নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সঙ্গে কোরিয়ান একটি কম্পানীর প্রায় ৮০ কোটি টাকার প্রতারণার চেষ্টা করছে। ৮ টি ফায়ার ফাইটিং ট্রাক কেনার নামে ৯ টি ভুয়া ডকুমেন্ট তৈরি করে চুক্তিপত্র সম্পাদনের নামে এ প্রতারণার চেষ্টা করছে সিনসিন গ্লোবাল কোম্পানি লিমিডেট।
বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের এনেক্স ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন আন্তর্জাতিক জালিয়াতি চক্রের এমন কর্মকাণ্ডের বিষয়টি তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে মেয়র বলেন, SHINSHIN Global Co. Ltd তৃতীয় কোন পক্ষ দ্বারা প্রতারিত হয়েছে নাকি SHINSHIN Engineering Co. Ltd এর প্রেসিডেন্ট Byeong Cheol SHIN ও তার সহযোগীরা নিজেরাই বিভিন্ন ভুয়া ডকুমেন্ট তৈরি করে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনকে ফাঁসানোর জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে, তা যথাযথ তদন্ত ও তথ্য প্রমাণ প্রাপ্তি সাপেক্ষে জানা যাবে । তবে আমার সাথে ফোনালাপ কিংবা আমার ইমেইলে যোগাযোগ না করে ভুয়া ই-মেইলে যোগাযোগের মাধ্যমে চুক্তিপত্র সম্পাদনের বিষয়টি অবহিত করার পরও দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে B.C. Shin কর্তৃক একাধিকবার যোগাযোগ ও মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করায় আমার ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। যা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্টের গভীর অপচেষ্টা।
খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন বাংলাদেশের একটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের কার্যাবলীর মধ্যে ফায়ার ফাইটিং সেবা অন্তর্ভুক্ত নয়। বাংলাদেশে ফায়ার ফাইটিং এর জন্য ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স নামক একটি স্বতন্ত্র ও পূর্ণাঙ্গ সরকারি সংস্থা রয়েছে। স্বভাবতই, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক ফায়ার ফাইটিং ট্রাক ক্রয়ের কোন প্রশ্নই আসে না। বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক ও অযৌক্তিকও।
বাংলাদেশে সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া P.P.A-2006 ও P.PR – 2008 অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশনের সকল ক্রয় কার্যক্রম সম্পাদিত হয়। যে কোন পণ্য (যানবাহন) ক্রয়ের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম মেনে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সরবরাহকারীর নিকট থেকে ক্রয় করা হয়ে থাকে সরাসরি বিজ্ঞপ্তি ব্যতিরেকে সরকারি অর্থের মাধ্যমে এরূপ বৃহৎ অংকের পণ্য ( যানবাহন ) কোন সরবরাহকারীর নিকট থেকে ক্রয়ের সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে কোরিয়ান SHINSHIN Global Co. Ltd এর সাথে ১০.১২ Million USD এর সরাসরি ক্রয়চুক্তি সরকারি ক্রয় নীতিমালা পরিপন্থি ও বাস্তবসম্মত নয়।
মেয়র লিটন বলেন, গত ২০১৮ সালের ১৩ জানুয়ারি SHINSHIN Engineering Co. Ltd রাজশাহীতে ১০০ MW Solar Power Plant নির্মাণের আগ্রহ দেখিয়ে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বরাবর পত্র দেয়। পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে সেই সময়ে SHINSHIN Engineering Co. Ltd এর প্রেসিডেন্ট B.C. Shin রাজশাহীতে আসেন। একাধিক আলোচনার পর রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে Solar Power Plant নির্মাণে অনাগ্রহ দেখানোয় সে সময়েই পত্রযোগাযোগসহ এ বিষয়টির সমাপ্তি ঘটে। এর প্রায় তিন বছর পর গত বছরের ১ ডিসেম্বর B.C. Shin তার টেলিফোন নম্বর থেকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যাডভাইজার মো. আশরাফুল হককে ফোন করে ০৮ টি ফায়ার ফাইটিং ট্রাক রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের থেকে ক্রয়ের বিষয়ে জানতে চান।
সিটি কর্পোরেশনের সাথে কোম্পানিটির কখনোই যোগাযোগ না হওয়ার বিষয়টি B.C. Shin কে জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপর B.C. Shin কয়েকটি ই-মেইল পাঠিয়ে তার কোম্পানি থেকে ০৮ টি ফায়ার ফাইটিং ট্রাক ক্রয় বিষয়ক ভুয়া ডকুমেন্ট প্রেরণ করেন। সিটি কর্পোরেশনের ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যাডভাইজার মো. আশরাফুল হকের নিকট প্রেরিত ডকুমেন্ট ও পূর্বের কথিত ইমেইলসমূহ পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, B.C. Shin ০৮ টি ফায়ার ফাইটিং ট্রাক ক্রয় যাবতীয় যোগাযোগ একটি ভূয়া ইমেইল এড্রেস (khzzaman_liton@yahoo.com) এর সাথে ইমেইল আমার প্রকৃতপক্ষে ইমেইল khzaman_liton@yahoo.com।
মেয়র বলেন, আমার ইমেইল এড্রেস থেকে B.C. Shin এর যোগাযোগকৃত ইমেইল এড্রেসে একটি জেড বেশি। B.C. Shin তার কথিত অর্থ লেনদেনের কোনো পর্যায়ে তিনি আমার সাথে ফোনালাপ বা আমার প্রকৃত ইমেইল এড্রেসে কোন ইমেইল প্রেরণ করেননি। যেখানে করেছেন তা আমার নয়। এড্রেস এরপরও গত ০৪ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে তিনি আমার বরাবর কথিত যে Demand Notice প্রেরণ করেছেন, তার সংযুক্তি হিসেবে প্রাপ্ত ০৯ টি ডকুমেন্ট যাচাই-বাছাই করে আমার পাসপোর্ট জালিয়াতি ও ইমেইল আইডি ব্যবহার, সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তার ভুয়া নাম, পদবী ও স্বাক্ষর ব্যবহারের বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে।
এছাড়া ইমেইলে (GMT+1) টাইম জোন দেখা যায়। যা বাংলাদেশ (GMT+6) বা দক্ষিণ কোরিয়া (GMT+9) এর টাইম জোন নয়। বরং GMT+1 টাইম জোন নাইজেরিয়াসহ কয়েকটি দেশের। ডকুমেন্টে প্রদত্ত ইমেইল এড্রেস ও মোবাইল নাম্বার আমার নয়। ডকুমেন্ট হিসেবে সংযুক্ত আছে পাসপোর্টের দুটি জাল পাতা। সেখানে প্রদত্ত আমার নাম, পাসপোর্ট নাম্বার, ইর্মাজেন্সী কন্টাক্ট ও অন্যান্য তথ্যাদি সঠিক নয়। পাসপোর্টে থাকা ছবিটি পাসপোর্ট সাইজের না। আমার ছবিটি পোস্টার বা ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করে পাসপোর্টে লাগানো হয়েছে।
B.C. Shin এর ডকুমেন্টে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের যে প্যাড ব্যবহার করা হয়েছে, তা কর্পোরেশনের নয়। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এর যে নাম দেখানো হয়েছে, সে নামে কোন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সিটি কর্পোরেশনে কখন কর্মরত ছিলেন না। এছাড়া চুক্তিতে মো. ইসলাম খান উদ্দিন নামে সিটি কর্পোরেশনের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার নাম, পদবী ও উল্লেখ রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সিটি কর্পোরেশনে মো. ইসলাম খান উদ্দিন নামে কোন হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বর্তমানে কর্মরত নেই বা কখনো ছিলেন না। এতে প্রমাণিত হয়, কোরিয়ান SHINSHIN Global Co. Ltd এর প্রদানকৃত চুক্তিপত্রটি বানোয়াট ও ভুয়া।
মেয়র আরও বলেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন দেশের মধ্যে অন্যতম একটি সিটি কর্পোরেশন। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন মহানগরীর সকল নাগরিকের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সবুজায়ন, বায়ু দূষণ কমানো, ইপিআই কার্যক্রমে জাতীয়ভাবে পরপর ১০ বার দেশসেরা হওয়াসহ নানাবিধ ক্ষেত্রে দেশ- বিদেশে সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অদম্য অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতায় ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে আমাদের প্রাণের মহানগরী রাজশাহীও উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় এমন একটি গভীর চক্রান্ত সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, গত ২৩ ডিসেম্বর নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। চক্রান্তের বিষয়টি ইতোমধ্যেই দক্ষিণ কোরিয়ার সিওলে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূতকে পত্রের মাধ্যমে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করে দেয়া হচ্ছে। এটি শুধু সিটি কর্পোরেশনের নয়; পুরো দেশের সঙ্গে ষড়যন্ত্রের অংশ। আন্তর্জাতিক এই চক্রটির ব্যাপারে আরও যত ধরনের আইনগত পদক্ষেপ নেয়া দরকার আমার নিবো।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সিটি কর্পোরেশনে প্যানেল মেয়র-১ ও ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন, সচিব মো. মশিউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ারিং এডভাইজার মো.আশরাফুল হক, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইমরানুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বুধ ফেব্রু. ১৬ , ২০২২
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশের অন্যতম সামাজিক সমস্যা হিসেবে শিশুবিবাহ বিবেচনা করা হলেও সরকারী ও বেসরকারি নানা উদ্যোগে শিশুবিবাহ বন্ধে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সরকার শিশুবিবাহ প্রতিরোধে আইন প্রনয়ণ করেছেন। শিশুবিবাহের কূফল সম্পর্কে জানাতে প্রতিনিয়ত উঠান বৈঠক, সভা-সমাবেশসহ জনসচেনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণে সকলে এগিয়ে এলে শিশু বিবাহ বন্ধে কার্যকর ফলাফল পাওয়া সম্ভব বলেও মনে করেন […]
এই রকম আরও খবর
-
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:০৯ অপরাহ্ন
-
১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:৫১ অপরাহ্ন
-
১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৬:৩৪ অপরাহ্ন
-
৪ আগস্ট, ২০২২, ৫:১০ অপরাহ্ন
-
২৩ মে, ২০২১, ১২:৫৯ অপরাহ্ন
-
২৫ মার্চ, ২০২১, ৯:৪৭ অপরাহ্ন