ava desk : রেফারি বাঁশি বাজালেন, পেনাল্টি শুটার বাঁক নিতে শুরু করলেন এবং ভক্ত-সমর্থকদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা কাজ করতে শুরু করল।
সেটা হল যখন কোনোকিছু ভেবে ওঠা যায় না, তখন ভালো একটি আইডিয়া, তিনি কিক নেয়া খেলোয়াড়ের অ্যাকশনের দিকে ঝাঁপ দেন।
২৮৬ পেনাল্টি শটের বিশ্লেষণ করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, গোলপোস্টের মাঝ বরাবর অবস্থান না করে ৪৯ দশমিক ৩ শতাংশ গোলরক্ষক বাম দিকে লাফ দেন, ডান দিকে দেন ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ গোলরক্ষক।
বিপরীতে মাত্র ৬ দশমিক ৩ শতাংশ গোলরক্ষক গোলপোস্টের কেন্দ্র বা মাঝখানে অবস্থান নেন। যা হোক, মধ্যখানে অবস্থান নেয়া হতে পারে একটি ভালো আইডিয়া। গবেষণাটিতে দেখা গেছে ৩৯ দশমিক ২ শতাংশ শটই গোলপোস্টের মাঝ বরাবর করা হয়।
৩২ দশমিক ১ শতাংশ যায় বাম দিকে। বাকি ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ শট করা হয় ডান দিকে। তাহলে যেখানে মাঝখানে অবস্থান নেয়া তুলনামূলক ভালো, সেখানে গোলরক্ষকরা লাফ দেন কেন?
মাইকেল বার-এলি এবং তার সহকর্মীদের মতে, এটা হয় অ্যাকশন বায়াস বা নড়াচড়ার প্রবণতা থেকে। আমাদের প্রবণতা হল কোনো একটি অ্যাকশন নেয়া, এমনকি যখন কোনোকিছু না করা উত্তম, তখনও।
এই অ্যাকশন বায়াসের উদাহরণ আমাদের চারপাশেই রয়েছে। ফুটবল ক্লাবের মালিকরা কোচকে বরখাস্ত করার বাজে একটি চর্চা করেন, যদিও তাদের রেখে দেয়াই হতে পারে তুলনামূলক ভালো সিদ্ধান্ত।
যখন স্বাভাবিকভাবে বাচ্চা প্রসব করানো ভালো, তখনও ডাক্তাররা প্রায়ই সিজারের মাধ্যমে কাজটি করে থাকেন।
কোনো কাজ করতে আমরা যে আগ্রহী থাকি তার একটি কারণ হতে পারে পরবর্তী সময়ে অনুতাপ এড়ানো। নিজের দল হারছে- এমন চিন্তা থেকে গোলরক্ষকরা চাপের মধ্যে থাকে বিধায় তারা ঝাঁপ দেন।
তারা জানেন যদি তারা কোনোকিছু না করে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং বল আটকাতে না পারেন তখন তাদের অনুভূতি অনেক খারাপ হবে ওই সময়ের চেয়ে, যখন তারা চেষ্টা করেছেন কিন্তু ভুল করেছেন এবং বাজে ফল পেয়েছেন।
ডাচ মনোবিদদের একটি দল তাদের ল্যাবে পরীক্ষায় এমনই ফল পেয়েছেন। তারা লক্ষ করেছেন, কোনো একটি কাজ সম্পাদন করার পর মানুষ যদি নেতিবাচক ফল পায়, তখন তারা কিছু না করার চেয়ে আরও বেশি হারে কিছু একটা করার চেষ্টা করে।
যখন তাদের প্রশ্ন করা হল কেন তারা কাজটি করার সিদ্ধান্ত নিলেন, সেখানে গবেষক দলটি দেখতে পেয়েছে, তারা বলছে চেষ্টা না করার অনুতাপের মনোভাব এড়াতে সচেষ্ট তারা।
আমাদের যে কোনো একটি অ্যাকশনের পেছনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আরেকটি কারণ হল আমরা এর জন্য পুরস্কৃত হই। যখন বল ডানে মোড় নেয় তখন গোলরক্ষকের বাম দিকে ঝাঁপ দেয়ার বিষয়টিকে একজন গোলকিপারের দুর্ভাগ্য হিসেবে দেখে থাকেন ফুটবলভক্তরা।
কিন্তু যদি গোলরক্ষক মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং বল বাম পাশের ওপরের দিক দিয়ে জালে জড়িয়ে যায়, হতে পারে তখন বিষয়টিকে গোলরক্ষকদের অলসতা ধরে নিয়ে ভক্ত-সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হতে পারে। সুতরাং, গোলরক্ষকদের কিছু করাকে নিজেদের সমর্থনের মাধ্যমে আমরা পুরস্কৃত করি, এমনকি তারা ভুল কিছু করলেও।
কিন্তু তারা যদি কিছু না করেন তবে ঠাট্টা-বিদ্রূপের মাধ্যমে আমরা তাদের শাস্তি দিয়ে থাকি। একই বিষয় সত্য হয়ে দেখা দেয় বিভিন্ন কোম্পানির প্রধান নির্বাহীদের বেলায়ও।
নিজেদের কোম্পানিতে একজন বস যদি ম্যানেজমেন্টের সর্বশেষ খামখেয়ালিপনাকে বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে বোনাস বাড়ানোর মাধ্যমে তাদের পুরস্কৃত করা হবে, এমনকি ওই খামখেয়ালিপনা কোম্পানির পারফরমেন্সে কোনো ধরনের প্রভাব না ফেললেও।
এমনকি স্বাস্থ্যসেবার মূল্যায়নও আমরা এভাবেই করি। সাধারণত আমাদের সেবা দেয় না এমন ডাক্তারদের তুলনায় ওইসব ডাক্তারকে আমরা পছন্দ করি, যারা আমাদের সেবা দেয়। কোনো কোনো সময় চিকিৎসাসেবা নেয়ার কারণে আমাদের স্বাস্থ্য আরও খারাপ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও পরিস্থিতির কোনো হেরফের হয় না।
ভালো সিদ্ধান্ত নেয়ার অর্থ হল নেয়া অ্যাকশনের প্রতি আমাদের পক্ষপাত থাকা। কখনও কখনও সফলতার পেছনে কিছু করার থাকে না, অন্তত কিছু মুহূর্তের জন্য হলেও।
ধরুন, সেরা টেনিস তারকা যতদূর সম্ভব প্রতিপক্ষকে আটকে রাখা ও জবাব দেয়ার সামর্থ্য রাখেন। একই বক্তব্য সত্য বিনিয়োগকারীদের বেলায়। নারী বিনিয়োগকারীরা পুরুষ প্রতিপক্ষের চেয়ে ভালো ব্যবসা করেন, কারণ তারা কম বেচাকেনা করেন।
অ্যাকশনে যাওয়ার চেয়ে ধরে রাখা বা অবস্থান করে থাকা যে ভালো, তা প্রমাণিত হয়েছে তমসাচ্ছন্ন রাজনীতির মাঠেও। কাসিমো ডি’ মেডিসি কর্তৃক রেনেসাঁ ফ্লোরেন্সকে পরাজিত করার পেছনে একটি বিষয় তাকে সহায়তা করেছে।
আর তা হল যখন নিজের শত্রুদের কোনো কাজ করার পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে, তখন তার কোনো কিছু না করে থাকার এবং তাদের বাই বাই বলার সামর্থ্য। এটি মেডিসিকে স্বতন্ত্র একটি সুবিধা দিয়েছিল- তিনি জানতেন তার প্রতিপক্ষের স্বার্থ কিসে ছিল, অথচ তার বিষয়ে প্রতিপক্ষের কোনো ধারণাই ছিল না।
একই সময়ে অ্যাকশন নেয়ার জন্য মূল্যবান সম্পদ বিনিয়োগ করতে হয়েছিল তাদের, যেখানে মেডিসি বিশ্রাম নেয়া, দেখা ও মোক্ষম সময় আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করার সুযোগ পেতেন।
বিশ্বকাপের বাকি ম্যাচগুলোতে যখন গোলরক্ষকরা পেনাল্টি কিকের মুখোমুখি হবেন, তখন তারা স্মরণ করতে পারেন যে কখনও কখনও সেরা সক্রিয়তা হতে পারে নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকা।
পেনাল্টি শট নেয়ার জন্য নির্দিষ্ট খেলোয়াড়রা যখন এগিয়ে আসেন, হতে পারে তারা ফন্দি আঁটা মেডিসির মতো বা তার চেয়েও বেশি ভালো একজন উদ্বিগ্ন অ্যাকশন হিরো, যে কিনা বিপর্যয়ের মুখে মুহূর্তের মধ্যেই অ্যাকশনে লাফিয়ে উঠতে প্রস্তুত।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে ভাষান্তর : সাইফুল ইসলাম
অ্যান্দ্রে স্পাইসার : ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অর্গানাইজেশনাল বিহেভিয়ারের প্রফেসর
jugantor