নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহী নগরীর ৩০টি পয়েন্টের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাগুলো (সিসি ক্যামেরা) অকেজো হয়ে পড়েছে। কিন্তু সেগুলো মেরামতে উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। এই সুযোগটিই কাজে লাগাচ্ছে অপরাধী চক্রগুলো। তারা নগরজুড়ে বহাল তবিয়তে বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম ঘটিয়ে যাচ্ছে। ক্যামেরা নষ্ট থাকায় তাদেরকে চিহ্নিত করতেও হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নগরবাসীর দাবি, তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনেকটাই উদাসীন। এজন্যই এখনও ক্যামেরাগুলো মেরামতে কোনো পদক্ষেপ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অপরাধ রুখতে নগরজুড়ে ৮০টিরও অধিক সিসি ক্যামেরা বসানো হয়। ২০১৬ সালে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নগরীর ৩২টি পয়েন্টে এবং মহানগর পুলিশের উদ্যোগে ৮টি পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা বসায়। এসব ক্যামেরায় ধারণকৃত চিত্র থেকে পুলিশ অপরাধীদের ধরতে সক্ষম হয়। ওই সময়ে নগরজুড়ে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও খানিকটা উন্নতি হয়। কিন্তু এখন বিভিন্ন পয়েন্টের ক্যামেরাগুলো অকেজো হয়ে পড়ায় প্রায়ই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে অপরাধীরা।
জানা গেছে, গত ২৫ মে ওই এলাকায় পর্দা গ্যালারি নামের একটি দোকান থেকে নগদ অর্থ ও মালামাল চুরির পর দোকানটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে দোকানে থাকা কোটি টাকার মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পহেলা এপ্রিল নগরীর রাণীবাজার এলাকায় একটি হার্ডওয়্যারের দোকানের লোহার গ্রিল কেটে নগদ দুই লাখ টাকাসহ দোকানে থাকা কম্পিউটার ও মোবাইল চুরির ঘটনা ঘটে। তবে দোকানের ভেতরে লাগানো একটি সিসি ক্যামেরার সাহায্যে দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করে পুলিশ। গত ৮ ফেব্রুয়ারি নগরীর মিঠুর মোড় এলাকায় যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদের ভাড়াবাড়ির তালা ভেঙে চোরেরা স্বর্ণালঙ্কার, ল্যাপটপ, লক্ষাধিক টাকাসহ মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে যায়। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে নগরজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলে নগরবাসী।
নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আনোয়ার বলেন, ‘নিরাপত্তার কারণে বিভিন্ন পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা লাগানো হলেও দীর্ঘদিন থেকে এগুলো অকেজো হয়ে আছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের যেন এ বিষয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। যা নগরবাসীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের দায়সাড়া মনোভাবকে স্পষ্ট করে।’ আরেক বাসিন্দা রুবেল হাসান কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত ক্যামেরাগুলো মেরামতের দাবি জানান।
পুলিশ জানায়, কিছুদিন আগে নগরীতে একটি বাড়ি থেকে ৫ লাখ টাকা চুরির ঘটনা ঘটে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে বসানো একটি সিসি ক্যামেরার সাহায্যে অপরাধীকে শনাক্ত করে সেই টাকা উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়াও ঈদকে সামনে রেখে নগরীতে মানুষজনের আনাগোনা বেড়েছে। এই সময়টাতে অপরাধী চক্রগুলো আরও সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছে তারা।
রাজপাড়া থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা নগরীতে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েই দ্রুত কেটে পড়ছে। বিভিন্ন পয়েন্টে অকেজো হয়ে পড়া ক্যামেরাগুলোর সুযোগ নিচ্ছে তারা। ফলে তাদেরকে শনাক্ত করাও কঠিন হয়ে পড়ছে।’ তিনি বলেন, ‘ক্যামেরা ভাল থাকা অবস্থায় নগরবাসী যেমন উপকার পেয়েছিল, তেমনি আমাদের জন্যও বেশ সুবিধা হয়েছিল। অপরাধীরা ধরা পড়ছিল।’
কথা বললে, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, ‘দুয়েকটি পয়েন্টে ক্যামেরা নষ্ট হয়েছে। সেগুলো শীঘ্রই মেরামত করা হবে।’
এস/এল