রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে সচিবের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ

আভা ডেস্কঃঃ রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ।

বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় জড়িত থাকায় বোর্ডের বিভিন্ন জনের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন।

সম্প্রতি রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে নয়জন কর্মকর্তার বেতন স্কেল নির্ধারণ বিবরণী ও গোপনীয় কাগজপত্র ফটোকপি করার প্রতিবাদ করায় দুই কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করার পাশাপাশি তাদের গতিপথে বাঁধাপ্রদান ও বেআইনি পন্থায় উভয় কর্মকর্তাকে সচিবের কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে বোর্ডের সচিব ড. মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে। গত ১২ সেপ্টেম্বর বিকেলে বোর্ডের সচিবের কক্ষে এই ঘটনা ঘটে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বোর্ডের উপ-পরিচালক (হিসাব ও নিরীক্ষা) বাদশা হোসেন বেশ কিছু কর্মকর্তার বেতন সমন্বয় সংক্রান্ত নথি ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি অফিসের বাইরে প্রেরণের উদ্দেশ্যে ফটোকপি করা হয়। ইতিপূর্বেও ঐ দফতর থেকে বিভিন্ন বেতন শিট বিকৃত করে এবং নোট শিটের কপি বাইরে সরবরাহ করার অভিযোগ ছিল। বিষয়টি জানতে উপ-সচিব (প্রশাসন) ওয়ালিদ হোসেন ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মানিকচন্দ্র সেন দুজনে মিলে সচিব ড. মোয়াজ্জেম হোসেনের কক্ষে যান।

এসময় উপ-সচিব (প্রশাসন) ওয়ালিদ হোসেন জানতে চান, সংস্থাপন শাখায় রক্ষিত গোপনীয় কাগজপত্র ফটোকপি করার বিষয়ে চেয়ারম্যান স্যারকে জানানো হয়েছে কিনা কিংবা তাঁর অনুমতি নেয়া হয়েছে কিনা। এতে সচিব ও ডিডি ক্ষিপ্ত হয়ে বাকবিন্ডায় জড়িয়ে পড়েন ওয়ালিদের সাথে। এক পর্যায়ে উপ-সচিব (প্রশাসন) ওয়ালিদ হোসেন ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মানিকচন্দ্র সেনকে তার রুমে প্রায় একঘন্টা আটকে রাখেন এবং সচিব নিজেসহ দায়িত্বরত আনসারকে ডেকে ওয়ালিদ হোসেনকে শারীরিক ভাবে হেনস্থা করেন।

শিক্ষা বোর্ডের অধিকাংশ কর্মকর্তা এবিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, সচিব কর্তৃক দু’জন কর্মকর্তাকে ঘর থেকে বের হতে বাঁধা দেয়া ও জোড়পূর্বক নিজের কক্ষে অবরুদ্ধ বা আটকে রাখার বিষয়টি প্রত্যক্ষভাবে বেআইনী কাজের সমতুল্য। কারণ হিসেবে তাঁরা বলেন, ‘আইনি বিষয়কে প্রাধান্য দিলে দন্ডবিধির ৩৩৯ ও ৩৪০ ধারায় সচিবের উক্ত আচরণটি বেআইনি। সচিবের এমন ক্ষিপ্ত আচরণ ও ভিডিও ফুটেজে উঁনার ঐসময়ের কর্মকান্ড দেখে অতিসহসায় অনুধাবন করা যায় যে, তিঁনি পূর্বপরিকল্পিত ভাবে এমন অবরুদ্ধ ও হেনস্তার ঘটনাটি ঘটিয়েছেন।

ভুক্তভোগী উপ-সচিব (প্রশাসন) ওয়ালিদ হোসেনসহ ভিডিও ফুটেজের বরাদ দিয়ে সেখানে কর্মকর্তারা আরো বলেন, তিঁনি ঐ সময় আনসারের সহোযোগিতায় দুজন কর্মকর্তাকে নিজের রুমে জোড়পূর্বক আটকে রেখে নিজের মোবাইল থেকে অপরপ্রান্তের কাউকে বলছেন ‘বাহিনী পাঠাও, আবার কখনোবা বা ফোন করে বলছেন থানার ওসিকে পাঠাও’। তবে, অবরুদ্ধের পয়তাল্লিশ মিনিট অতিবাহিত হয়ে যাবার পরে বহিরাগত একাধিক বহিরাগত ব্যক্তি সচিবের রুমে প্রবেশ করে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ আছে।

ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষন করে দেখাগেছে, গত ১২ সেপ্টেম্বর বিকেলে বোর্ডের সচিবের কক্ষে দাপ্তরিক একটি বিষয় নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডা চলার এক পর্যায়ে ওয়ালিদ হোসেন সচিবের কক্ষ থেকে বাইরে চলে যেতে চাইলে সচিব দৌড়ে গিয়ে রুমের দরজা লক করে দিয়ে বাইরে থাকা আনসারকে ভেতরে ডাকেন। ঐ কক্ষে আসা ওয়ালিদ ও মানিকচন্দ্রকে সচিব ও আনসার কোন ক্রমেই বাইরে বের হতে দিচ্ছিলনা। বিষয়টি প্রত্যক্ষভাবেই উপরোক্ত ধারার লঙ্ঘনের অপচেষ্টা বলে মন্তব্য অনেকের।

অন্যদিকে, একাধিকবার চেষ্টা করেও ঐ দুই কর্মকর্তা যখন বের হতে পারছিলনা তখন তাঁরা তাদের সহকর্মীদের কাছে মোবাইল করে সহোযোগিতা চান। অন্যদিকে, ঐ দুই কর্মকর্তাকে বাইরে যেতে দেওয়া তো দূরের কথা, সচিব ও আনসার শারিরীক শক্তি প্রয়োগ করে নিজের কক্ষে প্রায় ঘন্টাখানেক অবরুদ্ধ বা আটকিয়ে রাখেন। দরজার অপরপ্রান্তে ততক্ষণে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারির আগমন ঘটলেও ভেতর থেকে সচিব দরজা খোলেননি। তিনি বারবার নানাধরনের বিভ্রান্তিকর কথা বলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছেন আটকে থাকা উভয় কর্মকর্তাকে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা জানান, কখনো সচিব বলছেন, তোমরা আমাকে মেরে ফেলতে এসেছো ! কখনোবা বলেছেন, তোমরা আমাকে তুলে নিতে এসেছো।

আমি পুলিশ ডেকে তোমাদেরতে ধরিয়ে দেবো। লাঞ্চিত হওয়া কর্মকর্তারা একাধিকবার সচিব সাহেবকে বলেছেন, চলেন চেয়ারম্যান স্যারের কাছে চলেন। কিন্তু, সচিব তাঁদের কোন কথাই কর্ণপাত না করে, উভয় কর্মকর্তাকে বেআইনিভাবে জোড়পূর্বক আটকে রাখেন নিজের কামরায়। ভুক্তভোগি কর্মকর্তা ওয়ালিদ হোসেন একাধিকবার বাইরে বের হতে চাইলেও সচিব দৌড়ে গিয়ে ওয়ালিদকে জাপটে ধরেন। কখানো বা আনসারকে দিয়ে জোড়পূর্বক রুমে বসিয়ে রাখেন। একজন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা হয়ে নিজের অফিসের অন্য একজন কর্মকর্তার সাথে ধস্তাধস্তি আর বেআইনি পন্থায় নিজের কক্ষে আটকে রাখার বিষয়টি বোর্ডে কর্মরতদের কাছে বেমানান ও অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি বলেই বিবেচিত হয়েছে বলে মন্তব্য অনেকের। ঐ দিনে সে অনাকাঙ্খি ঘটনাটি বিভাগীয় তদন্তাধিনবস্থায় থাকার পরেও ভিডিও ফুটেজটি সাংবাদিক মহলসহ অন্যদের কাছে কিভাবে গেলো সেটি নিয়েও সন্দেহের তীর এখন বোর্ড সচিবের দিকে বলে মন্তব্য অনেকের।

উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে বিভাগীয়ভাবে হিসাব ও নিরীক্ষা শাখার ডিডি বাদশা হোসেন, উপ-সচিব (প্রশাসন) ওয়ালিদ হোসেন ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মানিকচন্দ্র সেনকে  কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেছেন বোর্ড চেয়ারম্যান বলে নিশ্চিত করেছেন বোর্ড চেয়ারম্যান।

এনিয়ে গত ১৩ সেপ্টম্বর শিক্ষাবোর্ডের কর্মচারী ইউনিয়ন বিশেষ সভার ডাক দেয়।  সভায় ১২ সেপ্টেম্বর ঘটে যাওয়া ঘটনার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিবাদে সচিব ড. মো মোয়াজ্জেম হোসেন ও উপপরিচালক (হিসাব ও নিরীক্ষা) বাদশা হোসেন এ ব্যাপারে আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।

বিষয়টি নিয়ে উপ-সচিব (প্রশাসন) ওয়ালিদ হোসেন জানান, অফিসের গোপন কাগজপত্র অসৎ উদ্দেশ্যে ফটোকপি করা হয়েছে। বিষয়টি জানতে চাওয়ায় আমাকেসহ আরও এক কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করার পাশাপাশি প্রায় ঘন্টাখানেক অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল সচিবের কক্ষে। বিষয়টি লিখিতভাবে শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য যে এর আগেও সচিবকে  গত ১৬-৯-২০১৯ সালে একবার শোকজও হয়েছেন। তিঁনি বিভিন্ন ধরনের মামলার ফাইল ছাড়াও অন্যান্য শৃঙ্খলাজনিত নথি অযাচিত কারণেই প্রায়শই আটকে রাখেন। এছাড়াও বোর্ড চেয়ারম্যান কর্তৃক ঢাকাস্থ হাইকোর্টে আইনি সহায়তা পাবার জন্য আরো একজন উকিল নিয়োগের সিদ্ধান্ত দাপ্তরিকভাবে গৃহীত হলেও বোর্ড সচিব সেই ফাইলটিও আটকে দেন নিজের ক্ষমতা বলে। সম্প্রতি শিক্ষা বোর্ডের অভ্যন্তরিন একটি ফাইলও তিঁনি নিজের ক্ষমতা বলে অযাচিত কারণেই আটকে রাখেন।

বিষয়গুলো শিক্ষা বোর্ডে কর্মরতদের মাঝে প্রশ্নবিদ্ধ হিসেবে প্রতিয়মান হয়েছে বলে অভিযোগ অনেকের। এছাড়াও অভিযোগ আছে, শিক্ষা বোর্ডের রুলস এন্ড রেগুলেশনের ২ এর ১ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, ‘শিক্ষা বোর্ডের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা চেয়ারম্যানের দিক নির্দেশনা মোতাবেক সচিবসহ অন্যান্য অধঃস্তন কর্মকর্তাকে সকল কাজ করতে হবে’। কিন্তু বোর্ডের সচিব মহোদয় অধিকাংশ সময়ই সেই নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজের মন মতো কাজ করেন বলেও অভিযোগ আছে একাধিক। এবিষয়ে, সেখানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারিরা বলেন, উপ-সচিব ওয়ালিদ হোসেন যদি সচিবের সাথে কোন বিষয়ে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পরেন কিংবা অসদাচরণ করেন তবে তিঁনি বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যান স্যারের কাছে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ দেওয়াটা উচিত ছিল।

তিনি জোড়পূর্বক উভয় কর্মকর্তাকে তাঁর সরকারি কক্ষে আটকে রাখার কোন অধিকার রাখেন না। আর অন্যদিকে, দাপ্তরিক কোন গোপনীয় নথি বা ফাইল যদি সংশ্লিষ্ট কোন কর্মকর্তা প্রয়োজন পরে তবে নিয়মনীতি মান্য সাপেক্ষে চেয়ারম্যান স্যারের অনুমতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট শাখা প্রধানের মাধ্যমে নেয়াটা বৈধ। শুধুমাত্র একটি চিরকুটের মাধ্যমে কোন গোপনীয় নথি বা ফাইল নিজের হস্তগত করাটা নিয়মনীতি বহির্ভূত। কারণ, পূর্ববর্তী সময়ে এইপন্থায় গোপনীয় নথি ও ফাইল নিজেদের হস্তগত করে সেগুলো সবার অগোচরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করায় অনেক ঝোক্কিঝামেলা পোহাতে হয়েছে শিক্ষা বোর্ডকে।

এ বিষয়ে কথা বলতে সচিব ড. মোয়াজ্জেম হোসেনকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি।

Next Post

ক্রিকেট আম্পায়ার্স এসোসিয়েশন রাজশাহী শাখার পক্ষে রাসিক মেয়রকে সম্মাননা প্রদান

রবি অক্টো. ৩ , ২০২১
আভা ডেস্কঃ বাংলাদেশ ক্রিকেট আম্পায়ার্স এন্ড স্কোরার্স এসোসিয়েশন রাজশাহী জেলা শাখার পক্ষ থেকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের  মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটনকে সংবর্ধিত করা হয়েছে। রোববার রাত ৯টায় নগর ভবনে মেয়রকে ফুলেল শুভেচ্ছা, সম্মাননা স্মারক ও এসোসিয়েশনের লোগো সম্বলিত জ্যাকেট উপহার প্রদান করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট আম্পায়ার্স এন্ড […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links