রাজশাহী কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এখন অনিয়ম দূর্নীতির আখড়া

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ নানান অভিযোগ আর অনিয়ম নিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে রাজশাহী কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর । দপ্তরটির প্রধান উপমহাপরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ভুইয়া নিজেই অনিয়মে অনিয়মে জড়িয়ে পড়ায়,দপ্তরটি হয়ে উঠেছে দূর্নীতির আখড়া।

অভিযোগ উঠেছে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শকদের তাদের দ্বায়িত্বরত এলাকায় পরিদর্শন করতে দিচ্ছেননা তিনি। পরিদর্শকের পরিবর্তে তিনি নিজেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স নবায়নসহ নতুন লাইসেন্স তৈরীর জন্য চিঠি করছেন এবং অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন। অথচ এই কাজগুলি পরিদর্শকদের। পরিদর্শকদের এলাকা পরিদর্শন কাজ স্থগিত রাখায় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান গুলো  দপ্তরের নিয়মনীতি মেনে চলছেনা। এর ফলে কারখানা ও প্রতিষ্ঠান গুলোতে বৃদ্ধি পেয়েছে শিশুশ্রম । সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও বন্ধ থাকছে না কোন প্রতিষ্ঠান।এক কথায় এই দপ্তর অবস্থা এখন হ-য-ব-র-ল এর মত।

একাধিক অভিযোগে জানা গেছে নওগাঁ জেলা শহরে গত নভেম্বর -২০২০ সালের পর থেকে সাপ্তাহিক বন্ধের দিনেও অনেক প্রতিষ্ঠান খোলা থাকছে, স্বভাবতই আইন মান্যকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উপ-মহাপরিদর্শক নিজেই পরিদর্শকের ভূমিকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছেন। পরিদর্শকের ভূমিকায় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে মালিকদের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলছেন বলেও অভিযোগ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান মালিকদের। মালিকদের অভিযোগ উপ মহাপরিদর্শক অনেক প্রতিষ্ঠান মালিকদের অফিসে ডেকে লেনদেনের বিষয়ে আলাপ আলোচনা করছেন। দামে দরে না মিললেই হয়রানি শিকার হচ্ছেন প্রতিষ্ঠান ও কল কারখানা মালিকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী বিসিক এর এক কারখানার মালিক বলেন, প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের তিনি অফিসে ডাকেন। অফিসে এসে চুক্তি অনুযায়ী টাকা দিলে লাইন্সেস নবায়ন হয়, অন্যথায় মামলা মোকদ্দমার ভয়ভিতি প্রদান করেন তিনি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের লাইন্সেস এবং নবায়ন না দিয়ে অহেতুক সময় ক্ষেপন করে হয়রানি করছেন। যে সকল প্রতিষ্ঠানের মালিকরা তার সঙ্গে দেখা করে তার চাহিদা পূরণ করছেন, শুধু মাত্র তাদের লাইসেন্স স্বাক্ষর করেন তিনি। এমন অভিযোগ করেন প্রতিষ্ঠান মালিকরা।

নাম প্রকাশে অনৈচ্ছুক চাঁপাইনবাবগঞ্জের একাধিক প্রতিষ্ঠান মালিক বলেন, ২০১৯ সালে রাজশাহী অঞ্চলের দ্বায়িতভার গ্রহন করেন উপ-মহাপরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ভুইয়া। তিনি দপ্তরটিতে যোগদানের পর থেকে তার দপ্তরের উচ্চমান সহকারী খায়রুজ্জামানকে সঙ্গে নিয়ে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। ইতিমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মে তদন্ত হয়েছে, তদন্তে দ্বায়িত প্রাপ্তদের ম্যানেজ করে স্ব-স্থানে বহালতবিয়তে আছেন তারা। চাহিদা মাফিক টাকা পেলে সকল কাগজ পত্র ঠিক!আর টাকা না পেলে কাগজপত্র সব ঠিকঠাক থাকলেও সব ভুল। নানা অজুহাত দেখিয়ে লাইসেন্স বা নবায়ন দিতে কাল ক্ষেপন করে সময় নষ্ট করছেন।

নওগাঁ শহরের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মালিক জানায়, ইতিপূর্বে সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে দোকান ও প্রতিষ্ঠান প্রায় শতভাগ বন্ধ নিশ্চিত হয়েছিল, কিন্তু গত প্রায় চার মাস যাবৎ এ বিষয়ে পরিদর্শকের কোন ভূমিকা না থাকায় আইন অমান্যকারী দোকান ও প্রতিষ্ঠান সংখ্যা অনেক গুনে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পরিদর্শকের সঙ্গে আলোচনা করলে তারা তাদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন ,দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত পরিদর্শকদের অদৃশ্য কারণে রাজশাহী অফিসের উপ মহাপরিদর্শক তাদের দ্বায়িত্ব পালনে বাধাগ্রস্ত করছেন। ফলে তারা পরিদর্শন করতে এবং আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারছেন না। এতে করে আইন মান্যকারী দোকান ও প্রতিষ্ঠান গুলো ব্যবসায়ীক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

তারা আরো বলেন, ডিআইজি নিজে তার দপ্তর এলাকার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান গুলি উপ মহাপরিদর্শকসহ তার পছন্দের পরিদর্শকদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। এদিকে রাজশাহী মহানগরীর আমেনা বিগ বাজার থেকে শুরু করে বাটার সু প্রতিষ্ঠানের মালিকদেরকেও লাইসেন্স না দিয়ে হয়রানি করছেন প্রতিষ্ঠানটির উপ-মহাপরিদর্শক মাহাফুজুর রহমান ভুইয়া বলে অত্র প্রতিষ্ঠান মালিকদের অভিযোগ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাইসমিলের এক কলকারখানার মালিক জানান, নামে মাত্র ত্রুটি ধরে দীর্ঘদিন যাবৎ লাইসেন্স নবায়নে হয়রানি করছে ডিআইজি ও পরিদর্শক। অফিসে ডেকে পাঠিয়ে মাসিক চুক্তি ও মোটা অংকের অর্থ দাবি করাও হয় উচ্চমান সহকারী খায়রুজ্জামানের মাধ্যমে। সেই চুক্তি অনুযায়ী টাকা না দেওয়ায় তাদের একের পর এক হয়রানি করা হচ্ছে।

তথ্যানুসন্ধানে প্রতিটি কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠানের মালিকদের নিকট থেকে মাসিক মাসোহারা নেওয়ায়র অভিযোগ উঠে আসে। পরিদর্শক তারেক, নাসরিন আক্তার, ইমরানসহ অনেকেই জড়িয়ে পড়েছেন এই মাসিক মাসোহারায় আদায়ে। দীর্ঘদিন একই দপ্তরে থাকার সুবাদে তারা কোন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা বা মামলা না দিয়ে শুধুমাত্র মাসিক মাসোহারা বিনিময়ে প্রতিষ্ঠান মালিকদের সুবিধা দিয়ে আসছেন।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, চাকুরীর শুরু থেকে দীর্ঘ ৬ বছর যাবৎ এই দপ্তরটিতে কর্মরত আছেন পরিদর্শক নাসরিন আক্তার। এই দীর্ঘ সময়ে দৃশ্যমান কোন মামলা মোকদ্দমা তার নেই। অপরদিকে একই অবস্থানে আছেন পরিদর্শক তারেক।

উল্লেখ্য, এর আগেও উপ-মহাপরিদর্শক ও উচ্চমান সহকারীর বিরুদ্ধে রাতে অফিস করা থেকে শুরু করে ভূয়া বিল ভাইচার তৈরীর অভিযোগে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় একাধিক সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। দপ্তরটি বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় থেকে কয়েকবার অনিয়মের তদন্ত দিয়েছিল। কিন্তু তদন্তকে প্রভাবিত করে স্বস্থানে বহালতবিয়তে আছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, দপ্তরটির উচ্চমান সহকারী খায়রুজ্জামানকে ব্যবহার করেই অনিয়ম করছেন তিনি। উচ্চমান সহকারীকে ব্যবহার করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠানের মালিকদের ডেকে অফিসে বসেই চলে দেনদরবার। এছাড়াও প্রতিটি প্রতিষ্ঠান থেকে মাসিক মাসোহারাও উত্তোলন করে এই উচ্চমান সহকারী।

অনিয়ম আর দূর্নীতি নিয়ে কথা বলতে দপ্তরটি প্রধান উপ-মহাপরিদর্শক মাহাফুজুর রহমান ভূইয়াকে ফোন (01554347793) দিলে তিনি উক্ত ঘটনা সত্য নয় বলে জানান। তিনি স্বীকার করেন যে, তিনি কলকারখানা পরিদর্শন করেন ও সকলকে অফিসে ডেকে পাঠান। তবে অনৈতিক সুবিধার নেওয়ার কথা অস্বিকার করেন।

Next Post

রাজশাহীতে ট্রেনে কাটা পড়ে এক ব্যক্তি নিহত

শুক্র মার্চ ৫ , ২০২১
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহীতে ট্রেনে কাটা পড়ে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজশাহীর কাটাখালী থানার হরিয়ান ও হাজরাপুকুর এলাকার মাঝামাঝি স্থানের রেললাইনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম সম্রাট হোসেন (৩২)। কাটাখালী পৌরসভার বাখরাবাজ মোল্লাপাড়া মহল্লায় তার বাড়ি। বাবার নাম আবদুল আলীম। রাজশাহী রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links