আভা ডেস্কঃ রাজশাহীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের বিভাগীয় সম্মেলনে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’-নিসচা এর চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনকে ‘বেকুব’ বলে আখ্যা দিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাজাহান খান এমপি। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় নওদাপাড়া বাস টার্মিনালে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন
সরকারের সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘ইলিয়াস কাঞ্চন একজন বিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ। উনি বলেন, এই আইন যদি সংশোধন হয় তাহলে বাংলাদেশ হেরে যাবে। কত বড় বেকুব হলে এ কথা বলতে পারে আমি আশ্চর্য হয়ে যাই! ওই আইনের মধ্যে আছে- আপনি যদি ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করেন তাহলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা হবে। আপনি যদি যেখান- সেখান দিয়ে রাস্তা পারাপার হন, ওইটা কিন্তু ট্রাফিক রুল ভঙ্গ করা হলো। তাহলে ওই রুল যে ভঙ্গ করবে তারও ১০ হাজার টাকা জরিমানা হবে। বলেন তো, এটা কি যৌক্তিক ইয়ে হলো? আমরা সেক্ষেত্রে বলেছি- এইটা হতে পারে না। আমরা সেটাকে কমিয়ে আনার জন্য বলেছি। এটাকে এক হাজার বা পাঁচশোর মধ্যে আনতে হবে। যারা বলেন সংশোধন দরকার নাই, তারা মূলত আইনই পড়েননি।
শাজাহান খানের বক্তব্য শেষ হলে মঞ্চের সামনে গিয়ে একজন শ্রমিক তার কাছে জানতে চান, ইলিয়াস কাঞ্চনের শাস্তি কেন হলো না। জবাবে শাজাহান খান বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে সরকারকে বলে দিয়েছি- ইলিয়াস কাঞ্চন কোন প্রোগ্রামে থাকলে আমরা মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দ সেই প্রোগ্রামে যাব না। ২২ অক্টোবর সড়ক নিরাপত্তা দিবস, সেখানে আমরা যাই নাই। কোন শ্রমিকও যায়নি, আমরা নেতারাও যাইনি। একটা কথা শুধু বলে রাখি আপনাদের, আমি এই সমস্ত কথা বলার কারণে আমার বিরুদ্ধে একটা মামলা দিসে, ১০০ কোটি টাকার মানহানির মামলা। সেই মামলা চলমান। সেই মামলার একজন উকিল এখানে উপস্থিত। আপনারা দোয়া করবেন মামলায় ওকেই বরং পরাজিত করে তার কাছেই আমরা ক্ষতিপূরণ চাইব।
শাজাহান খান বলেন, ‘বাংলাদেশে কিছু বুদ্ধিজীবী আছেন, যেই বুদ্ধিজীবীরা পরিবহন শ্রমিকদের দেখতে পারে না। তারা মনে করে যে, পরিবহন শ্রমিকদের ফাঁসি দিলেই বোধ হয় দুর্ঘটনা সব বন্ধ হয়ে যাবে। বাংলাদেশে এইটা যারা বলেন, তারা হাস্যকর কথা বলছেন। পৃথিবীতে বহু দেশেই তো হত্যা যারা করেন, ফাঁসির আইন আছে না? তার জন্য কি খুন বন্ধ হয়ে গেছে?
তিনি বলেন, ‘সড়ক পরিবহন আইনটি একটা প্রেক্ষাপটে তাড়াহুড়ো করে পাস করতে হয়েছিল। ঢাকায় একজন ছাত্র এবং একজন ছাত্রী গাড়িচাপায় যে মারা গেল মহাখালিতে, তার পরের পরিস্থিতি আপনাদের জানা আছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-ছাত্রীরা তখন আন্দোলন করছিল। ওই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী বললেন, আইন আমরা কঠোরভাবে পাস করব। আইন সেদিন পাস করতে হলো। সেই আন্দোলন প্রশমিত হলো। আইন যেটা পাস হলো তার অসঙ্গতিগুলো আমরা তুলে ধরেছি।
তিনি বলেন, ‘যুগোপযোগী আইন করার জন্য ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আমরাই কিন্তু দাবি তুলেছিলাম। এরশাদ সাহেবের শাসনামল থেকে আমরা বলে আসছি যুগোপযোগী আইন করতে হবে। তারপর অনেক সরকার পার করলাম। শেখ হাসিনার সরকারে এসে আমরা সেই আইন পাস করাতে পেরেছি। এর মধ্যে সংশোধনীগুলো আমরা দিয়েছি সরকারের কাছে। আমরা আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো তুলে ধরেছি। তিনজন মন্ত্রী এই কমিটির মেম্বার ছিলেন, সচিব ছিলেন কয়েকজন। তারা সকলেই কিন্তু আমাদের দাবির যে দিকগুলো যৌক্তিক সেগুলো গ্রহণ করছেন। আশা করছি- আগামী সংসদ অধিবেশনে বা বাজেট অধিবেশনে সংশোধনীগুলো পাস হবে।
এতে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী। বিশেষ অতিথি ছিলেন- রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক শিমুল বিশ^াস ও জয়পুরহাট জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফেডারেশনের রাজশাহী বিভাগীয় আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি আবদুল লতিফ ম-ল। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরী।