নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়ের পর মামলা ও রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ করেছে গোদাগাড়ী অঞ্চলের ভুক্তভোগী এক কৃষকের পরিবার ।
গত মঙ্গলবার রাত ১১ টার দিকে রাজশাহী জেলাধীন গোদাগাড়ীর বিজয়নগরের পাশে আলীগঞ্জ এলাকা থেকে সাদা মাইক্রোবাসে নবিউল্লাহ নামের এক ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে আসেন মহানগর ডিবির পিএসআই সালাম, এএসআই রহিদুল ও কনস্টেবল মিল্টনসহ কয়েকজন । এরপর শুরু হয় দেন-দরবার। ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত তাদের দাবী করেছিল কনস্টেবল মিল্টন।
পরবর্তিতে, দাবীকৃত অর্থ দিতে না পারায় ঐ আসামীকে মারাত্মকভাবে শারীরিক নির্যাতন করে ৩ কেজি গাঁজা দিয়ে চালান দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে । তবে ডিবি বলছে আমার তাকে দামকুড়া থানা এলাকা থেকে পেয়েছি । কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে অন্যকথা ।
প্রত্যক্ষদর্শী মুদির দোকানদার ইমতিয়াজ বলেন – রাত আনুমানিক ১১ টার দিকে বিজয়নগরে একটি সাদা মাইক্রো আমার দোকানের সামনে এসে নবীউল্লাহর বাড়ি খুজতে থাকে এবং তারা আমার দোকান থেকে সিগারেটও নেয় । এরপর তাদের একজন বলেন – আমরা জেলা ডিবির লোক,নবিউল্লাহ বাড়িটা কোথায় ? আমি বলি সার আমি চিনিনা । এরপর তারা সেখান থেকে চলে যায় ।
স্থানীয় আব্দুস সামাদ নামের এক আওয়ামীলিগ নেতা ও সাবেক মেম্বার বলেন – আমি বাসায় ঢোকার সময় আমার বাসার সামনে একটা সাদা মাইক্রো দেখতে পাই এবং মাইক্রতে থাকা ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করি এটা কার গাড়ি। ড্রাইভার বলে জেলা ডিবির গাড়ি।এ সময় আমি জেলা ডিবির এক ইন্সপেকটরকে ফোন দিলে তিনি জানান – তাদের কোন টিম আজ গোদাগাড়ীর দিকে টহলে নেই । আমার সন্দেহ হলে আমি গাড়িতির নাম্বার নোট করে রাখি যার নম্বর – রাজ মেট্রো -চ ৫১-০০০৩ । পরবর্তিতে জানতে পারি মাইক্রোটি মহানগর ডিবির ।
এদিকে ৩ দিন ধরে আসামী কি কারনে ডিবি হেফাজতে তার কোন সদুত্তর দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষও । মোবাইলও রিসিভ করেননি কেউই । শুধু তাই নয় গত ২ মাসে ডিবির বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে তার নিম্নরূপ –
পদ্মার চরের এক মেম্বারকে ধরে এনে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে দাবি করা হয় ৫ লক্ষ টাকা
- গ্রেফতার করা হয় নগরীর হোসনীগঞ্জের তুষারকে, নেয়া হয় ২০ হাজার টাকা
- দামকুড়া থানাধীন মাদক ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীরকে ধরে নেয়া হয় ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা ।
- কাটাখালী থানাধীন বাবুকে ধরে নেয়া হয় ২৫ হাজার টাকা ।
- আন্ধারকোটা খোলাবোনার পলাশকে ধরে নেয়া হয় ৩০ হাজার টাকা ।
- জাল টাকা সংক্রান্ত এক ব্যাক্তিকে ছেড়ে দেয়া হয় ৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে
- কাঠাল বাড়িয়া এলাকায় সাবেক এক পুলিশ সদস্যর ছেলেকে ধরে তার কাছে থেকে নেয়া হয় ৩০ হাজার টাকা ।
- ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯ কনস্টেবল রিপন বিজিবির হাতে গ্রেফতারের পর ক্লোজ হন পুলিশ লাইনে
- এর আগে ৩০০ বোতল উদ্ধারকৃত ফেন্সিডিল বিক্রির দায়ে ক্লোজ হয় কন্সটেবল সিকদার
- এএসআই রহিদুল ২ মাস আগে বদলি হবার পরেও বহাল তবিয়তে ডিবিতে
কনস্টেবল মিল্টন পালন করছেন ক্যাশিয়ারের ভূমিকা,অভিযোগ রয়েছে তাকে নিয়োগ করেছেন এক উর্দ্ধতন কর্মকর্তা,কনস্টেবলের আচরণ তাই অনেকটাই ওসির মতনই,তোয়াক্কা করেন না কাউকে।
তবে মাঠ থেকে শুরু করে দফতর পর্যন্ত কন্ট্রোল করেন খোদ ডিসি নিজেই ।কিন্তু তারপরেও এমনটা কেন …?
এ বিষয় গুলি নিয়ে কোথাও মুখ খুললে পরিণতি আরও খারাপ হবে বলে হুমকিও দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন জনকে। এ অবস্থায় গ্রেফতার বাণিজ্যে জড়িত ডিবি কর্মকর্তাদের হাত থেকে রেহাই পেতে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন রাজশাহীর সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গরা ।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার মিডিয়া মুখ্যপাত্র ইফতেখায়ের আলম জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। সেখানে একজন ডিসি আছেন, আপনারা চাইলে তার সাথে কথা বলতে পারেন। এরপরও যদি এরুপ হয়, তাহলে তদন্ত পুর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।