রাবিতে ১৯৭৬ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৩৯টি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে বিচার হয়েছে ৪টি। এই ৪টি মামলাই শিক্ষক হত্যাকাণ্ডের।

রাবি প্রতিনিধি, রাজশাহীঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭৬ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৩৯টি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে বিচার হয়েছে ৪টি। এই ৪টি মামলাই শিক্ষক হত্যাকাণ্ডের। দীর্ঘ এই সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও শিক্ষার্থী ও দিনমজুর হত্যার ৩৫টি মামলা বিচার হয়নি। এমনকি অনেক হত্যাকাণ্ডের রহস্যও উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ-প্রশাসন। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও নিহতের স্বজনেরা এসব ঘটনার বিচার দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম করলেও টনক নড়েনি তাদের। আসামিরা রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে এসব মামলার ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনকে তাগাদা দিলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৫ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষক দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হন। ২০০৪ সালে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ইউনুস, ২০০৬ সালে ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের, ২০১৪ সালে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শফিউল ইসলাম লিলন এবং ২০১৬ সালে ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী খুন হন। এদের মধ্যে চলতি মাসের ১৫ই এপ্রিল শিক্ষক শফিউল ইসলাম ও গত বছরের ৮ই মে অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করে আদালত।

এছাড়াও ১৯৭৬ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নীহার বানু সর্বপ্রথম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এরপর ১৯৮২ সালে চার শিবিরকর্মী ও এক ছাত্রলীগকর্মী, ১৯৮৮ সালে আসলাম হোসাইন ও আজগর আলী নামের দুই শিক্ষার্থী ও ছাত্রমৈত্রীর নেতা জামিল আকতার, ১৯৮৯ সালে শিবির নেতা শফিকুল ইসলাম, জাসদ ছাত্রলীগ নেতা শাহজাহান, পত্রিকার এক হকার, ১৯৯০ সালে শিবির নেতা খলিলুর, ১৯৯২ সালে জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মুকিম, শিবির নেতা আজিবরসহ চারজন বোমা তৈরির সময় বিষ্ফোরণে, ১৯৯৩ সালে ছাত্রমৈত্রী নেতা জোবায়ের চৌধুরী রিমু ও তিন শিবির নেতা, ছাত্রদল নেতা বিশ্বজিৎ, ছাত্র ইউনিয়নের তপন রায়, ১৯৯৫ সালে ইসমাঈল নামের এক শিক্ষার্থী, ছাতমৈত্রীর নেতা দেবাশীষ ভট্টাচার্য রূপম, ১৯৯৬ সালের ছাত্রদল নেতা আমান উল্লাহ আমান, ২০০৭ সালে তত্ত্ববধায়ক সরকারের আমলে ক্যাম্পাসে পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষে এক রিকশাচালক, ২০০৯ সালে শিবির নেতা শরীফুজ্জামান নোমানী, ২০১০ সালে ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেন, নাসরুল্লাহ নাসিম, ২০১২ সালে ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল হাসান সোহেল, ২০১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থী, ২০১৪ সালে সোহরাওয়ার্দী হলে ছাত্রলীগকর্মী রুস্তম আলী এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালে গণযোগযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মোতালেব হোসেন লিপু খুন হন।

ওই সময় লিপু হত্যার তদন্ত কর্মকর্তা অশোক চৌহান তদন্তের বেশ অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু দুই বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও ঘটনা ধোঁয়াশাই রয়ে গেছে। চার হাত ঘুরে মামলার তদন্তভার সিআইডিকে দেওয়া হলেও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন হয়নি। বর্তমানে সিআইডির পরিদর্শক আজিজুর রহমান মামলাটি তদন্ত করছেন।

তিনি বলেন, ‘তদন্তের কাজ চলছে। কিছুদিন আগে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি।’ চারজন শিক্ষকের মামলা ছাড়া অন্যগুলোর বিচার হয়নি। এমনকি মামলাগুলো কি অবস্থায় রয়েছে সে বিষয়েও কিছু জানা যায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, ‘আমরা দায়িত্বে থাকা অবস্থায় পুলিশ-প্রশাসনকে বিভিন্ন সময়ে তাগাদা দিয়েছি। নিহতের পরিবার পরিজনদের মধ্যে যারা মামলার বাদী হয়েছে তাদেরকেও নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে বলতাম।’

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ায় অপরাধীরাও পার পেয়ে যাচ্ছে। ফলে এসব ঘটনা বেড়েই চলেছে। আমি পুলিশ-প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি এখনও যেসব মামলা ঝুলে আছে সেগুলো যেন দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা হয়।’

 

Next Post

রাজশাহীতে মাংস ব্যবসায়ীকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা।

শুক্র মে ৩১ , ২০১৯
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে গরুর মাংস বিক্রি করায় এক ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। আজ বৃহস্পতিবার নগরীর লক্ষীপুর বাজারে ক্রেতা সেজে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাসান মারুফ। লক্ষীপুর বাজারে রমযানে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে মাংস বিক্রি করছিল ব্যাবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর রাজশাহীর নির্বাহী […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links