নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর কোর্ট চত্বরের পুরো এলাকাজুড়ে যত্রতত্র ছিল বিভিন্ন তামাকজাতপণ্যের হরেক রকমের দোকান। হাতের নাগাল থেকে (কোর্ট চত্বর) ধূমপায়ীরা বিড়ি-সিগারেটসহ বিভিন্ন তামাকজাত দ্রব্য ক্রয় করে ওই জনবহুল এলাকাটিতেই দেদারছে ধূমপান করতো। ফলে ধূমপানের ধোঁয়ার দিনের পর দিন যেন কোর্ট চত্বরের বাতাস হয়ে উঠেছিল একেবারে বিষাক্ত। আর এতে করে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কোর্ট চত্বরে আসা অধূমপায়ীরা প্রতিনিয়ত চরম স্বাস্থঝুঁকির মধ্যে ছিল।
তবে বর্তমান রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) হামিদুল হক কোর্ট চত্বরে বসা তামাকপণ্যের এসব অবৈধ পসরা অপসারণ করেছেন। ফলে বর্তমানে ওই এলাকায় কমে গেছে ধূমপায়ীদের দেদারছে ধূমপানের দৃশ্যও।
বৃহস্পতিবার (আজ ২৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সরেজমিনে কোর্ট চত্বর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চলতি বছরের শুরুতেই উন্নয়ন ও মানবাধিকার সংস্থা ‘এ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলমপন্টে-এসিডি’র উদ্যোগে রাজশাহী মহানগরীতে তামাকজাতপণ্যের দোকানের ওপর একটি বেসলাইন জরিপ পরিচালনা করা হয়। সেই জরিপ মোতাবেক, কোর্ট চত্বর ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আশেপাশে থাকা অন্তত ১৫টি তামাকজাতপণ্যের দোকানের একটিও সেখানে নেই। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গত ১১ জুন এক আদেশে হামিদুল হক রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব নেয়ার কিছুদিনের মধ্যেই সেখানে যত্রতত্র থাকা তামাকপণ্যের দোকানসহ অবৈধভাবে থাকা চায়ের দোকানগুলোও সরিয়ে দেয়া হয়েছে। সবগুলো দোকান অপসারণ করায় পুরো এলাকায় বিরাজ করছে স্বাস্থসম্মত পরিবেশ। পুরো কোর্ট চত্বর এলাকায় ওই সময় কাউকে ধূমপান করতেও দেখা যায়নি। ফলে জেলা প্রশাসকের এমন উদ্যোগের পর থেকেই ধূমপায়ীদের ধূমপানের ধোঁয়া থেকে প্রতিনিয়ত কোর্ট চত্বরে আসা অধূমপায়ীরা রক্ষা পাচ্ছেন।
রাজশাহীর উন্নয়ন ও মানবাধিকার সংস্থা ‘এ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি’র তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের এডভোকেসি অফিসার মো. শরিফুল ইসলাম শামীম বলেন, ‘গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাাকো সার্ভে-গ্যাট্স ২০১৭ এর রিপোর্ট অনুযায়ী- বাংলাদেশের সরকারি অফিস/বিল্ডিং ও এর আশেপাশে ২১ দশমিক ৬শতাংশ অধূমপায়ী সেকেন্ডহ্যান্ড (প্যাসিভ) স্মোকিংয়ের শিকার হয়। এছাড়া কর্মক্ষেত্রে ৪২ দশমিক ৭শতাংশ, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ১২ দশমিক ৭শতাংশ, পাবলিক পরিবহনে ৪৪শতাংশ, রেস্টুরেন্টে ৪৯ দশমিক ৭শতাংশ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৮ দশমিক ২শতাংশ এবং নিজ বাড়িতে ৩৯শতাংশ অধূমপায়ী প্যাসিভ স্মোকিংয়ের শিকার হচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মহোদয় শুরু থেকে অনেক আন্তরিক। তিনি ইতোমধ্যেই পাবলিক প্লেসে ধূমপান বন্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কোর্ট চত্বর থেকে তামাকপণ্যের দোকান অপসারণের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ এই সরকারি অফিস ও এর আশেপাশে (পাবলিক প্লেস) ধূমপানমুক্ত করার উদ্যোগ। তার মাধ্যমে রাজশাহীর সকল পাবলিক প্লেস ধূমপানমুক্ত হবে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা অনেকাংশে এগিয়ে যাবে বলে আমরা প্রত্যাশা রাখি।’
কোর্ট চত্বর থেকে তামাকপণ্যের দোকান অপসারণ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি)হামিদুল হক বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেয়ার পর লক্ষ্য করলাম- কোর্ট চত্বরের পুরো এলাকা যেন খাজা বাবার মাজারের মত হয়ে গেছে। দেখলাম, কোর্ট চত্বরে এমন কিছু মানুষ আসে যা অনাকাঙ্খিত। যাদের এখানে আসার কোনো প্রয়োজন নেই তারা অহেতুক এখানে এসে ধূমপানসহ বিভিন্ন ধরনের নেশা করত।’
তিনি আরও বলেন ‘পুরো বাংলাদেশ খোলশ পাল্টাচ্ছে। এজন্য প্রথম কথা হলো- কোর্ট চত্বরের একটা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রূপ থাকা দরকার। দ্বিতীয়ত হলো- আমরা মাদক ও ধূমপানমুক্ত অফিস, মাদক ও ধূমপানমুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণা করতেছি। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে কোর্ট চত্বর থেকে তামাকজাতপণ্যের দোকানসহ সকল অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়েছে।’