটু টুইট করে এই ঘটনাটিকে ‘লাভ জিহাদ’-এর মামলা বলে দাবি করে। পুলিশের দাবি, কিশোরীর বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মুসলমানরা পরিকল্পিতভাবে হিন্দু নারীদের বিয়ে করে ধর্মান্তরিত করছে বলে ভারতের কট্টরপন্থি বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনগুলো অভিযোগ করে আসছে। বিয়ের মাধ্যমে ধর্মান্তরিত করার এ প্রক্রিয়াকে ‘লাভ জিহাদ’ বলে অ্যাখ্যা দিচ্ছে তারা। রাজ্যে ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি বিয়ের উদ্দেশ্যে ধর্মান্তর বন্ধে গত ২৪ নভেম্বর অধ্যাদেশ জারি করে। ধর্মান্তর করানোর অভিযোগ প্রমাণিত হলে ক্ষেত্রবিশেষে ১০ বছরের সাজার বিধান রাখা হয়েছে এতে। এই মামলায় ইতোমধ্যে বেশ কয়েক জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।