রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে চাকুরী বিধি লংঘন, ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি সাধনের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর হাবিবুর রহমান এর বিরুদ্ধে এবার বোর্ডে আর্থিক ভাবে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতি সাধন ও চাকুরী বিধি লংঘনসহ নিয়মবহির্ভূত ভাবে বোর্ড চেয়ারম্যান হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান  প্রফেসর মোঃ হাবিবুর রহমান কলেজ পরিদর্শক থাকাকালে সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পদে গত ২৯ জুলাই-২০২০ তারিখে (স্মারক নঃ৩৭.০০.০০০০.০৬৭.০৬.০০২.২০১৭–১৮৪.তাং২৯/৭/২০২০. মোতাবেক) পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়ে অত্র বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক পদ থেকে অবমুক্ত হয়ে অধ্যাপক, ব্যবস্থাপনা, বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বাংলাদেশ, ঢাকাতে যোগদান করেন। উক্ত স্মারকের আদেশে লেখা ছিল পরবর্তী পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত তিনি পূর্বপদে ও কর্মস্থলে কাজ করবেন। চাকুরী বিধি নিয়ম অনুসারে তিনি ০৫/০৮/২০২০ থেকে ২৪/১১/২০২১ পর্যন্ত তিনি রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ইনসিটু কলেজ পরিদর্শক পদে কর্মরত ছিলেন এবং উক্ত সময়ে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর বাংলাদেশ, ঢাকা এর অধ্যাপক ব্যবস্থাপনা ও বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন । বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাবে মাউশি ঢাকায়  যোগদান করায় তিনি বেতন গ্রহণ করবেন প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। কিন্তু তিনি ঢাকায় অধ্যাপক ব্যবস্থাপনা ও বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বাংলাদেশ, ঢাকাতে যোগদান করলেও তার যোগদানের কোন কাগজপত্র রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে তার ব্যক্তিগত নথিতে দেওয়া নাই।

তিনি চাকুরী বিধি সুস্পষ্টভাবে লংঘন করে অত্যন্ত সুকৌশলে ও প্রতারণার মাধ্যমে তৎকালীন সচিব  মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন ও উপ-পরিচালক ( হিসাব ও নিরক্ষক)  বাদশা হোসেন এর সাথে যোগসাজসে ০৫/০৮/২০২০ থেকে ২৪/১১/২০২১ পর্যন্ত প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা বেতন এবং বিভিন্ন ভাতাদি অন্যায় ও অনৈতিকভাবে উত্তোলন করে গ্রহণ করেন। কোন সরকারি কর্মকর্তা ইনসিটু হিসাবে কোথাও কর্মরত থাকলে তিনি সেই প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন ভাতাদি গ্রহণ করতে পারেন না এবং তার প্রেষণ তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যান উক্ত সময়ে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে কর্মরত থেকে বেতন ভাতাদি এবং প্রেষণ কর্মকর্তা হিসেবে সকল ধরনের আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেন। এতে বোর্ডের প্রায় আরো ২৫ লক্ষ টাকা অন্যায় ভাবে গ্রহণ করা হয়েছে । ওই সময় তিনি যে প্রেষণে ছিলেন না এবং তিনি যে ইনসিটু কলেজ পরিদর্শক পদে কর্মরত ছিলেন তা তার চেয়ারম্যান হওয়ার আদেশে স্পষ্ট করে লেখা আছে। কিন্তু তিনি রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রেষণ কর্মকর্তার ন্যায় সরকারের আইন, কানুন, নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে প্রতারণার মাধ্যমে সকল প্রকার আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে বোর্ডের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি সাধন করেন।

এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বাংলাদেশ ঢাকার সহকারি পরিচালক তানভীর আহমেদ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন তিনি বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সকল বিষয় দেখভাল করেন। তিনি জানান রাজশাহী বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ হাবিবুর রহমান অন্যায় ভাবে ইনসিটু কর্মকর্তা থাকাকালীন সময়ে রাজশাহী বোর্ড থেকে বেতন-ভাতাদি গ্রহণ করেছেন। তিনি যতদিন ইনসিটু কর্মকর্তা ছিলেন তার বেতন হওয়ার কথা প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঢাকা থেকে। এক্ষেত্রে প্রফেসর মোঃ হাবিবুর রহমান মাউশি থেকে কোন রিলিজ নেওয়ার কথা থাকলেও তিনি তা নেননি এবং তিনি রাজশাহী বোর্ডে চেয়ারম্যান হিসেবে অন্যায় ও অনৈতিকভাবে যোগদান করেছেন। এই যোগদানের সময় তার মাউশি থেকে রিলিজ নেওয়া উচিত ছিল। এক্ষেত্রে তিনি চাকরিবিধি সুস্পষ্টভাবে লংঘন করেছেন এবং রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেছেন।

তার সাথে পদোন্নতিপ্রাপ্ত সঞ্জীব কুমার হালদার বর্তমানে অধ্যাপক ব্যবস্থাপনা, বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বাংলাদেশ ঢাকা তে যোগদান করেছেন। তিনি প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঢাকা থেকে বর্তমানে বেতন ভাতাদি গ্রহণ করছেন। তিনি তার পূর্বপদে উপ-পরিচালক এইচ.এস.টি.টি.আই রাজশাহীতে কর্মরত। এই পদে তিনি ইনসিটু কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত এবং তার প্রেষণ তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল হয়ে গেছে।

প্রফেসর হাবিবুর রহমান ইতিপূর্বে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের  বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বাংলাদেশ ঢাকা তে কর্মরত ছিলেন। তখন  তিনি বদলির সময় মা.উ.শি থেকে রিলিজ নিয়েছিলেন এবং বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঢাকা থেকে বেতন ভাতাদি গ্রহণ করেছিলেন এবং বদলির সময় এল.পি.সি ( শেষ বেতনের প্রত্যয়নপত্র) গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান হওয়ার পর তিনি সরকারি বেতন ভাতাদি গ্রহণ না করে একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারি বিধি ভঙ্গ করে অন্যায় ও অনৈতিকভাবে বেতন-ভাতাদি গ্রহণ করেছেন এবং সেই স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়মবহির্ভূতভাবে আত্মসাৎ করেন। সরকারের এই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সরকারি নিয়ম না মেনে চাকরি করার কারণে বোর্ডে তীব্র অশান্তি ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এবিষয়ে সরকারের তদন্ত করা উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ।

প্রসঙ্গত, সদ্য বিদায়ী বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর দেবাশীষ রনজন রায়ও একই ভাবে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা অবৈধভাবে বোর্ড থেকে উত্তোলন করেছেন।

উল্লেখ্য,,সম্প্রতি ১৮ টি আলমারি ক্রয় করেন শিক্ষা বোর্ড। এই আলমারি ক্রয়ে সরকারি কোন নিয়মনীতি মানা হয়নি। স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে গুটিকয়েক পছন্দের স্কুলকে দেওয়া হচ্ছে সেই আলমারি। আলমারি ক্রয়ে হয়নি কোন টেন্ডার। চেয়ারম্যানের স্বেচ্ছাচারিতার বহিঃপ্রকাশ উক্ত আলমারি ক্রয় ও বন্টন।

কথা বললে বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর হাবিবুর রহমান বলেন, আমি কোন নিয়ম বর্হিভূত কাজ করিনি। সবকিছু নিয়মের মধ্যে আছে। এখন আমি আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় বির্তক প্রতিযোগিতায় আছি পরে কথা বলবো বলে ফোন কেটে দেন।

Next Post

পলাশবাড়ীতে সাংবাদিক আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারের প্রতিবাদে মানববন্ধন

শনি জুন ৪ , ২০২২
পলাশবাড়ী(গাইবান্ধা)প্রতিনিধিঃ- পলাশবাড়ী রিপোর্টাস ইউনিটির সভাপতি আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও অপপ্রচারের প্রতিবাদে পলাশবাড়ী প্রেসক্লাব ও রিপোটার্স ইউনিটির যৌথ আয়োজনে ৪ জুন শনিবার  দুপুরে স্থানীয় চৌমাথা মোড়ে এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রেসক্লাব সভাপতি রবিউল হোসেন পাতার সভাপতিত্বে  বক্তব্য রাখেন,পলাশবাড়ী প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম রতন,সহ সভাপতি মুশফিকুর রহমান […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links