নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার (ইএমও) ডাঃ জাহিদের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
ভর্তি রেজিস্ট্রারে আঘাতের বিবরণ যাই নোট করা থাকুক না কেন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সহজের মিলে গুরুতর জখমের সার্টিফিকেট। ভোক্তভোগীদের অভিযোগ প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০টি সার্টিফিকেট দেয়া হয় ২০/৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুধু মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রদানকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট চক্র। সেই সাথে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকসহ তৃতীয় শ্রেনীর বেশ কিছু কর্মচারীর বিরুদ্ধেই রয়েছে বাণিজ্যের অভিযোগ।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রভাবশালী এ সিন্ডিকেটের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে ব্যর্থ হলে ভর্তির পরদিনই গুরুতর জখমী রোগীকেও হাসপাতাল ত্যাগের ছাড়পত্র দিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়া হয়। আবার চাহিদা মোতাবেক টাকা পেয়ে সুস্থ রোগীও সপ্তাহের পর সপ্তাহ ভর্তি থাকতে পারে।
ঘটনাসূত্রে জানা যায়, গত ২০১৯ সালের ১৮ই নভেম্বর রাজশাহী দামকুড়া থানাধীন জাঙ্গালপাড়া এলাকার প্রতিবন্ধি ড্রাইভার রায়হান ও তার পিতা আবদুল মান্নান আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। প্রতিপক্ষের কোপের আঘাতে ড্রাইভার রায়হানের মাথায় ৮টি সেলাই ও পেটে ১০ টি সেলাই করেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সেই সাথে আবদুল মান্নানের বাম হাত ভেঙ্গে যাওয়ায় তাকে প্লাশটার করে দেন । দীর্ঘদিন হাসপাতালের বারান্দায় ব্যাথার যন্ত্রনায় শরীলের সাথে যুদ্ধ করেন প্রতিবন্ধি ড্রাইভার রায়হান ও তার পিতা আব্দুল মান্নান।
এ ঘটনায় মামলা হলে সেই মামলা তদন্তভার পড়ে রাজশাহী পিবিআইতে । মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মামলার তদন্তের স্বার্থে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে মেডিকেল সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করেন। মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রদানের আবেদন পেয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্টিফিকেট বাণিজ্যের মূল হোতা অফিস সহকারী মাহাবুব সে সময় ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার (ইএমও) ডাঃ জাহিদের খরচা-পানির জন্য ১০ হাজার টাকা চান প্রতিবন্ধি ড্রাইভার রায়হান ও তার পিতা আবদুল মান্নানের কাছে। কিন্তু ডাক্তারদের প্রচেষ্টায় শরীরের যুদ্ধে জয় লাভ করলেও হার মানেনি প্রতিপক্ষে চাওয়া টাকা ও অফিস সহকারী মাহাবুবের কাছে। রায়হান ও তার পিতা আবদুল মান্নান ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানালে অফিস সহকারী মাহাবুব তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিবন্ধি ড্রাইভার রায়হান ও তার পিতা আবদুল মান্নানকে সার্টিফিকেট দেওয়া হয় শরীরে সামান্য জখমী ফোলা উল্লেখ করে।
তবে সার্বিক বিষয় নিয়ে ডাঃ জাহিদের ০১৭১৫০৬৬৪১৮ ও ০১৭৯৬১২১৭৭১ নম্বরে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি জানান- আমার কাজের কোন জবাবদিহিতা নাই। আর, আপনি কে? এখানে তিনি একটু ভাষাও খারাপ করেন। সেই সাথে ধমক দিয়ে বলেন, ফোন রাখেন মিয়া।
এদিকে রাজশাহী বারের আইনজীবি জোতিয়ল আলম জানান- মিথ্যা জখমী সার্টিফিকেটের কারণে মামলায় জটিলতার সৃষ্টি হয় । এতে করে বিচারপ্রার্থীরা ন্যায় বিচার থেকে যেমন বঞ্চিত হন । আবার তেমনি মিথ্যা মামলায় ফেঁসে গিয়ে বছরের পর বছর কারাবন্দি হয়েও থাকতে হয় ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, একটি জখমি সনদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আমার নতুন একজোড়া জুতা ক্ষয় হয়ে গেছে । এই পুলিশ কর্মকর্তার মত অনেক পুলিশ কর্মকর্তারই একই অবস্থা । একজন মামলার আসামি বলেন, মারামারির একটি ঘটনায় সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তির নামে ৩২৬ ধারায় অর্থাৎ মারাত্নক আঘাতপ্রাপ্ত বানিয়ে সার্টিফিকেট দিয়েছেন একজন ডাক্তার ।
রহস্যজনক মিথ্যা জখমী সনদ সরবরাহকারী ডাক্তাররা ঘুষ, দুর্নীতি , অনিয়ম এবং অপকর্ম করেও তারা যুগের পর যুগ, বছরের পর বছর থেকে যান একই হাসপাতালে । তারাই আবার প্রমোশন পান ।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রহমান এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, হাসপাতালে কদাচিৎ এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অপরদিকে কথা বললে রাজশাহী শহর রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের নেতা জামাত খান বলেন -সমগ্র চিকিৎসক জাতিকে কলুষিত করছে মুষ্টিমেয় কিছু অসাধু দূর্নীতিবাজ চিকিৎসক,আর তাই এদের এখুনিই আইনের আওতায় এনে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।