রাজশাহী কলেজে গণহত্যা দিবস উপলক্ষে নানা আয়োজন

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহী কলেজে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।এসব কর্মসূচির মধ্যে ছিল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক পোস্টার ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন কলেজ সংশ্লিষ্ট ছয়জন শহিদের পরিবারকে সম্মাননা প্রদান ও শহিদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের স্মৃতিচারণ, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও এক মিনিট ব্ল্যাক আউট। বৃহস্পতিবার(২৫ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজশাহী কলেজ অডিটোরিয়ামে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন কলেজ সংশ্লিষ্ট ছয়জন শহিদের পরিবারকে সম্মাননা প্রদান ও শহিদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের স্মৃতিচারণ করা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আব্দুল খালেক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. হবিবুর রহমান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক প্রফেসর আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, দিবস উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মো. ইলিয়াছ উদ্দিন ও শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হুদার সন্তান ফজলে তাহের বকুল।

রাজশাহী কলেজের যে ছয়জন শহীদ মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হন তারা হলেন-গণিত বিভাগের শিক্ষক এস. এম. ফজলুল হক, শিক্ষার্থী ওয়াসিমুজ্জামান ওয়াসিম, শিক্ষার্থী শামসুল আলম, শিক্ষার্থী ওমর ফারুক, শিক্ষার্থী শওকত আলী এবং শিক্ষার্থী লায়েক আলী। শহিদ এস এম ফজলুল হকের পরিবারের পক্ষ থেকে সম্মাননা গ্রহণ করেন তার বোন-মনোয়ারা বেগম।

স্মৃতিচারণে মনোয়ারা বেগম বলেন ভাইয়ের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য অনেক জায়গায় গিয়েছি, অবশেষে আজ আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সম্মাননা প্রদানের জন্য তিনি রাজশাহী কলেজ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।

শহিদ শিক্ষার্থী ওয়াসিমুজ্জামান ওয়াসিম এর পরিবারের পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন তার বোন-জুলফিয়া বেগম।

তিনি বলেন,আমার ভাই রাজশাহী কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ভোর রাতে ঘরের দরজা ভেঙ্গে তাঁর ভাইকে পাকিস্তানি বাহিনী ধরে নিয়ে যায়। এরপর তিনি আর ফিরে আসেননি। সম্মাননা প্রদান করায় রাজশাহী কলেজের প্রতি তিনি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

শহিদ শিক্ষার্থী শামসুল আলমের পরিবারের পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন শহিদের তিন ভাই রবিউল আলম বাবু, আজিজুল আলম বেন্টু ও খাদেমুল ইসলাম। স্মৃতিচারণে শহিদ শামসুল আলমের ভাই রবিউল আলম বাবু বলেন,বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভ। এই মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহী কলেজের মোট ছয়জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী শহিদ হয়। তাদের পরিবারকে সম্মাননা প্রদানের জন্য তিনি রাজশাহী কলেজকে ধন্যবাদ জানান।

শহিদ শিক্ষার্থী শওকত আলীর পরিবারের পক্ষে সম্মননা গ্রহণ করেন তার বোনরোজিটি নাজনীন ও ভাই সেবগাতুল্লাহ সনেট। রোজিটি নাজনীন বলেন,১৪ এপ্রিল বাবাসহ দুই ভাইকে পাকিস্তানি বাহিনী ধরে নিয়ে যায়। তার ভাই শওকত আলী ছিলেন ছাত্রলীগের পত্রিকা বিষয়ক সম্পাদক। তাদের আত্মদান যে বৃথা যায়নি তার প্রমান দিল রাজশাহী কলেজ ৫০ বছর পরে স্বীকৃতি দিয়ে। তিনি আগামী প্রজন্মকে জানানোর জন্য এই শহিদদের নাম রাজশাহী কলেজে স্থাপনের আহ্বান জানান।

শিক্ষার্থী ওমর ফারুকের পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন তার পরিবারের সদস্য এ এন এস মুসা মাসুদ।শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হুদার সন্তান ফজলে তাহের বকুল স্মৃতিচারণে বলেন-,তার বাবা যখন শহিদ হন তখন তিনি খুব ছোট ছিলেন। তিনি বলেন পিতার কারণে গর্ববোধ করি। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে সম্মাননা প্রদান করায় তিনি রাজশাহী কলেজকে ধন্যবাদ জানান।

বিশেষ অতিথি সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. হবিবুর রহমান বলেন,স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে আমরা শহিদ পরিবারের স্বজনদের নিকট থেকে অনেক অজানা কথা জানতে পারলাম। এটা আমাদের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করবে। বঙ্গবন্ধুর সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মের নিকট যথাযথভাবে তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর মো, আব্দুল খালেক বলেন,ইতিহাস থেকে আমরা অনেক কিছু জানতে পারি। তবে শহিদ পরিবারের স্বজন ও সন্তানদের স্মৃতিচারণ আমাদের জ্ঞানকে আরো সমৃদ্ধ করবে। সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সম্মাননা গ্রহণ ও স্মৃতিচারণ করার জন্য শহিদ পরিবারের সদস্যদের প্রতি তিনি গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

অনুষ্ঠানের শেষে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ এবং বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের শহিদ সদস্যদের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

Next Post

'মায়াবিনী নুসরাত’ নামে সিনেমা প্রযোজনায় রত্না

বৃহস্পতি মার্চ ২৫ , ২০২১
আভা ডেস্কঃ ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় মুখ চিত্রনায়িকা রত্না। চলচ্চিত্রাঙ্গনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও দীর্ঘ দিন ধরে চলচ্চিত্র থেকে দূরে রয়েছেন। এবার ‘মায়াবিনী নুসরাত’ নামে সিনেমা প্রযোজনা করতে যাচ্ছেন এই নায়িকা। তামান্না ফিল্মসের ব্যানারে নতুন এ সিনেমার নাম নিবন্ধন করেছেন তিনি। এই সিনেমার গল্প ভাবনাও রত্নার। বিষয়টি উল্লেখ […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links