রামেক হাসপাতালে পড়ে আছে দেড় কোটি টাকার অ্যাম্বুলেন্স

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রামেক হাসপাতালে দুবছর ধরে পড়ে আছে দেড় কোটি টাকার অ্যাম্বুলেন্স।

রোজ সকালে চালক গিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের ইঞ্জিন স্টার্ট দেন। অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) সমস্ত যন্ত্রপাতিতেও বৈদ্যুতিক লাইন দেওয়া হয়। চালক বেশি কিছু বোঝেন না। শুধু সবখানে আলো জ্বলছে কি না, তা দেখেন। মাঝে মাঝে অ্যাম্বুলেন্সটি বের করে আশপাশে একটু চালান। আধা ঘণ্টা পর স্টার্ট বন্ধ করে গ্যারেজে তালা দিয়ে চলে আসেন।

এভাবেই দুই বছরের বেশি সময় কেটে গেছে, কিন্তু রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের অত্যাধুনিক এই অ্যাম্বুলেন্স কখনো রোগী টানেনি। অ্যাম্বুলেন্সটির দাম ১ কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ৮৫৫ টাকা। হৃদ্রোগীদের জন্য সরকার এই কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্স রামেক হাসপাতালকে দিয়েছিল। অ্যাম্বুলেন্সটিতে ৪০ ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থাপনা আছে।

রামেক হাসপাতালের আইসিইউতে যে ধরনের সুবিধা আছে, তার চেয়ে বেশি সুবিধা আছে এই অ্যাম্বুলেন্সে। এমনকি পালস অক্সিমিটারের মতো ছোট যন্ত্রও আছে সেখানে। অ্যাম্বুলেন্সটিতে রোগী বহন করতে হলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ চিকিৎসক ও নার্স থাকতে হবে। সে রকম চিকিৎসক-নার্স নেই রামেক হাসপাতালে। আর তাই দুই বছর ধরে গ্যারেজে পড়ে আছে অ্যাম্বুলেন্সটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯ সালে মেসার্স ফেরিটেক প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান ইতালি থেকে আনা পাঁচটি কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্স স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সরবরাহ করে। এর একটি পায় রামেক হাসপাতাল। দেশের সরকারি হাসপাতালে এই অ্যাম্বুলেন্সগুলো সর্বাধুনিক।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী গত শনিবার সকালে এই প্রতিবেদককে তাঁদের অ্যাম্বুলেন্সটি দেখার অনুমতি দেন। অ্যাম্বুলেন্সচালকদের ইনচার্জ আশরাফুল আলী হাসপাতালের পেছনে থাকা একটি গ্যারেজের তালা খুলে অ্যাম্বুলেন্সটি দেখান।

দেখা যায়, ইতালিয়ান ব্র্যান্ড আইভেকোর দামি অ্যাম্বুলেন্সটি ২০১৯ সালের ৬ মে বুঝে নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যেসব কর্মকর্তা এটি বুঝে নেন, তাঁদের স্বাক্ষর ও তারিখ লেখা আছে অ্যাম্বুলেন্সেই। সে অনুযায়ী দুই বছর সাড়ে তিন মাসের বেশি সময় ধরেই গ্যারেজে পড়ে আছে অ্যাম্বুলেন্সটি।

আশরাফুল আলী চালকের আসনে বসে স্টার্ট দিয়ে দেখান। তিনি বলেন, স্টার্ট না দিলে নষ্ট হয়ে যাবে। তাই প্রতিদিন সকালে এসে স্টার্ট দেন তিনি। ভেতরের যন্ত্রপাতি অন হচ্ছে কি না, দেখেন। চাকার হাওয়া কমে গেলে হাওয়া দিতে বাইরে নিয়ে যান। তারপর আবার এনে রেখে দেন। এ পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্সটিতে কোনো রোগী তোলা হয়নি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রামেক হাসপাতালের সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সে আপ-ডাউন ধরে প্রতি কিলোমিটারে ২০ টাকা ভাড়া ধরা হয়। কিন্তু কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া কত হবে তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। পাশাপাশি চিকিৎসক-নার্সকেও একটা সম্মানী দেওয়ার কথা রয়েছে। সেই সম্মানীর পরিমাণও ঠিক হয়নি। চিকিৎসক-নার্স চেয়ে এবং ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য হাসপাতালের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে অনেক আগে। কিন্তু আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমপি) রাজশাহীর সাবেক সভাপতি ডা. ওয়াসিম হোসেন বলেন, ‘এটা সদিচ্ছার অভাব। এ কারণেই জনগণের এ রকম একটা সম্পদ পড়ে আছে।’ এই হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্সে রোগী তোলার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সর্বোচ্চ চিকিৎসা শুরু হয়। এতে রোগীর প্রাণ বাঁচার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু বাড়িতে হার্ট অ্যাটাক করার পর সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে আনার পথেই অনেক রোগী মারা যায়। তাই যত দ্রুত সম্ভব অ্যাম্বুলেন্সটি চালু করা দরকার।’

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘হাসপাতালে যে আইসিইউ ইউনিট আছে, সেটা আমাদের বানানো। আইসিইউর প্রকৃত মান সেখানে নেই। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সটি প্রকৃত আইসিইউর চেয়েও বেশি। ফলে সেটি পরিচালনার মতো জনবল আমাদের নেই। বিষয়টি জানিয়ে অনেক দিন আগেই ঢাকায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অগ্রগতি হয়নি।’

Next Post

রাজশাহীতে বিএনসিসি'র স্বেচ্ছায় ফ্রি করোনা টিকা রেজিস্ট্রেশন

সোম আগস্ট ৩০ , ২০২১
আভা ডেস্কঃ রাজশাহীতে বিএনসিসি’র স্বেচ্ছায় ফ্রি করোনা টিকা রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমের উদ্বোধন হয়েছে। যখন বিশ্বব্যাপি কোভিড-১৯ সংক্রমনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তখন অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়তে থাকে এবং ভয়াবহ রূপ নেয়, বর্তমানে সংক্রমণ ও মৃত্যুরহার অনেকাংশে কমে এসেছে। সরকার দেশের প্রতিটি মানুষকে টিকার আওতায় আনার কার্যক্রম চলমান রেখেছে। এরই […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links